• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

বায়েজিদ বোস্তামীর রহস্যে ঘেরা সেই কচ্ছপ!


ফিচার ডেস্ক জুলাই ২৫, ২০১৭, ০৪:১১ পিএম
বায়েজিদ বোস্তামীর রহস্যে ঘেরা সেই কচ্ছপ!

ঢাকা: বায়েজিদ বোস্তামী (র.) এর মাজার চট্টগ্রাম এর নাসিরাবাদের একটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত। ইরানের বিখ্যাত পার্সিয়ান সুফি বায়েজিদ বোস্তামীর নামে গড়ে উঠা এই মাজার চট্টগ্রামের ধর্মপ্রাণ মানুষের পাশাপাশি চট্টগ্রামে আসা দেশী বিদেশী পর্যটকদের জন্যও একটি অত্যন্ত আকর্ষনীয় স্থান। তাবে এর মূল আকর্ষণ হলো- মাজেরর পাদদেশে রয়েছে একটি বিশালাকার পুকুরের বিস্ময়কর কচ্ছপ বা কাছিম বা মজার মাছ। স্থানীয়রা তাদের মাজারি ও গজারি বলেই আখ্যায়িত করে।

এ কচ্ছপ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অত্যন্ত বিরল এবং বিপন্নপ্রায় প্রজাতি। বর্তমানে বায়েজিদ বোস্তামির মাজার ছাড়া তাদের বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। তাই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য খুব আকর্ষনীয় এ কচ্ছপ। 

যদিও বায়েজিদ বোস্তামীর নাম অনুসারে এই মাজার, ইরানের বিখ্যাত সুফী বায়েজিদ বোস্তামীর এই অঞ্চলে আগমনের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়না। ধারণা করা হয় সুফী সাধক ও আউলিয়াগণ চট্টগ্রামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের সময় সচরাচর পাহাড় এর উপরে কিংবা জঙ্গল ঘেরা অঞ্চলে আবাস স্থাপন করেন এবং এসব জায়গাতে মাজার কিংবা এই ধরণের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়েজিদ বোস্তামীর মাজারটাও মূলত উনাকে উৎসর্গ করে প্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিরূপ মাত্র।

যদিও এলাকার জনশ্রূতি অনুযায়ী বায়েজিদ বোস্তামীর চট্টগ্রামে আগমনের ইতিহাস শুনতে পাওয়া যায়। চট্টগ্রামে অবস্থানের পরে প্রস্থানকালে ভক্তকূল তাকে থেকে যাবার অনুরোধ করলে উনি তাদের ভালোবাসা ও ভক্তিতে মুগ্ধ হয়ে কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেঁটে কয়েক ফোঁটা রক্ত মাটিতে পড়ে যেতে দেন এবং ঐ স্থানে উনার নামে মাজার গড়ে তুলবার কথা বলে যান। এই জনশ্রুতির স্বপক্ষে অষ্টাদশ শতাব্দীর চট্টগ্রামের কিছু কবির কবিতার উল্লেখ করা হয় যেখানে শাহ সুলতান নামক একজন মনীষির নাম বর্ণিত আছে। বায়েজীদ বোস্তামীকে যেহেতু সুলতান উল আরেফীন হিসাবে আখ্যায়িত করা হয় যেই সূত্রে এই শাহ সুলতান আর সুলতান উল আরেফীন কে একই ব্যক্তি হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। 

মাজারের কচ্ছপগুলো দেখলে বিস্ময়ে হতবাক হতে হয়। এই কচ্ছপগুলোর অনেকগুলোরই বয়স প্রায় ২০০-২৫০ বছর। কচ্ছপের আয়ু অনেক বেশি, সাধারণভাবেই তারা প্রায় ১০০ বছরের ওপরে বাঁচে। ফলে কচ্ছপগেুলোর বয়সজনিত ভক্তদের দাবি প্রায় কয়েকশত বছরের পুরাতন এই মাজার।

মাজারের দেখাশোনার দ্বায়িত্বে থাকা মাজার তত্বাবধায়ক কমিটির লোকদের দ্বারাই এদের প্রতিপালন করা হয়। বর্তমানে মাজার প্রাঙ্গণ সংলগ্ন এই দীঘিতে দেড়শ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ কচ্ছপের আবাস রয়েছে বলে জানা যায়। প্রজনন মৌসুমে মাজারের মূল পাহাড়ের পেছনে এদের জন্য সংরক্ষিত স্থানে এদের ডিম পাড়ার ব্যবস্থা করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফরিদ আহসান বলেন, বায়েজিদ বোস্তামী (রহ.) মাজারের এ বিস্ময়কর কচ্ছপ চট্টগ্রামের অন্যতম ঐতিহ্য। এ প্রাণি এখন বিলুপ্তির পথে। এখনই এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

মাজারের মোতোয়ালি মো. খোরশেদ আলম জানান, এর আগে বন বিভাগের একজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহায়তায় একটি স্থানে প্রজননের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। মাঝে মধ্যে বন বিভাগের লোকজন খবর নিয়ে চলে যান। কিন্তু কোনো আর্থিক সহায়তা করেন না।

উল্লেখ্য, প্রাণিবিজ্ঞানী অ্যান্ডারসন ১৮৭৫ সালে সর্বপ্রথম ভারতের জাদুঘরে রক্ষিত দুটি নমুনা থেকে বোস্তামীর কচ্ছপের প্রজাতিটির সন্ধান পান। রক্ষিত নমুনা দুটি ছিল চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী পুকুর থেকে সংগৃহীত। ১৯১২ সালে প্রাণিবিজ্ঞানী এন এনানডেলের মতে, বোস্তামীর কচ্ছপ এক সময় ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকা থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিশাল এলাকাজুড়ে বিচরণ করত। এই পুকুরে কচ্ছপগুলো কীভাবে এল এতদিন পরে তা জানার কোনো উপায় নেই আজ।

তবে যেভাবে আসুক না কেন মাজারের এই পুকুরে শত শত বছর ধরে বাস করা কাচ্ছপগুলো বিশ্বে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রজাতি, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!