উরন্ত মন ইচ্ছে ডানায় ভর করে সহসাই উড়ে চলে অজানা দূর দূরান্তে। কিন্তু; বাস্তবতার সুতায় বাঁধা জীবনে তা কি করে সম্ভব। তবে মাঝে মাঝে বৃত্তে বন্দী জীবন খোলস ছেড়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কোথাও বের হলে, বন্ধ জীবন খুঁজে পায় নতুন ছন্দ। অনেক দিনের ইচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর, এবার ঈদ পরবর্তী ছুটিতে পুরণ হলো সে আশা। ঘুরে এলাম পাহাড় ঘেড়া নৈস্বর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব বেলাভূমি খাগড়াছড়ির সাজেক।
সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বাইপাইল থেকে শান্তি পরিবহনে খাগড়াছড়ির উদ্দেশে রওনা হলাম যেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল বন্ধবর বাসুদেব, শহিদুল্লাহ্ আর শাহ্ জালাল। ঢাকা পার হয়ে চট্টগ্রাম রোডে যেতেই গাড়ির গতি বেড়ে গেলো। জানালা দিয়ে আসা ফুরফুরে বাতাসের আয়েশ জনিত তন্দ্রাচ্ছন্নতায় কখন যে চট্টগ্রাম ছেড়ে খাগড়াছড়ি চলে এসেছি টেরই পাইনি। টের তখন পেলাম যখন গাড়ি সমেত আমরা ঊর্ধ্ব পানে উঠে গেলাম নাগরদোলার মত, তার পরেই গাড়িটা বাঁক নিল ১৮০ ডিগ্রি কোণে। পাশের লোকটা এই কি হলো বলে হঠাৎ জেগে উঠলো। বুঝলাম এসে পড়েছি পাহাড়ময় পার্বত্য অঞ্চলে। চোখ মেলে বাইরে তাকাতেই পরিপূর্ণ জোছনার আলো অস্পষ্ট হলেও পাহাড়ি প্রকৃতির রহস্যময়তায় অচেনা এক অনুভূতি খেলে গেলো মনের ভেতর।
পাহাড়ি রাস্তার চড়াই উৎরাই আর বাঁক মারিয়ে গাড়ি চলছে রাতের রহস্যকে ভেদ করে কখনো আস্তে কখনো সজোরে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখছি দূর পাহাড়ের চূড়ায় অচেনা বৃক্ষের আবছা আকৃতি। কখনো নিস্তব্ধ পাহাড়ের গা ঘেঁষে গুল্ম লতার ঘুম ভাঙ্গিয়ে, কখনো খাদে কিনার ঘেসে সা সা করে ছুটে চলছি আমরা। দেখতে দেখতে ভোরের আগমনী বার্তায় ক্রমেক্রমে ফর্সা হচ্ছে পরিবেশ আর প্রকৃতি স্পষ্ট হয়ে ধরা দিচ্ছে তার আসল রূপে। নামাজের জন্য যাত্রা বিরতি, নামলাম গাড়ি থেকে। আলো আঁধারীর মিশ্র মিশেল কৃষ্ণময়তায় প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করলাম গভীর নালার এক ছোট্ট ব্রিজে দাঁড়িয়ে। চাঁদটা তখনো ডুবে যায়নি কিন্তু তার ক্ষীণ আলো ক্রমেই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ছে দিনের তীব্র আলোর কাছে।
পাশেই স্থানীয় বাজার, এই কাক ভোরে মাথায় ঝুরি, কাঁধে বাইক বিভিন্ন শাক-সবজি ফল মুল নিয়ে পুরুষ মহিলা সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে বিকিকিনির উদ্দেশ্যে। গাড়ি যখন ছাড়লো সূর্য তখন উঁকি দিচ্ছিলো পুব আকাশের গোড়ায়। সমস্ত আকাশ জুড়ে তখন সূর্য দেবের আগমনী বার্তা, পাহাড়ে সাদা মেঘের আস্তরণ, ঘন কুয়াশার মত মেঘ ভেদ করে চলতে চলতে খাগড়াছড়ি পৌঁছালাম আমরা। বন্ধুরা হোটেল প্যারাডাইস হিলসে্ অবস্থান করছিল উঠলাম সেখানে গিয়ে।
সকাল সারে দশটা নাগাদ আমরা হোটেল ছেড়ে খাগড়াছড়ির আসে পাশের দর্শনিয় স্থান আলুটিলার গুহা এবং রিসং ঝর্ন্না দেখার উদ্দেশ্যে বেড় হলাম। গাড়ি আগে থেকেই ঠিক করা ছিলো, স্থানীয় ভাষায় এ গাড়িকে বলে পিকাপ যার চার পাশ খোলা, ১০ থেকে ১২ জন লোক অনায়াসে ভ্রমণ করার মত ব্যবস্থা। আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে নামলাম, ধারণা ছিল না আমরা এত উপরে, নিচে যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। কোথাও খাড়া ঢাল আবার কোথাও পাহাড়ের চূড়া মাঝে মাঝে দু’ একটা স্থাপনা যে দিকে তাকালে চোখ আপনি ফিরে আসতে চায়। অনেকগুলো সিঁড়ির ধাপ নেমে গুহা মুখে পৌছলাম, গুহায় ডুকতে গা ছমছমে নিকষ কালো অন্ধকারের অচেনা পরিবেশ সবাই মোবাইলের আলো জ্বালালাম। পাথুরে পিচ্ছিল পথ যতই সামনে এগুচ্ছি ততই ঘনো ঘোলা হচ্ছে অন্ধকার। নিচ দিয়ে পানি চলাচল করছে ফলে অক্সিজেনের অভাব না হলেও, না শীত না উষ্ণতায় আজব আর্দ্রতার মাঝে কেমন যেন অচেনা লাগছিল সবকিছু। প্রথমে বুঝতে পারিনি এত বড় গুহা যতই এগুচ্ছি ততই যেন বেড়ে যাচ্ছে দূরন্ত, এভাবে রহস্যময় রোমাঞ্চ আর অদ্ভুত আনন্দের সংমিশ্রণে যখন গুহা পার হলাম তখন একটা বিজয়ের সুখ অনুভব হলো মনে।
এরপর রিসাং ঝর্ন্নাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পর্যটন কেন্দ্রে যাবার অনেক আগে গাড়ি থেমে গেল। এখানে এতো ঢালু পথ যে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। মটরসাইকেলে নিচে নামতে দম বন্ধকর অবস্থা, রাস্তা এতোটাই ঢালু যে, ব্রেক ফেল হতে পারে যেকোন সময়। তবে চালকের কারিশমায় তা থেকে রক্ষা। মটরসাইকেল থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে আরো অনেক নিচে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত ঝর্ন্নার দেখা মিললো। চার পাশে পাহাড় আমরা খাদের নিচে কয়েকটা ছবি নিয়ে নেমে পড়লাম ঝর্ন্নার জলে গোছল করতে। অনেক উপর থেকে আছড়ে পড়ছে পানি তাই তার তোপে তিষ্টানো দায় তবু সাধ মেটালাম ঝর্ন্নার জলে গোসল করার।
আমরা এগোতে থাকলাম অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে, কাংক্ষিত সেই সাজেক ভ্যালির উদ্দেশ্যে। খাগড়াছড়ি থেকে প্রায় শত কি.মি দূরুত্ব সাজেকের পথ যেন পথ নয় পাহারী প্রকৃতি, বন বনানী, গুল্মলতার মহা সম্মিলন। যার পরতে পরতে লুকিয়ে আছে গোপন সৌন্দর্য, পাহারের খাঁজে ভাঁজে ফুটে থাকা অচেনা বুনো ফুলের নিঃস্বার্থ জীবন, পশুপাখির অবাদ বিচরণের আশ্রয়োন, পাহাড় কোলে বসবাস করা মানুষের বৈচিত্র্যে ভরা ঘর সংসার। গাড়িসহ আমরা কখনো খাঁড়া ঢাল বেয়ে উপরে কখনো সমতলে আবার কখনো নেমে যাচ্ছি নিচে। তবে যতটা উপরে উঠছি নামছি তার তুলনায় অনেক কম এভাবে ক্রমে ক্রমে যতই উপরে উঠে যাচ্ছি ততই পাহাড়ি পরিবেশের রহস্য উন্মোচিত হচ্চে আমাদের কাছে। সব রকম দূষণ মুক্ত এখান কর বৃক্ষ লতা তৃন অনেক বেশি সজিব সতেজ এবং প্রাণবন্ত। মেঘমুক্ত আকাশের তেজ দীপ্ত আলোয় আয়নার মত চক চক করছে যৌবনে ভরা প্রকৃতি। রাস্তার দু’পাশে ছন্ন ছাড়া আদিবাসীদের বাড়ি ঘরগুলো বাঁশ আর কাঁঠ দিয়ে তৈরি হলেও বেশ সাজানো গোছানো। নিজ হাতে গড়া সুচারু শিল্প তাদের দারিদ্র্যেতাকে ছাপিয়ে ফুটিয়ে তুলছে রুচিসম্মত আবাসন ব্যবস্থার। প্রতিটি বাড়ির সামনে ফুটন্ত ফুলের বাগান জানান দিচ্ছে সুন্দরের প্রতি তাদের সহজাত সচেতন বোধ। এতো কিছুর পরেও দারিদ্র্যতা যেন তাদের নিত্যসঙ্গী তা বুঝা যাচ্ছে তাদের কর্ম ক্লান্ত জীর্ন শরীর আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে শিশুদের হাত নেড়ে পর্যটকদের কাছ থেকে কিছু আব্দার আপত্তির মাধ্যমে।
স্থানীয় বাজারগুলোতে পুরুষদের তুলনায় নারীর আধিক্য মাতৃতান্ত্রিক পরিবারের পরিচয় বহন করে। রাস্তার দুই পাসের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলছি হঠাৎ অনেক উপরে পাহাড়ের চূড়ায় চোখে পড়ল রং বেরংয়ের নানা স্থাপনা। অনুমান ভুল হলো না ওটাই সাজেক ভ্যালি কিন্তু কীভাবে উঠব এতো উপরে। সামনের ঢাল এতোটাই খাড়া মনে হচ্ছিল কোনো ভাবেই সম্ভব নয় এই গাড়ি ওপরে ওঠানো, মনে কিছুটা ভয় সঞ্চার হলেও কত গাড়িতো উঠছে এমন ভাবনা ভেবে ভয়কে জয় করলাম। পরপর গিয়ার পাল্টে দক্ষ চালক সুমন ভাই খুব সাবধানে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আস্তে আস্তে উঠতে থাকল উপরের চূড়ায়।
অবশেষে সাজেক পাহাড়ের চুড়ান্ত চূড়ায় আমরা! দুই পাশে নেমে গেছে দৃষ্টি সীমার অলক্ষ্যে ধূ ধূ দূরুত্বে, কালো মেঘের মত আকাশের গোড়ায় দূর দূরান্তে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়া, সাদা মেঘেরা উড়ে চলছে পাহাড়ের গা ঘেঁষে, কোথাও স্থির হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে আত্নীয়তায় মেতেছে পাহাড় প্রকৃতির সাথে। সত্যি সৃষ্টি তত্ত্বের অপূব মহিমা, প্রকৃতি আপন মনে সেজেছে যুগ যুগান্তরের সাধনে নিজস্ব ভঙ্গিমায়, যার কোনায় কোনায় ভিন্ন সাজের নানা বৈচিত্র্যতা।
গন্তব্যের অভিমুখে রোদ ঝলমলে পরিবেশেও কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি যেন আমাদেরকে অভিবাদন জানালো। দুই পাশে সারি সারি হোটেল দোকান কটেজের আলাদা আলাদা আদল আর বাহারি রং এর বৈচিত্র ব্যবহার সাজেকের পরিবেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। খুব সহজে মিলে গেল হোটেল, সময় নষ্ট না করে বের হলাম একলা একা পাহাড় দর্শনে। সূর্য তখন পশ্চিমাকাশে হেলে পড়লেও সন্ধ্যা নামছে না সহসাই। সাজেকের মুল অংশ সাদা মসজিদ হেলিপোর্ট ছাড়িয়ে হাটতে থাকলাম পাহাড় পৃষ্ঠের রাস্তা বরাবর। সন্ধ্যার আগেই ফিরতে হবে তা মাথায় রেখে এবার ফেরার পালা। গাছ পাতার আড়ালে কি যেন অচেনা উচ্চস্বরে বীন বাজাচ্ছে তা বুঝতে না পেরে একজন কে জিজ্ঞেস করে জানলাম বসন্তে ডাকা ঝিঝি পোকার মত এটাও এক ধরনের পোকা। অজস্র চেনা অচেনা গাছ, গুল্ম, তৃন লতা সম্মিলিত বনের ভেতর নানান সুর তালে পাখ পাখালীর কলতান। সাদা কালো মেঘের আড়ালে শেষ বেলার সূর্য লুকোচুরি খেলছে পাহাড় প্রকৃতির সাথে। গোধূলি আগমনের আয়োজন পশ্চিমাকাশে বহু রুপি আবিরে বর্নীল মাতামাতি। রুপে লাবণ্যে অপূর্ব এ প্রকৃতির মাঝে ডুবে যাওয়া আমি সত্যি আশ্চর্যনীত অভিভূত আনন্দিত। কয়েকটা ছবি তুললাম কিন্তু চোখ দিয়ে দেখে মনের ফ্রেমে গেঁথে নেওয়া স্বক্ষমতাই মনে হয় শ্বাশত চিরন্তনী।
সন্ধ্যার পরে হোটেলে ফিরে দেখি বন্ধুরাও বেড়িয়েছে। আবার বের হয়ে হোটেলের কাছেই একটা বেঞ্চে বসলাম, সামনে খাড়া ঢাল, অন্ধকারে আবছা অস্পষ্টতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে পেয়ে বসল কবিতায়। মোবাইলের নোট প্যাডে লিখলাম কবিতা, তার অংশ বিশেষ-
“দুর হতে যে তুমি অচেনা আর আবছা ধোঁয়া ধোঁয়া
কাছে আসতে মেঘ বালিকা পেলাম তোমার ছোঁয়া।
তুমি ছুলে আমারে, আমি যেই ছুতে যাব তোমারে
অমনি তুমি বৃষ্টি হয়ে গোলে পড়লে ঝরে।”
প্রকৃতির কি আজব খেয়াল, কাকতালীয় ভাবে ঠিক তখনি ঝমঝমিয়ে নেমে পড়ল বৃষ্টি, কবিতা অসম্পূর্ণ রেখে দৌড়ে ডুকে গেলাম হোটেলে। কিছু খানা ও পান পর্বের পর এবার সবাই মিলে বের হলাম হাটঁতে। এ কি আজব ব্যাপার বৃষ্টিটা থেমে গেছে, তবে ধূসর মেঘের আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত গোটা পরিবেশ এতো দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে তা আশ্চর্যের বিযয় বটে। শীতকালীন ঘন কুয়াশার মত মেঘের মাঝে আমরা হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠলাম। যার সাথে দেখা হয়নি কোন কালে অথচ সে যেন অতি আপন, এমন মায়াবি মাদকতার মহিমায় মন মেতে উঠল আজব উৎফুল্লতায়। হাটঁতে হাঁটতে হেলি পোর্টে চলে গেলাম যেখানে নানা বর্নিল বৈচিত্র্যতায় খাবারের পসরা সাজিয়ে বসে আছে দোকানীরা। সমুদ্রের বড় বড় বেলে মাছ ভাজার হুকুম জারী করে গল্পে মেতে উঠলাম দোকারদারের সাথে। ওরা বেশির ভাগ আদিবাসি হলেও আমাদের ভাষা বুঝে এবং বলতে পারে। নানান কথায় অল্পক্ষণেই আমরা আপন হয়ে গেলাম একে অপরের। জানলাম ওদের পরিবার পরিবেশের কথা, শুনলাম ওদের পাওয়া না পাওয়ার গল্প, বুঝলাম ওদের অভাব অভিযোগ। মোট কথায় বেশ মাতিয়ে তুললাম মেঘলা ঘোলা রাতে সাজেকের পর্যটনী পরিবেশ।
ফেড়ার পথে একটা খালি চা দোকানে ডুকলাম চা খেতে, বাসুদেব অনুরোধ করল গান গাইতে, শহিদুল ভাই হাতের কাছে যা পায় তাই দিয়ে তাল তুলতে বেশ উস্তাদ। শুরু হলো গান, বেশ দর্শক জমে গেলো, দোকানীও যোগ দিল আমাদের গানের তালে।
বিশেষ করে কুমিল্লা থেকে আসা একদল তরুণ তরুণী হাত তালি দিয়ে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেলো আমাদের গানের তালে। এক গান শেষ হতেই আরেক গানের অনুরোধ, অনেক দিন পর গলা ছেড়ে বেশ কিছু তালে মাতানো গান গাইতে পেরে ভালো লাগলো।
এভাবে গান কবিতা আবৃত্তি আড্ডায় মেতে রইলাম চাঁদনী রাতে জোচ্ছনার জোয়ারে ভাসা রাতের দুটো পর্যন্ত।
খুব ইচ্ছে ছিল ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে সূর্যোদয় দেখার। কিন্তু; টানা দুই রাত জাগরণ পাহাড়ে উঠার পরিশ্রম আর দূর যাত্রার ক্লান্তি জনিত জড়তা কাটিয়ে যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন সূর্য উঠে গেছে। তবে তা ঢেকে আছে কালো মেঘের আস্তরণে। হোটেলের বেলকুনিতে চেয়ার নিয়ে বসলাম সামনের সারি সারি সাদা মেঘ, দূর পাহাড়ের চূড়া, সদ্য স্নান করা রমনির মত নির্মল প্রকৃতি আার পাখির কূজনে অপলক তন্দ্রাচ্ছন্নতায় বেলা বেড়ে গেল। নাস্তা সেরে গাড়ি নিয়ে বেড় হলাম, একেক পাহাড়ের একেক সৌন্দর্য প্রতিটা পাহাড়ের খাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে আলাদা রুপ রস রহস্য। কতক পাহাড়ের গায়ে কুমারি নারীর মত ছোয়া লাগেনি এখনো কারো, যার গায়ে ফোটা বুনো ফুল সঞ্চিত মধুর ভারে আপনি পড়ে ঝড়ে। কোনো পাহাড়ের বুকে জমে আছে শত শতাব্দীর ক্ষোভ পুঞ্জিভূত লাভার মত, কিংবা কারো দুঃখ বিশাদের করুণ অশ্রু ঝর্ন্নার জল হয়ে ঝরে পড়ছে আবিরাম। শত শত পাহাড়ের নানা অজানা উপাখ্যান তার কটাই বা পরে চোখে। দেখতে দেখতে ফেড়ার সময় হয়ে এলো, কিন্তু আশ মিটলো না পাহাড় কন্যার সাথে স্বল্প অভিসারে। এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে ছুটে চলার নেশা মেটানো গেলো না প্রসাশনিক সীমাবদ্ধতায়। মন যেতে না চাইলেও এক বুক অতৃপ্তি নিয়ে ফিড়ে যেতে হবে গতানুগতিক স্রোতধারায় ।
সবশেষে বিদায়ের পালা, এতো অল্প পরিচয় তবু এই অনিন্দ্য সুন্দরের প্রতিমূর্তি সাজেকের প্রেমে মজে গিয়েছিলাম মনের অজান্তেই। গাড়ি যখন পাহাড়ের ঢাল নামছিল কেমন যেন অচেনা বিচ্ছেদ বেদনা অনুভূতিতে আঘাত করছিল। যেন কোন প্রিয় তার প্রিয়াকে ছেড়ে আজীবনের জন্য চলে যাচ্ছে নিরউদ্দেশ যাত্রায়। গাড়ি চলছে দূর থেকে দেখছি পাহাড় যেন হাত নেড়ে নিষেধ করছে তাকে ছেড়ে না যেতে। কেউ যেন না বুঝে মনে মনে বললাম -
“চোখের আড়াল হলেও তুমি রইলে হৃদয় পটে
দূর দূরান্তে থাকি যতই যেন বিচ্ছেদ না ঘটে
চিরন্তনী চোখের মনি তোমায় রাখলাম মনে ভরে
জন্ম জন্মান্তর পুলকিত হব তোমারে অনুভব করে।
ভুলব না তোমায়, তুমিও ভুলো না আমায়
ভালো থেকো, বিদায় সাজেক বিদায়।”
সোনালীনিউজ/এম







































