ঢাকা : মানবদেহের অন্যান্য রোগের মধ্যে এটিও অন্যতম। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। আবার বেশিরভাগই সাধারণ ব্যথা মনে করে এই রোগকে অবহেলা করেন। তবে এই ব্যথা মোটেও অবহেলার নয়। নিজেকে এর জন্য অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।
মূলত হিল স্পুর বা স্পার, যাকে পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি পাওয়াও বলা হয়। এই বিষয়ে একজন স্বনামধন্য ভারতীয় চিকিৎসক ড. নাধির কে এম (এআইআইএমএস) বিস্তারিত জানিয়েছেন।
চলুন জেনে নেয়া যাক পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধির কী, কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে-
পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি (হিল স্পুর বা স্পার) কী?
পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি (হিল স্পুর বা স্পার) হলো পায়ের পাতার গোড়ালির হাড়ে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, যার ফলস্বরূপ হাঁটলে, দাঁড়ালে বা দৌড়ালে ব্যথা হয়। এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণ হলো, আপনার গোড়ালিকে ঘর্ষণ ও চাপ থেকে রক্ষা করে যে পেশী, টেন্ডন অথবা লিগামেন্টগুলো, সেগুলোর ক্ষতি বা আঘাত পাওয়ার দরুন ক্যালসিয়ামের জমা হওয়া।
এটা সাধারণত শিশুদের চাইতে মাঝবয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা যায়। পুরুষ ও নারী উভয়কেই সমানভাবে বারবার প্রভাবিত করে। একটি ভারতীয় সমীক্ষা অনুসারে, যাদের গোড়ালিতে ব্যথা রয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৯ শতাংশ ব্যক্তির পায়ে গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি (হিল স্পুর) দেখা যায়।
এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কী কী?
১. প্রাথমিক উপসর্গ হলো, গোড়ালিতে ব্যথা হয়। কিন্তু সচরাচর হিল স্পার ব্যথার জন্য দায়ী হয় না। বেড়ে ওঠা হাড় যখন আশেপাশের টিস্যুর উপর চাপ সৃষ্টি করে, তখন আপনি ব্যথা অনুভব করেন। তীব্র ব্যথা অনুভূত হয় যখন ভোরবেলায় বিছানা ছাড়ার সময় প্রথমবার পা মাটিতে রাখা হয়, যেটা ধীরে ধীরে কমে যায়।
২. আপনার গোড়ালিতে ফোলাভাব এবং সংবেদনশীলতা হতে পারে।
৩. প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের সঙ্গে গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি উপসর্গগুলোর অনেক মিল রয়েছে। প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস হলো গোড়ালি থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত যে সংযোগকারী টিস্যুগুলো বিস্তৃত থাকে, তাতে প্রদাহ অথবা আঘাত।
এর প্রধান কারণগুলো কী কী?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসই পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি (হিল স্পুর)-র প্রধান কারণ। যদি কোনো কারণে প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া আঘাত পায়, পায়ের পাতাকে ধকল থেকে রক্ষা করা কানেক্টিভ টিস্যুগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় নেয় সারতে, আর ছোট হাড় গজানো শুরু হয়ে যায়।
পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি (হিল স্পুর)-র অন্যান্য কারণ হলো-
১. পায়ের পাতার পেশী ও লিগামেন্টে অত্যাধিক ধকল।
২. অতিমাত্রায় প্রসারণ।
৩. দৌড় ও ঝাঁপের মতো অ্যাথলিটদের শারীরিক সক্রিয়তা।
৪. প্রলম্বিত বা দীর্ঘক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা।
৫. যেসব ব্যক্তির গোড়ালি চ্যাপ্টা অথবা ধনুকাকৃতি।
৬. বেসামালভাবে হাঁটা।
৭. ভুল মাপের জুতো পরা।
৮. বেশি ওজন।
৯. গর্ভাবস্থা
১০. আর্থ্রাইটিস এবং ডায়াবেটিসের মতো অসুখ।
এটি কীভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যদি আপনার পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি (হিল স্পুর বা স্পার) এর উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে চিকিৎসক প্রথমে আপনার পায়ের পাতা পরীক্ষা করবেন এবং কারণ নির্ণয় করতে আপনার সম্পূর্ণ মেডিক্যাল ইতিহাস জানতে চাইবেন। তারপর এক্স-রে করানোর পরামর্শ দেবেন। এক্ষেত্রে এমআরআই এবং আল্ট্রাসাউন্ডের মতো টেস্ট খুব কমই করাতে বলা হয়। ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা ব্যথা উপশমের জন্য প্রদাহ-রোধী ওষুধ নিতে বলা হয়।
পায়ের গোড়ালির হাড় বৃদ্ধি (হিল স্পুর) এর কারণে হওয়া ব্যথা কমানোর জন্য নিজে যত্ন নেয়ার অন্যান্য বিকল্পগুলো হলো-
১. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়া।
২. গোড়ালিতে ব্যথার জায়গায় বরফ সেঁক দেয়া।
৩. সঠিক মাপের জুতা পরা।
৪. শক্ত জায়গায় খালি পায়ে হাঁটা এড়ানো।
৫. পেশী প্রসারণ ব্যায়াম করা।
৬. ওজন বেশি হলে ওজন কমানো।
৭. অস্ত্রোপচার-বিহীন চিকিৎসায় যদি ব্যথা উপশম না হয়, তাহলে সার্জারি করানো একমাত্র বিকল্প।
সোনালীনিউজ/এমএএইচ







































