ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির পর পৃথিবী যেন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই কিছু সংক্রমক রোগে আক্রান্তের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের। শৈশবকালীন প্রতিরোধক্ষমতার হঠাৎ কমে যাওয়ায় নতুন করে ফিরে আসছে কিছু রোগ। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হাম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ৬৭ মিলিয়ন শিশু শৈশবকালীন নিয়মিত টিকাদান থেকে বাদ পড়ে গেছে। যার ফলে বিশ্বের বহু দেশে হাম ও হুপিং কাশির মতো প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাওয়া রোগগুলো আবার ফিরে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি গত তিন দশকে শিশুর টিকাদানে সবচেয়ে বড় ধস। বিশেষ করে হাম, যা বিশ্বের সবচেয়ে সংক্রামক রোগ হিসেবে পরিচিত। হামে আক্রান্ত একজন ব্যক্তি অনায়াসেই ১২ থেকে ১৮ জনকে সংক্রমিত করতে পারে। ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে হাম আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩ লাখ, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।
কাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫ বছরের নিচে শিশু এবং যেসব দেশের টিকাদান কভারেজ ৯৫ শতাংশের নিচে নেমে গেছে, তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে টিকা দেয়ার হার ৯৬.৯ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৯৩.২ শতাংশ যা হামের মতো রোগ ঠেকাতে যথেষ্ট নয়।
শুধু হাম নয়, হুপিং কাশিও ফিরেছে: শিশুদের আরেক ভয়ংকর শত্রু, হুপিং কাশি ও নীরবে ছড়িয়ে পড়ছে। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় হুপিং কাশির সংক্রমণ বেড়েছে ১৫০০ শতাংশ । ২০২৫ সালে এরই মধ্যে ৭১০০-এর বেশি কেস রিপোর্ট হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থা ৬ মাসের নিচের শিশুদের জন্য, যারা এখনও সম্পূর্ণ টিকা পায়নি। তাদের মধ্যে অনেকেই শ্বাসকষ্ট, বুকে কফ জমা, এমনকি মৃত্যুর মুখে পড়ে।
এই রোগগুলোর বিপদ কতটা?
হাম
শুধু চামড়ায় ফুসকুড়ি বা জ্বর নয়, এটি নিউমোনিয়া, ব্রেইনে সংক্রমণ, অন্ধত্ব এবং ইমিউন সিস্টেম ধ্বংস পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
প্রতি ৫ জন আক্রান্ত শিশুর ১ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
হুপিং কাশি
প্রবল কাশির ফলে শিশুদের বমি, পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়া, এমনকি শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত হতে পারে।
এক বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন আর দেরি করার সুযোগ নেই। একন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হলে সমস্যা বাড়বে ভয়াবহভাবে। যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে-
বিশ্বব্যাপী টিকাদান কর্মসূচি জোরদার করা জরুরি।
টিকাদানে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, গুজব ও মিথ্যাচার ঠেকাতে তথ্যপ্রযুক্তি ও জনসচেতনতা ব্যবহার করতে হবে।
ধনী–দরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেকটি শিশুকে টিকার আওতায় আনতে হবে।
গর্ভবতী মা এবং শিশুদের অভিভাবকদের জন্য বুস্টার ডোজ নিশ্চিত করতে হবে।
টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে হবে। টিকাদান নিয়ে উদাসীনতা কিংবা ভয় আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। হাম, হুপিং কাশি, পোলিও, যক্ষ্মা—এই রোগগুলো ইতিহাসের পাতায় থাকার কথা ছিল তবে টিকা না নেয়ায় ফের এই রোগে আক্রান্তের সংক্যা বাড়ছে তাই দরকার সচেতনতা। শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে টিকাদান কর্মসূচিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
ইউআর







































