• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

কথার জাদুকর নেই এগারো বছর


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৯, ২০২৩, ১২:০৪ পিএম
কথার জাদুকর নেই এগারো বছর

ঢাকা : তরুণ থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সের পাঠকের হৃদয় জয় করতে পারা লেখকের কথা আসলেই যার নামটি সবার আগে আসে তিনি হুমায়ূন আহমেদ। উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, চলচ্চিত্র ও গানসহ সৃজনশীলতার প্রায় প্রতিটি শাখায় তার সৃষ্টি স্মরণীয় হয়ে রয়েছে বাঙালির হৃদয়ে। কথার জাদুতে মুগ্ধ করে ধরে রাখা তার মতো করে আর কেউ পারেনি। এজন্যই হয়তো তাকে কথার জাদুকর বলা হয়।

প্রখ্যাত এ ঔপন্যাসিকের আজ (১৯ জুলাই) ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১২ সালের আজকের এই দিনে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাকে হারানোর শোক এখনো বাংলাভাষী পাঠকদের মনে। তিনি বেঁচে আছেন অগণিত পাঠকের মনে।

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তার গড়া স্বপ্নের স্কুল শহিদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠে শোক র‌্যালি, দোয়া মাহফিল ও কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাব হুমায়ূন স্মরণে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও হুমায়ূনের লেখা গান পরিবেশন করবে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হবে।

১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন হুমায়ূন আহমেদ। তার ডাকনাম কাজল। বাবা ফয়জুর রহমান আহমেদ ও মা আয়েশা ফয়েজের প্রথম সন্তান তিনি। বাবা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা আর মা গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। কথাসাহিত্যিক জাফর ইকবাল তার ছোট ভাই। সবার ছোট ভাই আহসান হাবীব নামকরা কার্টুনিস্ট ও রম্যলেখক।

উপন্যাসে প্রতিভার বিস্তার ঘটলেও তার শুরুটা ছিল কবিতা দিয়ে। নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি, চলচ্চিত্র পরিচালনা থেকে শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি রেখে গেছেন স্ব প্রতিভার স্বাক্ষর।

হুমায়ূন আহমেদ বাংলা সাহিত্যে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির জনকও বটে। ১৯৭২ সালে প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ প্রকাশের পরপরই তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এরপর একে একে শঙ্খনীল কারাগার, অয়োময়, বহুব্রীহি, দূরে কোথাও, ফেরা, কেউ কোথাও নেই, এইসব দিনরাত্রির মতো উপন্যাস লিখে তিনি জয় করে নেন সব শ্রেণির, সব বয়সের পাঠক হৃদয়। তার রেখে যাওয়া অমর সৃষ্টির প্রভাব বয়ে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

উপন্যাসে ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্রগুলো বিশেষ করে ‘হিমু’, ‘মিসির আলী’, ‘শুভ্র’ তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে অনুকরণীয়। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি একক ও অনন্য।

তার পরিচালিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘চন্দ্রকথা’ ও ‘নয় নম্বর বিপদসংকেত’, ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ প্রভৃতি।

বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হুমায়ূন আহমেদের শরীরে মারণব্যাধি ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যান। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২০১২ সালের ১৬ জুলাই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ১৯ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চারদিন পর ২৩ জুলাই তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর ২৪ জুলাই তাকে দাফন করা হয় তার গড়ে তোলা গাজীপুরের নুহাশপল্লীর লিচুতলায়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!