• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আবেদন নাকচ

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন আর বাড়ছে না


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৪, ২০২১, ০২:৩০ পিএম
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন আর বাড়ছে না

ঢাকা : জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার বিবেচনায় সরকারি চাকুরীজীবিদের বেতন বাড়ানোর দাবি উঠলেও নতুন পে-স্কেল (বেতন-কাঠামো) আপাতত হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারের কোনো চিন্তাভাবনা নেই। করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে আর্থিক সংকটের কারণে এ-সংক্রান্ত আবেদন নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়।

সচিবালয়ভিত্তিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন’ গত জুনের শেষে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানোর আবেদন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে একটি চিঠি দিয়েছিল।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে লেখা ওই চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। এ বিবেচনায় সরকারি চাকুরেদের বেতন-ভাতা বাড়ানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা চিঠিটি গ্রহণ করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠির একটি কপি সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপসচিব সাজ্জাদুল হাসান বলেন, ‘জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় বেতন-ভাতা বাড়ানোর জন্য তারা (বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন) আবেদন করেছিল। আমরা সেটি অর্থ বিভাগে পাঠিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ আবেদন করলে আমরা তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিই। এটিও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠি পাওয়ার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে গত সপ্তাহে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নতুন পে-স্কেলের প্রসঙ্গটি উপস্থাপন করা হলে তা নাকচ হয়ে যায়।

বৈঠকে অংশ নেয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে আমরা বিষয়টি আমলে নিইনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর আপাতত হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং দেশের অর্থনীতি ভালো হলে ২০২২ সালে নতুন বেতন-কাঠমো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা যেতে পারে।’

বর্তমানে সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকসহ জনপ্রশাসনে মোট জনবল প্রায় ২২ লাখ, যারা নিয়মিত সরকারি কোষাগার থেকে বেতন পান।

বিদায়ী অর্থবছরে এদের পেছনে বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে পেনশন বাবদ খরচ হয় অতিরিক্ত ২০ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতায় বরাদ্দ দেয়া হয় মোট ৭০ হাজার ৭০১ কোটি টাকা এবং পেনশন বাবদ ২৩ হাজার কোটি টাকা।

অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন ইতোমধ্যে যথেষ্ট বাড়ানো হয়েছে। এটা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু না।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফ-এর সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন করে বেতন বাড়ানোর দাবি অযৌক্তিক। করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় ব্যয় সংকোচনের বিষয়ে সরকারের নীতি আরও কঠোর হওয়া উচিত।

এ ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় আরও কাটছাঁট করে সাশ্রয় করা টাকা স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষার পেছনে ব্যয় করার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ।

সাধারণত প্রতি পাঁচ বছর পরপর সরকারি চাকরিজীবীদের নতুন পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। সে হিসাবে ২০২০ সালে আরেকটি পে-স্কেল হওয়ার কথা। এখন চলছে ২০২১ সাল।

এ অবস্থায় সচিবালয়ভিত্তিক সরকারি কর্মচারীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন নতুন পে-স্কেল গঠনের দাবি তোলে।

 সরকারি চাকরিজীবীদের ৭৫ শতাংশই কর্মচারী।

সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার টাকা মূল ধরে ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা, যাতে বেতন বেড়েছে গ্রেড ভেদে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ।

২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করে সরকার।

২০১৬ সালের জুলাই থেকে এই বেতন কাঠামো অনুযায়ী মূল বেতনের সঙ্গে সব ধরনের ভাতা কার্যকর হয়। তবে মূল্যস্ফীতির কারণে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট আর বাস্তবায়িত হয়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!