• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

দুঃসময় কাটছে ব্যবসায়ীদের


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৬, ২০২১, ১২:৩৫ পিএম
দুঃসময় কাটছে ব্যবসায়ীদের

ঢাকা : করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দুবছর ধরে চাহিদা কমে যাওয়ায় আগের বছরের মজুত রয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি অর্থ সঙ্কটে চামড়া সংগ্রহেও ছিল ভাটা।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতোটা বিপর্যয় আর কখনো দেখতে হয়নি চামড়া ব্যবসায়ীদের। তবে এবার দুঃসময় কাটবে আশা সংশ্লিষ্টদের।

চামড়া শিল্পের কাঁচামালের মূল যোগান আসে কোরবানির ঈদে। চাহিদার ৭০ ভাগই সংগ্রহ করা হয় এ সময়ে। যার ওপরে ভর করেই সারা বছর সচল থাকে এ শিল্প। কিন্তু গত দুবছর কোরবানির ঈদে নামমাত্র মূল্যও না পাওয়ায় দেশজুড়ে চামড়া ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা ছিল ব্যাপক।

চাহিদা কম থাকায় গত বছর এত কম দামেও অনেক এলাকায় কোরবানির পশুর চামড়ার ক্রেতা মেলেনি। এমনকি নামমাত্র মূল্যেও কেউ নিতে আগ্রহ না দেখানোয় চামড়া ফেলে দেওয়া, মাটিচাপা দেওয়ার ঘটনাও দেখা যায়।  মহামারি ও এর প্রভাবে প্রক্রিয়াজাত চামড়া রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রভাবও গত বছর পড়ে কাঁচা চামড়ার বাজারে।

এমন প্রেক্ষাপটে এবছর আগে ভাগেই বিশেষ বিবেচনায় এক কোটি বর্গফুট ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দিয়ে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে এবার যাতে চামড়া সংগ্রহের ক্ষেত্রে গতবারের মতো নাজুক পরিস্থিতির মোকাবিলায় পড়তে না হয় সেজন্য কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

কোরবানির পশুর চামড়ার মাঠ পর্যায় থেকে ট্যানারি পর্যন্ত পৌঁছানোর কার্যক্রম তদারকি করতে চারটি পৃথক কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। ঈদুল আজহার দিন থেকে পরবর্তী পাঁচদিন এসব কমিটি কাঁচা চামড়া কেনাবেচা, সংরক্ষণ, পরিবহন ও মজুত নিয়ে কাজ করবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তাছাড়া এবার ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের বকেয়া কমে এসেছে। পুরনো মজুত কমে আসায় চাহিদাও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। মজুত আছে পর্যাপ্ত লবণ। পাশাপাশি ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির পথ সুগম হওয়ায় এবার ঈদে চামড়া সংগ্রহে ‘দুঃসময়’ কাটবে বলে আশা করছেন এ খাতের অনেকেই।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ঊর্ধ্বগতিতে কাঁচা চামড়ার চাহিদা তৈরির পাশাপাশি গত বছরের বিরাজমান কিছু সমস্যার সমাধান হওয়ায় এবার মাঠ পর্যায়ে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে শৃঙ্খলা ফিরে পরিস্থিতি পাল্টাবে বলে মনে করছেন তারা।

এছাড়া আগামী এক বছরের মধ্যে এক কোটি ওয়েট ব্লু চামড়া রপ্তানির পথ সুগম করেছে সরকার, যা চামড়া সংগ্রহে বাড়তি উৎসাহ তৈরি করবে বলে তাদের ধারণা।

জানতে চাইলে বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান গণমাধ্যমকে বলেন, গত কোরবানির সময় ট্যানারি মালিকদের যেসব চামড়া দেওয়া হয়েছিল, সেই টাকা ইতোমধ্যে তারা পরিশোধ করেছেন।  কিন্তু এর আগের যেসব বকেয়া ছিল তার কিছু কিছু এখনো বকেয়াই থেকে গেছে। সার্বিকভাবে বলতে গেলে এবারের পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে ভালো হওয়ার কথা।

সম্প্রতি লবণের দাম কিছুটা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লবণের ৬৭০ টাকার বস্তা এখন ৭০০ টাকায় উঠেছে। তবে এরচেয়ে বেশি দাম বাড়ালে তা ব্যবসার জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। তারাও ব্যবসায়ী আমরা ব্যবসায়ী। কেউ কারো ক্ষতি করা উচিত হবে না।

কোরবানি চামড়া সংগ্রহের পর তা প্রক্রিয়াজাত করার অংশ হিসেবে সংরক্ষণের জন্য প্রচুর লবণের প্রয়োজন হয়। এ কারণে কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণের সঙ্গে লবণের বাজার দর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য সাধারণত ৮২ হাজার টন লবণের প্রয়োজন হয়।

এবারের বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল কবির বলেন, কোনো ক্রাইসিসে পড়ছি না। কোরবানিতে এক লাখ টন থেকে দেড় লাখ টন লবণের প্রয়োজন হয়। আমাদের কাছে এর কয়েকগুণ বেশি লবণ মজুত আছে।

সম্প্রতি কৃষক পর্যায়ে লবণের দাম কেজিতে এক টাকা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন মিল গেটে চামড়ায় প্রয়োগের উপযোগী মোটা লবণের দর প্রতিকেজি ৮ টাকা করে। আর খাবারের লবণ ১১ টাকা করে।

দেশের লবণ পরিস্থিতির সার্বিক নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থাকা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন-বিসিকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৬ লাখ টন অপরিশোধিত লবণ উৎপাদন হয়েছে। আগের মৌসুমের জমা রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন। ফলে কোরবানিকে সামনে রেখে লবণের কোনো সঙ্কট নেই।

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বাড়লেও সেটা কাঁচা চামড়ার বাজার চাঙ্গা করতে তেমন ভূমিকা রাখবে না। কারণ বিশ্বব্যাপী চামড়াজাত পণ্যের দাম পড়ে গেছে এবং সেটা আরো কমছে। এখন চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রাষ্ট্র লাভবান হচ্ছে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের লাভের মার্জিন আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। ফলে কাঁচা চামড়ার বাজারে এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

২০১৯-২০২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ যেখানে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে ৭৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার আয় করেছে, সেখানে সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে আয় করেছে ৯৪ কোটি ১৬ লাখ ডলার। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রা ৯২ কোটি ডলারের তুলনায় ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেশি।

চামড়াখাত সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবছর কোরবানিতে সারা দেশে গরু, ছাগল, মহিষ মিলিয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ পশু কোরবানি দেওয়া হয়, যা সারা বছর জবাই হওয়া পশুর অর্ধেকেরও বেশি।  এর মধ্যে প্রায় ৪০ লাখ গরু জবাই দেওয়া হয় বলে খাত সংশ্লিষ্টদের হিসাব। তবে গতবার মহামারি ও বন্যার কারণে পশু কোরবানি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গেছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কোরবানিতে এক কোটি ১৮ লাখ পশু কোরবানির যোগ্য বিবেচনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ এবং ছাগল-ভেড়া ৭২ লাখ।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!