ফাইল ছবি
ঢাকা : করোনা সংক্রমণ ঠেকানোর চেষ্টায় কঠোর লকডাউনের বিধিনিষেধ বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে থাকছে না। এদিন থেকে সবকিছুই প্রায় স্বাভাবিক হওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই রাজধানীর রাজপথে দেখা মিলছে চিরচেনা যানজটের। অবশ্য মানুষ-যান চলাচল বেড়েছিল বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই।
ঢিলেঢালা লকডাউনের মধ্যে সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর রাস্তায় প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি রিকশা-ভ্যান, মোটর সাইকেল দেদার চলেছে। যাত্রীবাহী বাসের বাইরে অন্য প্রায় সব যানবাহন চলাচল বিভিন্ন মোড়ে মাঝেমধ্যেই সৃষ্টি করেছে যানজটের। কোথাও কোথাও পুলিশের তল্লাশি চৌকি থাকলেও তাতে কড়াকড়ি নেই।
কমলাপুরের বাসিন্দা জনাব আলী বলেন, গত তিনদিন যাবত যেভাবে রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া নেমেছে তাতে লকডাউন বলে যে একটা বিধিনিষেধ চলছে তা বোঝার উপায় নেই। আগে তো দেখতাম পুলিশের কড়াকড়ি। সেটাও এখন আর সেই। দেখবেন চেক পোস্টগুলোতে পুলিশ সদস্যদেরও দেখা যায় না। তারা পুলিশ বক্সে বসে থাকেন।
রিকশাচালক মনু মিয়ার রামপুরা থেকে যাত্রী নিয়ে মতিঝিলে যেতে সময় লেগেছে পাক্কা এক ঘণ্টা। তিনি বলেন, এখন রাস্তায় গাড়ি বেশি। মোড়ে মোড়ে আবার ট্রাফিক সিগন্যালে বসে থাকতে হয়। চারদিন আগেও রাস্তার এই রকম অবস্থা ছিল না। হের থেইক্কা লকডাউন আমাগো জন্য ভালো ছিল। এইডা শেষ মানে আমাগো কপালও মন্দ। আগে যাত্রী পাইতাম না, এখন যাত্রী পাইলেও শান্তি নাই যানজটের কারণে। শাহজাহানপুর মোড়ে যানজটে পড়ে মোটরসাইকেল আরোহী রিফাত রহমান বলেন, আজকে বেশি জ্যাম। আমি বাড্ডা থেকে আসছি স্ত্রীকে নিয়ে। মতিঝিলে যাব ব্যাংকে। কিন্তু যে অবস্থা দেখছি এমন গত কয়েকদিনে দেখিনি।
যানজট নিয়ন্ত্রণে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক সদস্যদেরকেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। একদিকে সিগনাল দিলেই অন্যদিকে গাড়ির জটলা লেগে যাচ্ছে।পুরান ঢাকার আজিমপুর, লালবাগ, পলাশী, চকবাজার, মিটফোর্ড রোড এলাকার চিত্রও প্রায় একই রকম দেখা গেছে।আর লন্ড্রি, সেলুন, আসবাবপত্রের দোকান, ছাতার দোকানসহ জরুরি প্রয়োজনের বাইরের অনেক দোকানও খুলে গেছে ইতোমধ্যে।
মিরপুরের রূপনগর, পল্লবী, আরামবাগসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের দোকানপাট খুলে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রাস্তার পাশে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন ফল বিক্রেতা, হাঁক ডেকে বিক্রি করছেন ইঁদুর, তেলাপোকা মারার ও পুরনো ব্যথার ওষুধ। সবমিলে একদম স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়ে গেছে এই এলাকার পরিবেশ।
নিত্যপণ্যের দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য দোকানের পুরো শার্টার খুলে দিয়ে বেচাকেনা চলছে। রূপনগরের একটি সড়কে দেখা যায়, শুধু ট্রান্সটেকের একটি শো-রুম ছাড়া প্রায় সব দোকানপাট খুলে গেছে।
রূপনগরের বাসিন্দা আলফাজ আহমেদ বলেন, সাধারণ মানুষের চলাফেরা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রধান সড়কে শুধু গণপরিবহন ছাড়া অন্য সব গাড়ি চলছে। বোঝাই যাচ্ছে না দেশে লকডাউন আছে।
কাটাবনের অনেক মার্কেট সকালে খুলেছে। পাশাপাশি নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকার মার্কেটগুলোতেও বুধবার থেকে খোলার প্রস্তুতি চলছে। ফার্মগেট, বিজয় সরণি, চন্দ্রিমা উদ্যান ও মহাখালী এলাকাও যানজটের দেখা মিলেছে।
তেজগাঁওয়ের একটি চেকপোস্টে পুলিশের তেমন কড়াকড়ি দেখা যায়নি। সড়কে ব্যারিকেড ফেলে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করলেও দুয়েকটি বাদে বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে দেখা যায়নি।
অর্ধেক আসনে যাত্রী নিয়ে সব বাস নামাতে চান মালিকরা : করোনাভাইরাস মহামারির ভয়াবহতম পরিস্থিতির মধ্যেও অর্ধেক আসন ফাঁকা না রেখে সব আসনে যাত্রী নিয়ে সড়কে অর্ধেক গণপরিবহন চালুর যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তা মানতে রাজি নন পরিবহন মালিকরা।
তারা বলছেন, ‘অর্ধেক গণপরিবহন’ বাছাই করার মতো জটিল একটি প্রক্রিয়া বাস্তবায়নযোগ্য নয় এবং এ পদক্ষেপের ফলে পরিবহন মালিকরা যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, শ্রমিকদের কষ্ট আরো বাড়বে। তাছাড়া সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকিতো আছেই।
লকডাউনের বিধিনিষেধ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রোববার যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে ১১ অগাস্ট থেকে ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দিয়ে’ প্রায় সব চালুর কথা বলা হলেও সব আসনে যাত্রী নিয়ে অর্ধেক গণপরিবহন সড়কে নামানোর সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সড়কে আসন সংখ্যার অর্থেক যাত্রী নিয়ে সব গাড়ি চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
অর্ধেক গণপরিবহন নামানোর সিদ্ধান্তটি ‘বিচক্ষণতার সঙ্গে নেওয়া হয়নি’ বলে মনে করেন বাংলাদেশ বাস ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর সরকারের আগের সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করা সহজ ছিল। এবারের নির্দেশনা প্রতিপালন করা সম্ভব হবে বলে আমার মনে হয় না।’
এমন মনে হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে এই পরিবহন মালিক বলেন, ‘যেসব কোম্পানির অনেক বাস আছে তারা তাদের অর্ধেক বাস চালাতে পারবে। যেমন শ্যামলী ও হানিফসহ বেশ কিছু কোম্পানি আছে যারা অর্ধেক বাস চালাতে পারবে।
‘কিন্তু যার একটা গাড়ি আছে তিনি এই নিয়ম কীভাবে মানবেন। একজনের একটি বাস এরকম লাখ লাখ মালিক রয়েছে। আমরা তাদের কীভাবে বলব অর্ধেক বাস চালাবেন?’
সোমবার এক বিবৃতিতে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চলাচলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সকল গাড়ি চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এক মালিকের কয়টি গাড়ি আছে বা কতটা গাড়ি চালাচ্ছে দেশব্যাপী এবিষয়টি নির্ণয় করা একদিকে যেমন কঠিন হবে, অন্যদিকে শ্রমিকেরা বেকার থাকবে, তাদের কষ্ট লাঘব হবে না। মালিকরাও ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
সোনালীনিউজ/এমএএইচ







































