• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এবার লক্ষ্য এক কোটি ২০ লাখের বেশি পশু কোরবানি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৭, ২০২২, ১১:৫৮ এএম
এবার লক্ষ্য এক কোটি ২০ লাখের বেশি পশু কোরবানি

ঢাকা : দুলু মিয়া। বয়স ৫০ ছুঁয়েছে। নওগাঁ উপজেলা সদরের বাসিন্দা। ভয়াবহ করোনা মহামারির কারণে গত দুই ঈদে কোরবানির পশুর ব্যবসা করতে পারেননি। এবার আসন্ন কোরবানি ঈদের জন্য পশু লালনপালনের ওপর নজর দিয়েছেন। প্রাকৃতিক কোনো সমস্যা না হলে লাভবান হবেন বলে আশা করছেন তিনি।

শুধু দুলু মিয়া নয়, রাজধানীসহ সারা দেশে সাত লাখ খামারি পশু মোটাতাজা করা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আর মোটাতাজাকরণের জন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি জেলা উপজেলায় খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সর্বক্ষণ বিষয়টি তদারকি করছেন বলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী জানান।

সোমবার (১৬ মে) ড. অমিতাভ চক্রবর্তী জানান, সারা দেশের গবাদিপশুর পরিসংখ্যান ও তথ্য জানার জন্য প্রণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জেলা ও উপজেলায় চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে।

কোরবানির ঈদের চার মাস আগে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার খামারিরা পশু মোটাতাজা শুরু করেছে। এই মোটা তাজা শুরু করার কৌশল নিয়ে খামারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় ১০০ জনকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, গত বছর সারা দেশে ছোট বড় মিলে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ১১৫টি খামার ছিল। এ বছর খামারের সংখ্যা আগের চেয়ে আরো কিছু বাড়বে। সর্বনিম্ন ২টি কোরবানির পশু থাকলেও তা একটি খামার হিসেবে ধরা হয়েছে।

গেল বছর করোনা মহামারির সময় কোরবানির ঈদের চাহিদা ধরা হয়েছিল এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৪৬৭টি। তবে কোরবানির ঈদে গবাদিপশু জবাই হয় ৯০ লাখ ৯২ হাজার ১৪টি। সেই হিসাবে চলতি বছর এক কোটি ২০ লাখের বেশি টার্গেট নেওয়া হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি মাসে কোরবানির পশুর হিসাবের তথ্য আরও হালনাগাদ জানতে অধিদপ্তর থেকে চিঠি চালাচালি শুরু হয়ে গেছে।

আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মাঠ পর্যায়ের সব তথ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছানোর পর বিষয়টির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিস্তরিত তুলে ধরা হবে।

খামারি দুলু মিয়া জানান, সরকারি সহায়তায় (প্রশিক্ষণ) খামারি ব্যবসার ওপর জোর দিয়েছেন। তার খামারে ২ শতাধিক গবাদিপশু রয়েছে। খামারে পশু মোটাতাজাকরণের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা ও উপজেলার প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তারা। সরকারি প্রশিক্ষণে তার খামারে গবাদিপশু ভালো হচ্ছে।

দুলু মিয়ার মতো বেল্লাল হোসেন, আমজাদ আলী, মো. লালমিয়া, আলী হায়দারসহ একাধিক খামারি সরকারি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে গবাদিপশু পালন করছেন। এদের ৫ শতাধিক খামার রয়েছে। তারও বলছেন এবার আসন্ন কোরবানি ঈদে গবাদিপশু বিক্রি ভালো হবে।

তারা জানান, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে প্রতিটি জেলা উপজেলায় খামারিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। জেলা ও উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা সর্বক্ষণ বিষয়টি তদারকি করছেন। এই তদারকিতে তাদের গবাদিপশুর ব্যবসা সফল হবে বলে  এ সকল খামারিরা জানান।

মো. নুরুল ইসলাম। তার বয়সও প্রায় ৬০ ছুঁই ছুঁই। দক্ষিণ মানিকগঞ্জের ভাড়ারিয়া গ্রামে তার বাড়ি। তিনি এবার ২০টি পশু লালন পালন করছেন। কোরবানির পশু লালন পালন করার শুরুর আগে সরকারিভাবে সহায়তা পান। সেই সহায়তায় তার একই গ্রামের আরো ২০ জন খামারি গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের ওপর জোর দিয়ে কাজ করছেন।

এদিকে নওগাঁয়ের খামারিরাও গবাদিপশু পালনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তারা অতি যত্নে খামারে কোরবানির গবাদি পশু প্রস্তুত করে তুলছেন মুনাফা লাভের আশায়। নওগাঁয় এইবার ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪১৫টি কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন এ অঞ্চলের খামারিরা। গত বছর কোরবানিতে এর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৮২টি। সেই হিসাবে এবার প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার ৪৩৩টি পশু বেশি প্রস্তুত করছে বিক্রির জন্য।

এ বছর ঈদুল আজহায় নওগাঁয় প্রায় ৩ লাখ গবাদি পশু কোরবানির জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেই হিসাবে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বাড়তি ৮০ হাজার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু বেশি রয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলায় বিক্রি করা যাবে।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নওগাঁয় কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪১৫টি। এর মধ্যে এক লাখ ৪২ হাজার ৯৮২টি গরু-মহিষ এবং এক লাখ ১৫ হাজার ছাগল-ভেড়া রয়েছে।

প্রাকৃতিকভাবে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের জন্য নওগাঁয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে বলে মুঠোফোনে নওগাঁ জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. হেলাল উদ্দিন খান জানান।

তিনি বলেন, এ জেলায় মোট খামারি ৩১ হাজার ৩৪০ জন। এছাড়া কোরবানির পশুর প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, প্রাণী স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ব্যবহার না করার জন্য খামারিদের সচেতন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ঈদের আগে হয়তো জেলার ২৮টি কোরবানির হাট স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দিবে সরকার।

এছাড়া খামারিদের গবাদিপশু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!