• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

প্রতিমন্ত্রীর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে রাস্তায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৮, ২০২৩, ০৪:১৭ পিএম
প্রতিমন্ত্রীর কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিবাদে রাস্তায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা

ঢাকা: গত ৪ জুন শাহবাগে সংক্ষুব্ধ প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৮ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে চাকরি প্রত্যাশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদ।
 
এসময় তারা তীব্র নিন্দা ও নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ, অভিন্ন জাতীয় শ্রুতি লেখক নীতিমালা প্রণয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠাসহ প্রতিবন্ধী ভাতা মাসে ৮৫০ টাকা থেকে উন্নীত করে ৫০০০ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন। 

চাকরি প্রত্যাশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদের আহ্বায়ক মোঃ আলী হোসেন বলেন, আমরা ২০১৮ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত আন্দোলন করছি। যেখানে আমরা আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো পাচ্ছিনা সেখানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কিভাবে বলেন যে আমাদেরকে সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে? আমাদের আর তেমন কিছু প্রয়োজন নেই। যেখানে আমরা মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত সেখানে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কিভাবে পেলাম? যদি সকল সুযোগ-সুবিধা পেতাম তাহলে কি ২০১৮ সাল থেকে শুরু বর্তমান সময় পর্যন্ত রাজপথে আন্দোলন করতাম? আমি দৃঢ় কন্ঠে বলতে চাই সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে উনার মত এরকম অথর্ব, অযোগ্য, নির্লজ্জ প্রতিমন্ত্রীর কোন স্থান নেই। যিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখেন না তিনি কোনোভাবেই এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকতে পারেন না।

চাকরি প্রত্যাশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ মাহবুব মোরশেদ বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা নাকি লিখতে পারেনা তাই তাদেরকে চাকরি দেওয়া যাবে না এরকম একটি ভ্রান্ত ও তামাশামূলক কথা একজন দায়িত্বশীল প্রতিমন্ত্রী হিসেবে উনি কিভাবে বলতে পারেন? আমার মতে তিনি সরাসরি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি সরাসরি বাংলাদেশের সংবিধান, প্রতিবন্ধীদের অধিকার ও সুরক্ষা আইনকে অবমাননা করেছেন। তিনি আরো বলেন যতদিন আমরা বৈষম্যের শিকার হব ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো।

চাকরি প্রত্যাশী পার্থ প্রতিম মিস্ত্রি বলেন, প্রতিবন্ধী আসলে কারা আমরা নাকি তথাকথিত সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। আমরা যদি প্রতিবন্ধী মানুষরা লিখতেই না পারি তবে কেন কিভাবে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলো থেকে পড়াশোনা করে আজকে এখানে এলাম? আমরা তো প্রতিবন্ধিতা জয় করে বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পড়াশোনা করি তাহলে উনি কিভাবে বলেন যে আমরা লিখতে পারিনা? আমি মনে করি উনি এরূপ মন্তব্য করে বাংলাদেশের সংবিধানের অবমাননা করেছেন। তাই তার উচিত অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিকট নিঃশর্তে ক্ষমা চাওয়া।

চাকরি প্রত্যাশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মোঃ আলিফ হোসেন বলেন, কোন বিশেষ নোটিফিকেশনের মাধ্যমে কোন অনগ্রসর গোষ্ঠির অধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। অথচ সরকার ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ক্ষুন্ন করেছে। আমরা এত কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করেও চাকরি পাই না। আজ যদি আমাদের ন্যূনতম বিশেষ নিয়োগের ব্যবস্থা কিংবা কোটা পদ্ধতি চালু থাকত তবে কি আমরা এভাবে বঞ্চিত হতাম? আমরা চাই অতিসত্বর আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হোক এবং আমাদের দুবেলা দু মুঠো ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেওয়া হোক। তিনি আরো বলেন যে প্রতিমন্ত্রী যে বিরূপ মন্তব্য করেছেন তার উচিত অতিসত্বর নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করা। 

মানববন্ধনে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন যে, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী যদি ক্ষমা না চান তবে তার বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কটাক্ষ করে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের চেয়ারে কোন ভাবেই বসে থাকার অধিকার রাখেন না। তারা আরো বলেন রাষ্ট্র কর্তৃক আমাদের যে অধিকার হরণ করা হয়েছে তা যদি ফিরিয়ে দেওয়া না হয় তবে আমরা হয়তো বাঁচতে পারব না। তাই সরকারের কাছে আকুল আবেদন অতিসত্বর যেন আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে চাকরির প্রত্যাশী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী গ্রাজুয়েট পরিষদ ২০১৮ সাল থেকে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করে আসছে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।

তাদের প্রধান দাবি গুলো হল, ১) যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারের নবম থেকে ২০ তম গ্রেড ভুক্ত চাকরি সহ সায়িত্ব শাসিত, আধা সায়ত্ব শাসিত ও  বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে বেকার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা ২) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তি সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আঘাত প্রাপ্ত যারা সহস্তে লিখতে সক্ষম নয়, এ ধরনের ব্যক্তিদের জন্য চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা এবং একাডেমিক পরীক্ষায় অভিন্ন জাতীয় শ্রুতিলেখক নীতিমালা দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা ৩) প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য স্বতন্ত্র একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা ৪) সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ৮৫০ টাকা থেকে  বৃদ্ধি করে নূন্যতম ৫০০০ টাকায় উন্নীত করতে হবে।

সোনালীনিউজ/এম

Wordbridge School
Link copied!