• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

এলো খুশির ঈদ, ঘরে ঘরে আনন্দ


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১১, ২০২৪, ০৬:৩৪ এএম
এলো খুশির ঈদ, ঘরে ঘরে আনন্দ

ঢাকা : এক মাস রোজার পর আনন্দের বারতা নিয়ে বাংলাদেশে এল মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। 

টেলিভিশনগুলো বাজিয়ে চলেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী এই গান- ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।

বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) ঈদ উদযাপনে প্রস্তুত সারাদেশ; এক মাসের সংযম শেষে এ উৎসবের সঙ্গে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের উপলক্ষ যোগ হওয়ায় লম্বা ছুটিতে প্রিয়জনের কাছে গেছেন লাখো মানুষ। শেষ সময়েও ঢাকা ছেড়েছেন অনেকে; ফাঁকা হয়ে গেছে কর্মব্যস্ত রাজধানীর সড়ক। 

মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় মানুষের ব্যয় সংকোচন আর সব ধরনের কেনাকাটায় বাড়তি দামের কারণে মানুষের হাপিত্যেশের মধ্যে এসেছে এবারের ঈদ। 

ঈদ ও বাংলা নববর্ষ মিলিয়ে এবার টানা পাঁচ দিনের ছুটি মিলেছে; প্রথমবারের মত ছয় দিনের ছুটি উৎসবে বাড়তি মাত্রা দিয়েছে সংবাদপত্রের কর্মীদের। 

ঈদ উদযাপন ঘিরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে জাতীয় ঈদগাহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

নানা সংকটের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দাভাব পরিলক্ষিত হওয়ার কথা তুলে ধরে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। 

শুভেচ্ছা বাণীতে তিনি বলেন, বাংলাদেশেও এ মন্দার প্রভাব দৃশ্যমান। ফলে সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠী স্বাভাবিক জীবনধারণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আমি সমাজের সচ্ছল ব্যক্তিবর্গের প্রতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি, যাতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দ সমানভাবে উপভোগ করতে পারে।

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আসুন, সকল প্রকার অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে আমরা শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠা করি।

তিনি বলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যাপ্তি লাভ করুক-এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক। 

বিশ্বের সকল মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও সমৃদ্ধির জন্য আজকের দিনে আমি মহান আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।

বছরে পোশাক বাজারে বিকিকিনির বড় দুই মৌসুম এবার একসঙ্গে এলেও বিক্রিতে ভাটা পড়ার কথা বলছেন দোকানিরা। অন্যদিকে, বাড়তি দামের কারণে অন্যবারের তুলনায় কম কিনে সন্তুষ্ট থাকার কথা বলেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে বিপণিবিতানে আসাদের কেউ কেউ। 

ঢাকার মালিবাগের বাসিন্দা মেহেরুন্নেসা বেগম এবার নিজের চেয়ে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের জন্য বেশি কেনাকাটা করেছেন। জরুরি কিছু জিনিস কিনেই সন্তুষ্ট থাকার কথা বলেছেন তিনি। 

তিননি বলেন, এবার সবকিছুরই দাম বেশি। জরুরি যে জিনিসটা না কিনলেই নয়, সেটা কিনেছি। হাজবেন্ড, বাচ্চাদের জন্য কিনেছি। আমার জন্য জুতা, কিছু কসমেটিক্স কিনেছি। আর ড্রেস, শাড়ি উপহার পেয়েছি। তাই নিজের জন্য এগুলো কিনিনি। 

আত্মীয়স্বজনদের যেহেতু সব সময় দেওয়া হয় না, তাই তাদের জন্য জামাকাপড় কিনেছি। আপনজনদের খুশি করতে পারাটাই তো আনন্দের।

মেহেরুন্নেসার মত ক্রেতারা যে কম কেনার মনকষ্ট নিয়ে ঘরে ফিরেছেন তার সায় মিলছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনের কথাতেও। 

তিনি বলেন, বেচাকেনা টাকার অঙ্কে গতবছরের মতো ‘ঠিক’ থাকলেও বিক্রির সংখ্যাই ‘তিনভাগের একভাগ’ হয়েছে। 

দাম বাড়ার কারণে আমরা লাভবান হয়েছি। কিন্তু প্রচুর বিক্রি করতে পারলে লাভটা বাড়তি পাওয়া যেত, সেটা হয়নি।

এবার বাড়তি ছুটির কারণে আগেভাগেই বাড়ির পথ ধরেছিলেন সাধারণ মানুষ; পাশাপাশি অনেকে পরিবারের সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিয়েছেন। এতে ঢাকা যেমন আগে থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে তেমনি শুরুর দিকে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু শেষের দিকে বাড়তি চাপের মধ্যে সড়কে যানজটের দেখাও পেয়েছেন যাত্রীরা। 

শেষ সময়েও গ্রামের পথ ধরেছেন রাজধানীবাসীদের অনেকে। সকাল থেকেই ফাঁকা হয়ে গেছে প্রধান সড়কসহ অলিগলিগুলো। 

ঈদ সামনে রেখে রাজধানী ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের স্বস্তি দিতে গত শনিবার একটি রেলওয়ে ওভারপাস, সাতটি ওভারপাস ও দুটি সেতু উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

এবারের ঈদযাত্রা কারও জন্য স্বস্তির হলেও কারও অভিজ্ঞতা এর উল্টো হয়েছে বলেই মনে করছেন বেসরকারি সংস্থা যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী। 

তিনি বলেন, এবারের ঈদযাত্রাকে দুভাগে ভাগ করা যায়। ৩ থেকে ৭ (এপ্রিল) তারিখ পর্যন্ত স্বস্তিদায়ক থাকলেও পরে তা আর ঠিক থাকেনি। 

বিশেষ করে ৮ এপ্রিল গার্মেন্টস কারখানা ছুটির পর ডাবল যাত্রীর বিপরীতে যানবাহনের সংখ্যা তেমন ছিল না। ফলে যাত্রীরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। আমাদের যে শঙ্কা ছিল, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না, সেটাই হয়েছে।

অতিরিক্ত ভাড়া শুরুর দিকে গড়ে ২০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হলেও শেষের দিকে গড়ে তা ৪০০ টাকায় উঠেছে বলেও একটা হিসাব দেন মোজাম্মেল হক। 

তিনি বলেন, ট্রেনের ছাদে আর ট্রাক-পিক আপে যাত্রী পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলেও তা কার্যকর করা যায়নি। ঘোষণা অনুযায়ী জাতীয় মহাসড়কে ছোট যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে না পারায় দুর্ঘটনায়ও ঘটেছে অনেক।

শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী : দীর্ঘদিন চর্চার ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদের দিন সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন জানান, বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়বেন রাষ্ট্রপ্রধান। 

পরে সকাল ১০টায় থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বঙ্গভবনে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে তিনি শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। 

প্রেস সচিব বলেন, বঙ্গভবনের ক্রেডেন্সিয়াল হলে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সমগ্র দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাবেন রাষ্ট্রপতি।

বঙ্গভবনের কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এবার দেড় হাজার জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে। 

জেষ্ঠ্য রাজনীতিবিদ, বিচারক, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন। 

বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন সকাল ১০টায়, ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন গণভবনে। 

করোনাভাইরাস মহামারীর সময় কয়েকটি ছাড়া প্রতিবছরই ঈদে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন শেখ হাসিনা। গতবছরও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। 

এ বছরও ঈদের দিন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিচারপতি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনী প্রধান, কূটনীতিক, জ্যেষ্ঠ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন প্রধানমন্ত্রী। 

কখন কোথায় ঈদ জামাত : এবার ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে ঢাকায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, সকাল সাড়ে ৮টায়। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে এ জামাত হবে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে। 

একসঙ্গে ৩৫ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাতের জন্য প্রস্তুত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের জাতীয় ঈদগাহ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ হওয়ার তথ্য দিয়েছেন মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। 

রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ জামাতে নামাজ পড়বেন ঈদের সকালে। সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। 

পুরো ঈদগাহকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। পুলিশ, র‌্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ছাড়াও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স-এসএসএফ এবং ভিভিআইপির নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। 

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম ও মুয়াজ্জিন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ক্বারী হিসেবে প্রধান জামাতে দায়িত্ব পালন করবেন। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, প্রতিকূল আবহাওয়ায় ঈদগাহে জামাত সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে প্রধান জামাত হবে। 

ঈদের দিন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বরাবরের মতই পাঁচটি জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, সকাল ৭টা, সকাল ৮টা, সকাল ৯টা এবং সকাল ১০টায় যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ জামাত হবে। পঞ্চম জামাত হবে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে। 

চট্টগ্রামের সকাল ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত হবে জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে। ইমামতি করবেন মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মোহাম্মদ আলাউদ্দীন আল কাদেরী। সেখানেই সকাল সাড়ে ৮টায় আরেকটি ঈদ জামাত হবে। 

এছাড়া লালদীঘি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন শাহী জামে মসজিদে ঈদ জামাত হবে সকাল ৮টায়। 

রাজশাহীতে এবার ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে সকাল ৮টায় শাহ মখদুম (রহ.) কেন্দ্রীয় ঈদগাহে। তবে বৃষ্টি হলে বা আবহাওয়া প্রতিকূল থাকলে একই সময় প্রধান জামাত হবে ওই দরগার জামে মসজিদে। 

প্রস্তুত শোলাকিয়া ঈদগাহ : প্রতি বছর দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের আয়োজন হয় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে। এবার সেখানে হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। সকাল ১০টায় এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ। 

ঈদের এ জামাতে যাতায়াতের সুবিধার জন্য বরাবরের মতই শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!