• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তাই থাকবে বৈঠকে


বিশেষ প্রতিনিধি ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ০১:০৯ পিএম
সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তাই থাকবে বৈঠকে

ঢাকা : বাংলাদেশ-ভারতের ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) আলোচনায় যোগ দিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি আগামীকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা সফরে আসছেন। এটি একটি নিয়মিত বৈঠক হলেও এবারের এই বৈঠকের তাৎপর্য ভিন্ন।

সম্প্রতি সংখ্যালঘু ইস্যুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লির মধ্যে উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দুই সচিবের বৈঠকটি যেকোনো উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে মনে করছেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা।

তারা মনে করেন, এই বৈঠকে ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা থাকবে।

এদিকে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, বিভিন্ন পরিবর্তন, পেশাগত চ্যালেঞ্জ এবং উত্থান-পতন থাকা সত্ত্বেও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক টিকে আছে।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভারতের সামরিক ও কূটনৈতিক ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে এ সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস এবং ঐতিহ্য পরিষদ।

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এফওসি বৈঠক একটি নিয়মিত বিষয়। যদিও এই বৈঠকে আলোচনার বিষয়গুলোয় সাধারণত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরটি হবে দুদিনের।

তার এ সফরে দুদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়, পরস্পর বিরোধিতার কারণ, ভিসা চালু হওয়া, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদেশের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেওয়া, সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ে ভারতের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা, রোহিঙ্গা ইস্যু, সীমান্তে হত্যা এসব বিষয় আলোচনায় প্রাধান্য পাবে।

কূটনীতিকদের মতে, আসন্ন পররাষ্ট্র সচিবদের বৈঠকে বড় ধরনের কোনো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কিন্তু দুই পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকায় বসে বৈঠকের ছবিটি একটি বড় বার্তা দেবে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা থাকবে দুপক্ষ থেকেই।

তাদের মতে, ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এটি দুদেশের মধ্যে প্রথম উচ্চপর্যায়ের বৈঠক। এতে দুদেশের পক্ষ থেকে বিদ্যমান রাজনৈতিক দূরত্ব কমিয়ে আনার ওপর জোর দেওয়া উচিত।

তারা বলেন, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সৌজন্য সাক্ষাৎ হলে অবশ্যই দুদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, ভূরাজনীতি, দুদেশের জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে আলোচনা করতে পারলে ভালো হয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানসহ এ বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে কোনো বিষয় আসতে পারে।

এদিকে দিল্লির পক্ষ থেকেও এই আভাস মিলেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, এফওসির বৈঠক ছাড়াও আরও অনেকের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের আলোচনা হবে। সেসব বৈঠক চূড়ান্ত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, এফওসির বৈঠক ‘স্ট্রাকচার্ড’ বা কাঠামোগত। সেখানে দুদেশের পররাষ্ট্র সচিব পারস্পরিক স্বার্থসম্পর্কিত নানা বিষয় নিয়ে কথা বলবেন।

ঢাকা থাকাকালে বাংলাদেশের অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিক্রম মিশ্রির বৈঠক হবে কি না সে বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কিছু জানাননি।

এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, এটি নিয়মিত বৈঠক হলেও এবার গুরুত্বপূর্ণ। দুদেশের সম্পর্ক ভালো করার ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে কী বার্তা আসবে, সেটি গুরুত্বপূর্ণ। দুপক্ষের সংযত আচরণ এবং নেতিবাচক মন্তব্য থেকে বিরত থাকা।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, ঢাকা ভালো সম্পর্ক চায় এবং সেটি হবে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে এবং এটিই সঠিক বার্তা।

উত্থান-পতন সত্ত্বেও ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক টিকে আছে : ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘৫৩ বছর আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। ঐতিহাসিকভাবে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক স্মরণীয়। কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ১০ দিন আগেই ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি একটি মাইলফলক, যা কখনো মোছা যায় না।

ওই তারিখটি দুদেশের অংশীদারত্বের একটি বড় চিহ্ন, যা বিভিন্ন পরিবর্তন, পেশাগত চ্যালেঞ্জ এবং বিভিন্ন উত্থান-পতন থাকা সত্ত্বেও দুদেশের সম্পর্ক টিকে আছে। আমাদের এই সম্পর্ক টিকে আছে দুদেশের সংবেদনশীলতা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধায়।’

প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘গত ৫৩ বছরে বাংলাদেশ অনেক কিছু অর্জন করেছে, যা সম্ভব হয়েছে ৫৩ বছর আগে করা আমাদের ত্যাগের কারণে। ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ এবং ভারত অনেক দূর এগিয়েছে, উন্নতি করেছে দ্রুতগতির সঙ্গে।

দ্রুতগতির অর্থনীতি, ধারাবাহিক উন্নতি, মানুষের উন্নত ভবিষ্যতের আকাক্সক্ষার উন্নয়ন দুদেশের মধ্যে নতুন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা আজ আমাদের বহুমুখী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একে অপরের উন্নয়নের পরিপূরক।’

ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘আমাদের সুসম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস। যেখানে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ, গঠনমূলক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছি, এর ভিত্তি ছিল সমতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া।

আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দুদেশের সম্পর্কের দুদেশের জনগণ প্রধান অংশীদার এবং যে সম্পর্ক আমরা তৈরি করেছি, তার প্রধান উদ্দেশ্য দুদেশের জনগণের উন্নয়ন। এতে দুদেশের জনগণই উপকৃত। দুদেশের বর্ডার ট্রান্সপোর্ট, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সঞ্চালন, আমাদের অর্থনৈতিক সংযোগ এগুলো সবই মূলত আমাদের জনগণের সমৃদ্ধি তৈরি করে এবং তাদের কল্যাণে অবদান রাখে।’

প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের সমাজ গভীরভাবে সংযুক্ত। আমরা কেউ এককভাবে সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারব না।

আমরা আমাদের ভৌগোলিক ঘনিষ্ঠতাকে ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা এবং নতুন উচ্চাকাক্সক্ষা দ্বারা চালিত নতুন সুযোগে রূপান্তর করতে চাই।

এটা সত্য বাংলাদেশে অশান্ত পরিবর্তন সত্ত্বেও, আমাদের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক, পরিবহন ও জ্বালানি সহযোগিতা, আমাদের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ইতিবাচক গতি বজায় রেখেছে, যা প্রমাণ করে আমাদের সম্পর্ক সত্যিই স্থিতিশীল।

এটি আরও দেখায়, নির্বিশেষে আমাদের চারপাশে যা পরিবর্তন হচ্ছে, তা আমাদের পারস্পরিক নির্ভরতার বাস্তবতা এবং পারস্পরিক সুবিধা আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকবে।’

বাংলাদেশ-ভারত ইতিহাস ও ঐতিহ্য পরিষদের সভাপতি এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন পাহাড়ীর (বীরপ্রতীক) সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এরশাদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির সাবেক পরিচালক মনিরুজ্জামান, বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির আহমেদ চৌধুরী, বাচিকশিল্পী টিটু মুনশী প্রমুখ। সূত্র : দেশ রূপান্তর

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!