• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

একুশ মানে মাথা নত না করা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬, ০২:১৪ পিএম
একুশ মানে মাথা নত না করা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কিসের ভয়, সাহস প্রাণ...একুশ মানে মাথানত না করা। আজ বৃহস্পতিবার মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ফেব্রুয়ারির চতুর্থ দিন। মাস জুড়েই দেশের আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হবে সেই অমর গান- ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি...’। মায়ের মুখের ভাষা বাংলাকে আপন মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে বীর সন্তানেরা ১৯৫২ সালের এই মাসে সারাদেশে গড়ে তুলেছিলেন এক অগ্নিঝরা আন্দোলন। বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রাঙিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভাষার অধিকার। বাঙালির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন একাধারে যেমন ছিল রাষ্ট্রীয় জীবনে মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, তেমনি এ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি তাঁর জাতিসত্তা ও আপন সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রতিও সচেষ্ট হয়ে উঠেছিল। মহান ভাষা আন্দোলনের পথ ধরেই স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয়। যে কারণে ফেব্রুয়ারি বাঙালির জীবনে এক অনন্য প্রেরণার উৎস।
ভাষার মাসেই দেশের সর্বত্র বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে থাকে উৎসবমুখর। সৃজনশীল ও উদ্দীপনাময় আমেজ বিরাজ করে সবখানেই। এখানেই শেষ নয়, এখন আন্তর্জাতিকভাবেও দিবসটি পালন করা হয় বেশ সাড়ম্বরেই। এছাড়া বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাঙালিরা নিজ ভাষার মর্যাদায় আয়োজন করে থাকে নানা অনুষ্ঠানের।
প্রথম দিন থেকেই পাল্টে গেছে নগরবাসীর প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা। প্রতিদিনের রুটিনে নতুন করে যোগ হয়েছে অনেক কিছু। দিনের কাজের শেষে বাংলা একাডেমি অভিমুখে হাজারো মানুষের ভিড়। বইপ্রেমী পাঠকের পদচারণায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ এখন মুখরিত নানা উৎসবের আয়োজনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি চত্বরে শুরু হয়েছে জাতীয় কবিতা উৎসব। আজ মঙ্গলবার এ উৎসবের চতুর্থ দিন। দেশি-বিদেশী কবিদের পদচারণায় উৎসব পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। এই কবিদেরই চরণধূলি গিয়ে পড়ছে আবার একুশের বইমেলায়। আজ একুশে বইমেলারও চতুর্থ দিন। বিকেল থেকেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে থাকছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকছে বিভিন্ন লেখকের নতুন বইয়ের প্রকাশনা। লেখক কবিদের আড্ডা তো আছেই।
ফেব্রুয়ারির প্রতিটি দিন এক একটি চেতনায় শাণিত। মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইতিহাস সৃষ্টিকারী ঘটনা ঘটলেও পুরো মাসই বাঙালী গণমানুষের চেতনাকে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলে। সে সময় ভাষা আন্দোলনের চেতনায় সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ। সবাই চায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হোক। এমন সময় ২৪ থেকে ২৬ জানুয়ারি ঢাকায় ছিল মুসলিম লীগের কাউন্সিল। কাউন্সিল উপলক্ষে ঢাকায় আসেন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন। পূর্ব কর্মসূচী অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে নিজেদের গুণকীর্তন তুলে ধরেন পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের সামনে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমিন। ওই সভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নানা ধরনের বক্তব্য শেষে কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দোহাই দিয়ে বলেন, পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি। এ সময় তিনি বলেন, প্রদেশের ভাষা কি হবে তা প্রদেশবাসীই ঠিক করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। এর পক্ষে তিনি যুক্তি দেখান একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোন রাষ্ট্র শক্তিশালী হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাভাষাকে আরবী হরফে লেখার চেষ্টা সফল হয়েছে। এসব কেন্দ্র জনগণ নিজ উদ্যোগে খুলেছে বলে তিনি জানান। খাজা নাজিমুদ্দিনের এ বক্তব্যটুকুই দাবানলের মতো বাঙালী জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২৭ জানুয়ারি নাজিমুদ্দিন এ বক্তব্য না দিলে হয়ত আরও কিছু সময় নিয়ে বাঙালীরা ভাষার অধিকার আদায় করত। তার এ বক্তব্যের পর বাঙালী বুদ্ধিজীবী থেকে আপামর জনতা সবাইকে জাগিয়ে তোলে। সকলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে রাজপথে। এভাবে পাকিস্তানীদের বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্য দিয়ে বাঙালীদের কাছে স্পষ্ট হয়, আন্দোলন করে অধিকার আদায় করতে হবে। ভাষা আন্দোলনের মাসের চতুর্থ দিন আজ। বরাবরের মতো আজও জাতির সূর্যসন্তানদের অবদান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরবেন বিশিষ্টজনরা। আজকে বাংলা একাডেমীর মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞানভাবনা : বিশ্ব পরিচয়। আলোচনায় সভাপতিত্ব করবেন অজয় রায়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আলী আসগর। আলোচনা করবেন সুব্রত বড়ুয়া, পূরবী বসু এবং অপরেশ কুমার ব্যানার্জী।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!