• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

সিলেটের সাদা পাথর: প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে সংকটের গল্প


ওমর ফারুক, সাংবাদিক আগস্ট ১৯, ২০২৫, ১২:২৩ পিএম
সিলেটের সাদা পাথর: প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে সংকটের গল্প

ঢাকা : সিলেটের ভোলাগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত সাদা পাথর এলাকা একসময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পর্যটনের জন্য সমগ্র দেশের পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিল। পাথরের উজ্জ্বল সাদা রঙ এবং প্রকৃতির কোলে অবস্থিত এই অঞ্চলের সৌন্দর্য শুধু চোখে নয়, হৃদয়কেও মুগ্ধ করত। তবে বর্তমানে এই অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের পথে। অবৈধ পাথর উত্তোলন, পরিবেশ দূষণ এবং সরকারি পদক্ষেপের অভাবে এলাকা আজ ভয়ঙ্কর সংকটে পড়েছে।

জেলার প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করেছে। 
৩৫,০০০ ঘনফুট পাথর: গত ৫ দিন আগে ৭০টি ট্রাক থেকে উদ্ধার করা হয়। (জনকণ্ঠ)
১২,০০০ ঘনফুট পাথর: সিলেট জেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে উদ্ধার করা হয়। (ইত্তেফাক)
২,৩০,০০০ ঘনফুট পাথর: সিলেট সদর উপজেলার সাদাপাথর এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। (নিউজ২৪)
১,০৮,০০০ ঘনফুট পাথর: জাফলং ও ভোলাগঞ্জ এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। (ইউটিউব)
৮০,০০০ ঘনফুট পাথর: সেনা, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে উদ্ধার করা হয়। (দেশ রূপান্তর)

উপরের তথ্যগুলো সংযুক্ত করলে, মোট উদ্ধার হওয়া পাথরের পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ঘনফুট। এবং অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ১০০টি নৌকা ধ্বংস করেছে। তবে এসব পদক্ষেপও পর্যাপ্ত নয়। পাথরের অবৈধ চুরি অব্যাহত রয়েছে এবং স্থানীয় মানুষের জীবন ও পর্যটন শিল্পও ক্ষতির মুখে।

 

এই সাদা পাথর এলাকা শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যের জন্য নয়, স্থানীয় মানুষের জীবিকারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পর্যটকরা এখানে ভ্রমণে আসতেন, আর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু অবৈধ উত্তোলন ও লুটপাটের কারণে এই অর্থনৈতিক সুযোগও আজ সংকটাপন্ন। হাইকোর্ট ইতোমধ্যে লুট হওয়া পাথর আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন এবং অভিযুক্তদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন, তবে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

পরিবেশবিদদের মতে, এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম শুধু পাথরের ক্ষতি নয়, পুরো বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি ঘটাচ্ছে। নদী এবং মাটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থানীয় জীববৈচিত্র্যকে বিপন্ন করছে। এছাড়া, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারালে পর্যটন শিল্পও প্রভাবিত হবে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্থানীয় অর্থনীতির জন্য মারাত্মক।

সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণ এবং পরিবেশপ্রেমীদেরও সচেতন হতে হবে। অবৈধ কার্যক্রম রোধের জন্য সঠিক তথ্য প্রচার, স্থানীয় কমিউনিটির শিক্ষার উদ্যোগ এবং পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। সচেতনতার মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা সম্ভব।

সর্বোপরি, সিলেটের সাদা পাথর এলাকা আমাদের জাতীয় সম্পদ। প্রকৃতির এই অমূল্য রত্ন রক্ষায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন, সরকারি সংস্থা, পরিবেশবিদ এবং সাধারণ জনগণ—সকলের সহযোগিতা ছাড়া এই অঞ্চলকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা কঠিন। সময়ের অনুরোধ, আমরা যদি এখন উদ্যোগ না নেই, আগামী প্রজন্ম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এ মূল্যবান অংশ দেখার সুযোগ হারাতে পারে।

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!