• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

হাসিনার দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জার্নি, যেভাবে উত্থান-পতন 


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ১৮, ২০২৫, ০৫:১০ পিএম
হাসিনার দীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জার্নি, যেভাবে উত্থান-পতন 

ফাইল ছবি

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতির একটি পরিচিত মুখ। ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি, বিরোধী দলীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী। দীর্ঘতম সময় ক্ষমতায় থাকা নারী হিসেবে বিশ্ব ইতিহাসেও তার নাম রয়েছে। গত দেড় দশক দেশের শাসনের পর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২৪ সালের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে বসেই জানেন দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার কথা। মানবতাবিরোধী অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডও পেয়েছেন। ক্ষমতায় ওঠা, পতন ও প্রত্যাবর্তনের নাটকীয়তা ভরিয়ে আছে তার রাজনৈতিক জীবন।

সমালোচকরা মনে করেন, ৭৬ বছর বয়সী শেখ হাসিনার ৪৪ বছর শীর্ষ নেতৃত্বে থাকা সময়ে নেওয়া নানা সিদ্ধান্তের কারণে আওয়ামী লীগ হুমকির মুখে পড়েছে। ইতোমধ্যে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা আওয়ামী লীগের ওপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবিও তুলেছেন বিরোধীরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে শেখ হাসিনা অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হওয়ায় দলের মধ্যে সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা ছিল, যা তাকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করেছে।

১৯৭৫ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে পরিবারের নিহতের পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালে ভারতে নির্বাসনে থাকা অবস্থায় তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরশাদ সরকারের আমলে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিশতে পারার ক্ষমতা তাকে বহির্বিশ্বেও গ্রহণযোগ্যতা এনে দেয়।

১৯৯১ সালে নির্বাচনে ৮৪ আসন পেয়ে দেশটির প্রথম বিরোধীদলীয় নারী নেতা হন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন এবং পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে ২০০১ সালে সংঘাতহীনভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলায় আহত হন তিনি। ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারি হলে রাজনৈতিক সহিংসতা ও বিতর্কে নামেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে সরকার গঠন করেন। তবে দায়িত্ব গ্রহণের কয়েক মাসের মধ্যে ঘটে বিডিআর বিদ্রোহ, যেখানে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়া সরকারের নির্বাচনি নীতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল এবং একতরফা নির্বাচন ও ভোটের শৃঙ্খলা নিয়ে সমালোচনা ও বিতর্কের শিকার হন।

শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারবহির্ভূত গুম-খুন, বিরোধী মত ও রাজনৈতিক দলের ওপর দমনপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও দেশ পরিচালনায় দক্ষতার জন্য প্রশংসাও পেয়েছেন। তবে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও এসেছে তার সরকারের বিরুদ্ধে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী সাব্যস্ত হয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় পেয়ে তার রাজনীতিতে ফেরার প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এর উত্তর নির্ভর করবে সামনের দিনগুলোতে কারা আসবে এবং তারা কী কাজ করবে। মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, যদি নতুন নেতৃত্ব তার চেয়ে খারাপ বা সমান কর্মকাণ্ড করে, তাহলে হাসিনার রাজনৈতিক কমব্যাকের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

শেখ হাসিনার রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘ, নাটকীয় ও বিতর্কিত। ক্ষমতা, পতন, উন্নয়ন এবং অভিযোগ-সবকিছুই মিলে একটি জটিল রাজনীতির চিত্র ফুটে উঠেছে, যা বাংলাদেশি রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ।

এসএইচ 

Wordbridge School
Link copied!