• ঢাকা
  • বুধবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

সেনা কর্মকর্তার কাছে তারেকের ক্ষমা চাওয়ার নেপথ্যের কারণ কী?


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১০, ২০২৫, ০৫:১৮ পিএম
সেনা কর্মকর্তার কাছে তারেকের ক্ষমা চাওয়ার নেপথ্যের কারণ কী?

ফাইল ছবি

বিএনপির রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন একটি ঘটনা-ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ ফাতেমী আহমেদ রুমির কাছে সরাসরি ক্ষমা চাইলেন তারেক রহমান। এমন প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে অস্বাভাবিক ঘটনা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। প্রশ্ন উঠছে-এই ক্ষমা চাওয়ার নেপথ্যে কী বার্তা লুকিয়ে আছে?

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার, অবসরপ্রাপ্ত শতাধিক সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায়। ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। বক্তব্যের এক পর্যায়ে স্ক্রিনে উপস্থিত সৈয়দ ফাতেমী আহমেদ রুমিকে দেখে তিনি কথাটি তুলেন।

তারেক রহমান বলেন, পুরান ঢাকা থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত একটি বড় মিছিলের সময় ভিড়ের মধ্যে রুমি তাকে কিছু বলতে চেয়েছিলেন। তখন পরিস্থিতির চাপে তিনি রুঢ়ভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন।

ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে তিনি বলেন, ‘আই অ্যাম ভেরি সরি, সেদিন আপনাকে রুডলি রিপ্লাই করেছিলাম। অনেক দিন চেষ্টা করেছি আপনাকে রিচ করতে। আজ সুযোগ পেয়েছি, আমি সত্যিই দুঃখিত।’

জবাবে মেজর জেনারেল (অব.) রুমি বলেন, ‘আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আপনি যেটা বললেন, থ্যাংক ইউ।’

বিএনপি জানায়, বৈঠকে মোট ১০১ জন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এই ক্ষমা প্রার্থনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রাত্যু রাইসু লিখেছেন, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া নেতৃত্বের পরিপক্বতার লক্ষণ, যা বড় নেতাদের বৈশিষ্ট্যও। তবে রাজনৈতিক আলোচনার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন-এই পদক্ষেপের রাজনৈতিক তাৎপর্য কী?

বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত অনুশোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পেছনে অন্তত তিনটি বড় কারণ কাজ করেছে।

প্রথমত, ২০০৭–০৮ সালের ঘটনার সময় সেনাবাহিনীর একটি অংশ মনে করেছিল, বিএনপির সিদ্ধান্তগুলো তাদের সঙ্গে অস্বস্তিকর দূরত্ব তৈরি করেছিল। তারেক রহমান সেই অতীত উত্তাপ কমাতে চাচ্ছেন-এমন ধারণা রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, সামনে জাতীয় নির্বাচন। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নিরাপত্তা সংস্থা ও সামরিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ ভূমিকা বিএনপি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আস্থা তৈরির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেও দেখা হচ্ছে এই ক্ষমা প্রার্থনাকে।

তৃতীয়ত, বিএনপির ভেতরে নতুন প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাবি-অতীত ভুল স্বীকার না করলে দলের ভাবমূর্তি পাল্টাবে না। সেই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ারই সূচনা এটি।

তাহলে এখন প্রশ্ন-সামরিক মহল এই ইঙ্গিত কীভাবে নিচ্ছে? প্রতিক্রিয়া এখনো প্রকাশ্যে না এলেও বিশ্লেষকদের ধারণা, এই ক্ষমা চাওয়ার মধ্য দিয়ে তিনটি বার্তা স্পষ্ট হয়েছে। এক, সেনা–বেসামরিক দূরত্ব কমাতে চায় বিএনপি। দুই, তারেক রহমান নিজ নেতৃত্বকে আরও সংযত ও দায়িত্বশীল রূপে তুলে ধরতে চাইছেন। তিন, আগামী রাজনীতিতে সমঝোতা-ভিত্তিক পথেই দলটি এগোতে চায়।

সব মিলিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে ক্ষমা চাওয়া ঘটনাটি ব্যক্তিগত নয় বরং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক সমীকরণে একটি সূক্ষ্ম, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত হয়ে উঠেছে।

এসএইচ 
 

Wordbridge School
Link copied!