• ঢাকা
  • সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

রাজধানীর ১৩০০ মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯, ০১:০৫ পিএম
রাজধানীর ১৩০০ মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে

ঢাকা : রাজধানীর এক হাজার ৩০৫ শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে ৬২২টি ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৬৭৮টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু এসব শপিংমলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিক বা কর্তৃপক্ষ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ এসব শপিংমল বা মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একাধিবার নোটিশ দিয়ে সতর্ক করলেও তারা উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বহুতল, বাণিজ্যিক ও মার্কেট ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার বিষয়ে আলোচনা চলছে। ২০ ফেব্রুয়ারির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ নিহত হয়। আহত হয় ৪১ জন।

সূত্রমতে, ২০১৭ সালের ১২-২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর শপিংমল ও মার্কেট পরিদর্শন করে একটি তালিকা তৈরি করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। একই বছরের ২৬ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফা ওইসব মার্কেট পরিদর্শন করে সংস্থাটি। তারা এক হাজার ৩০৫টি শপিংমল ও মার্কেট আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানায়।

এর মধ্যে ‘খুবই ঝুকিপূর্ণ’ তালিকায় রয়েছে-  কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স ভবন-২, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স আদর্শ ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স গুলিস্তান ইউনিট, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মহানগর, মহানগর বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন লিমিটেড, ঢাকা ট্রেড সেন্টার, গুলশান শপিং সেন্টার, এম প্রেজ প্লাজা, জব্বার টাওয়ার, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, ভ‚ইয়া ম্যানশন, গুলশান ভবন মার্কেট, গুলশান-২ ডিএনসিসি কাঁচাবাজার মার্কেট, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বিদিশা সুপার মার্কেট, সাবেরা টাওয়ার মার্কেট, বাইশ বর সুপার মার্কেট, ল্যান্ড মার্ক শপিং সেন্টার, বনানীর গোলাম কিবরিয়া ম্যানশন, বাংলাদেশ ইউএস মৈত্রী কমপ্লেক্স, বাড্ডার ফুজি ট্রেড সেন্টার, আবেদ আলী মার্কেট, আর এ এস প্লাজা, লুৎফুন টাওয়ার, রিজভ্যালী শপিং সেন্টার, হাকিম টাওয়ার শপিং কমপ্লেক্স, বসুন্ধরার ভাই ভাই সুপার মার্কেট, হাজী আ. লতিফ ম্যানশন, আমীর ড্রিম কমপ্লেক্স, ফরাজী টোলা কাঁচা বাজার, ভাটারার আব্দুল লতিফ মার্কেট, বারিধারার নতুন বাজার দোকান মালিক সমিতি মার্কেট, মহাখালীর জননী ভবন মার্কেট, শাহীন ম্যানশন, মহাখালী প্লাজা, জেবা টাওয়ার, কারওয়ান বাজারের শাহ আলী টাওয়ার, নিক্য পেপার অ্যান্ড স্টেশনারী, মগবাজারের বাটা বাজার, বেঙ্গল টাওয়ার, আড়ং প্লাজা, বিশাল সেন্টার শপিং মল, রাজ্জাক প্লাজা শপিং কমপ্লেক্স, আহম্মেদ পরিবার মার্কেট, আলহাজ্ব শামছুদ্দিন ম্যানশন, সিরাজ ম্যানশন মার্কেট, তেজগাঁওয়ের- সেন্টার পয়েন্ট ও বে-এম্পোরিয়াল মার্কেট।

‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রয়েছে- উত্তরার কেসি টাওয়ার, টপটেন শপিংমল, ১৩ নম্বর ফার্নিচার মার্কেট, উত্তরা বাজার সুপার মার্কেট, আকতার ফার্নিচার, এ কে টাওয়ার, ওয়েসটেস লিমিটেড, ওরিয়ন ফুটওয়ার, মি এন্ড মম, ফ্যাশন প্যারাডাইজ, তেজগাঁওয়ের আহমেদ মার্কেট, তোহা মিয়া মার্কেট, শেখ প্লাজা, মগবাজার প্লাজা, সাউদিয়া সুপার মার্কেট, রহমান ম্যানশন, আয়শা মঞ্জিল, হাজী মোতালেব মার্কেট,  গুলশান টাওয়ার, জব্বার টাওয়ার শপিংমল, পুলিশ প্লাজা, রহমানিয়া সুপার মার্কেট, গুলশান-১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেট, কাওরান বাজার ২ নম্বর সুপার মার্কেট, কাওরান বাজার কিচেন মার্কেট, কাওরান বাজার কামার পট্টি, হাসিনা মার্কেট, কাব্যকস সুপার মার্কেট, ব্র্যাক আড়ং, বনানী-বারিধারা- ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেট, সাদ মুসা সিটি সেন্টার, মেহেদী মার্কেট, প্রগতি স্মরণীর হাজী জমির উদ্দিন সুপার মার্কেট, ফজিলা শপিং সেন্টার, ওয়ারীর মুক্ত বাংলা হকার্স মার্কেট, কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্স ভবন-১, খন্দকার ইলেকট্রনিক মার্কেট, শাহাবাগের আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেট, নবাবপুরের- আ. রহিম মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার, মজনু হার্ডওয়ার মার্কেট, পল্টনের  বায়তুল মোকাররম মার্কেট, পলওয়েল সুপার মার্কেট, সিটি ভবন, জাহাঙ্গীর শপিং কমপ্লেক্স, রমনা ভবন মার্কেট, মাওলানা ভাষানী স্টেডিয়াম মার্কেট, ভলিবল মার্কেট, গুলিস্তানের-এনএক্স টাওয়ার, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দক্ষিণ, ফুলবাড়িয়া সিটি সুপার মার্কেট-২, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল মার্কেট, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম মার্কেট, ডন প্লাজা, নবাব প্লাজা, পীর ইয়ামেনী মার্কেট, বংশালের- জাকের সুপার মার্কেট, রোজলীন ভিসতা শপিং কমপ্লেক্স, মিরপুরের মিরপুর টাওয়ার নার্শি মার্কেট, ডাসুরা টাওয়ার, সিটি ক্লাব মার্কেট, ইকবাল কমপ্লেক্স, চৌরঙ্গী মার্কেট, হাজী গণি মোল্লা মার্কেট, সৈকত প্লাজা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামে মসজিদ কমপ্লেক্স।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইন্টেনেন্স) মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ শপিংমলের তালিকা করে তাদের তিন দফা নোটিশ ও স্মরণিকা দিয়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু তারা কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।’ তিনি বলেন, ‘একের পর এক আগুনের ঘটনা ঘটছে, পুরান ঢাকার আগুনের ঘটনাটি ওয়েকআপ কল। এখনই সময় সচেতন হওয়ার। তারপরও যদি না হয় তবে আরও বড় ঘটনা সামনে অপেক্ষা করছে।’  

সরেজমিনে ‘গুলশান শপিং সেন্টার’ পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ৭ তলা এই মার্কেটে আছে ৭২৫টি দোকান রয়েছে। মার্কেটে রয়েছে ৮টি সিঁড়ি। প্রতি তলার সিলিংয়ে বৈদ্যুতিক তারের জটলা দেখা গেছে। নিচতলায় মোবাইল সার্ভিসিং, ঘড়ি মেরামত ও হার্ডওয়্যারের দোকানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তার রয়েছে। ভবনের দ্বিতীয় তলায় একই চিত্র দেখা গছে। ছয়তলায় মাত্র একটি স্মোক বা হিট ডিটেক্টর দেখা গেলেও অন্য কোনও তলায় তা দেখা যায়নি। মার্কেটের প্রতিটি তলায় রয়েছে ডিস্টিংগুইশার (আগ্নিনির্বাপক যন্ত্র/সিলিন্ডার)। তবুও অগ্নিঝুঁকির তালিকা অনুযায়ী ‘খুবই ঝুঁকিপূর্ণ’ গুলশান শপিং সেন্টার।

মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দাবি, গুলশান শপিং সেন্টারে অগ্নিঝুঁকি নেই। এখানে অগ্নিনির্বাপনের সব যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থা রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বলছে, গুলশানে এই ভবনটি তালিকা অনুযায়ী খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনের বৈদ্যুতিক তারগুলো সম্পূর্ণ অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে।

গুলশান শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাম্মাদুর রহমান জানান, ‘ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে যে প্রতিবেদন করা হয়েছে সেটাতে আমাদের এই মার্কেট ভবনকে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলা হচ্ছে। আমরা তাদের ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে রিট করেছি। তারা আটকে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই ভবনের একটি ওয়াটার প্ল্যান্ট রয়েছে যা ৬০ হাজার লিটার পানি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন। ৮টি সিঁড়ি রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি ইনসাইড সিঁড়ি। প্রতিটি ফ্লোরে অগ্নিনির্বাপন সিলিন্ডার রয়েছে।’

ভবনের প্রতি তলায় বৈদ্যুতিক তার ও মিটারগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাখা কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এগুলো বৈদ্যুতিক তার নয়, এগুলো ইন্টারনেট ও ডিশ ক্যাবল। সেগুলোতে কোনও সমস্যা নেই।’

আগুনের ঝুঁকিতে রয়েছে গুলশান-১ ডিএনসিসি কাঁচাবাজার সুপার মার্কেট। ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি রাতে এই মার্কেটে আগুন লাগে। আগুনে ওই মার্কেটের প্রায় ৬০০ দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গুলশান-১ কাঁচাবাজার সুপার মার্কেটের চেয়ারম্যান দীন মোহাম্মদ বলেন,  ‘২০১৭ সালের আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ এখনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। সিটি করপোরেশনের নাম মাত্র একটি কাঠামো করে দিয়েছিল। পরে আমরা ব্যবসায়ীরা এ পর্যন্ত করেছি।’ বৈদ্যুতিক লাইনগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো এই মাসেই ঠিক করা হবে। আমি ইলেক্ট্রিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে রেখেছি।’

ওই মার্কেটের দোকানি খোকন মিয়া বলেন, ‘‘ঝুঁকি তো সবখানেই রয়েছে। আমরা এই ঝুঁকির মধ্যে থেকে এখনও ব্যবসা করছি। আমাদের কী করার আছে যদি সিটি করপোরেশন এগুলো ঠিক করে না দেয়।’

সরেজমিনে ডিএনসিসি কাঁচাবাজারে গেলে দেখা যায়, তিনতলা মার্কেট ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থা। পুরো মার্কেটে ৪০০ দোকান রয়েছে। কিন্তু ভবনের সিলিংয়ের কংক্রিট খসে পড়ে রড বের হয়ে থাকতে দেখা গেছে। মার্কেটের সিঁড়ি পথও খুব সরু। এই মার্কেটটি ফায়ার সার্ভিসের তালিকা অনুযায়ী খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গুলশান-২ ডিএনসিসি কাচাবাজারের কোনও প্রকার অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা ও যন্ত্রপাতি দেখা যায়নি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!