• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলাম মানুষকে মানবপ্রেমিক বানায়


মেহেদী হাসান সাকিফ ডিসেম্বর ১, ২০২০, ০২:৪৯ পিএম
ইসলাম মানুষকে মানবপ্রেমিক বানায়

ঢাকা : আমাদের এলাকায় মাঝেমধ্যেই একটা অন্ধলোক ‘আব্বাজানেরা, আম্মাজানেরা’ বলে বলে খুব করুণস্বরে আল্লাহর ওয়াস্তে সাহায্য প্রার্থনা করে। লোকটার দুটি চোখই অন্ধ। বড্ড মায়া হয় লোকটার জন্য। আমাদের চারপাশে এমন বহু অসহায় লোক আছে। আর বিত্তবান মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বড় বড় দালানকোঠা আর ইটপাথরের নিচে পরে আমাদের মনটাও খুব শক্ত হয়ে গেছে।

ইসলামই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র শ্রেষ্ঠ মানবকল্যাণের ধর্ম। পৃথিবীতে আর এমন কোনো ধর্ম নেই যেখানে মানবকল্যাণকে এতটা গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে। আমাদের নবী (সা.) ছিলেন মানবসেবার শ্রেষ্ঠ প্রতিভূ। সারাটি জীবন মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। অভাবী অসহায় মানুষেরা তাঁর কাছে সাহায্যের জন্য আসলে তাদেরকে কখনো না বলেননি। ষষ্ঠ হিজরিতে খাইবার বিজয় হয়। নবম হিজরিতে যখন আরব উপদ্বীপ মুসলিমদের অনুগত বিশাল রাজ্যের অধিপতি। চারদিক হতে যখন বিপুল সম্পদ প্রেরিত হতে থাকে তখন সবই তিনি অকাতরে বিলিয়ে দেন। হযরত আয়েশা (রা) এর ভাষ্যমতে, নবী (সা) এমনভাবে ইহকাল পরিত্যাগ করেছেন যে, তার পরিবার লাগাতার দুইদিন পেটভরে যবের রুটি খেতে পারেননি। শুধু নিজে মানবকল্যাণমূলক কাজ করেই ক্ষান্ত হননি। স্বীয় উম্মতকেও এ ব্যাপারে খুব উৎসাহিত করেছেন। রাসুল (সা) বলেছেন, ‘তোমরা পৃথিবীবাসীর প্রতি করুণা করো, তাহলে আকাশবাসীও তোমাদের ওপর করুণা বর্ষণ করবেন।’ (বুখারি শরিফ হাদিস নং-৭৩৭৬) আলোচ্য হাদিসে নবী (সা.) মুসলিম, অমুসলিম নির্বিশেষে সব মানুষের কল্যাণ সাধনের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘অসুস্থ লোকের সেবা করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করো।’ (বুখারি শরিফ হাদিস নং-৫৬৪৯)

শুধু মুসলিমদের প্রতিই সীমাবদ্ধ ছিল না তার জনকল্যাণমূলক কাজ। অমুসলিমরা অসুস্থ হলেও আমাদের প্রিয়নবী (সা.) তাদের দেখতে যেতেন, তাদের সেবা করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ইহুদি গোলাম নবী করীম (সা.)-এর খেদমত করত। যখন সে অসুস্থ হলো, তখন মহানবী (সা.) তাকে দেখতে গেলেন, তার মাথার দিকে বসলেন আর তাকে বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করো! তখন সে তার পিতার দিকে দেখল। পিতা বললেন, তুমি আবুল কাসেমের অনুসরণ করো। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করল। তখন নবী (সা.) এই বলে বের হলেন, আল্লাহর শোকরিয়া, যিনি তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন।’ (বুখারি শরিফ হাদিস নং-১২৫৬)

কিন্তু আজ আমরা অনেকেই শুধু রুকু সিজদা দেওয়াকেই ইবাদাত মনে করি। মানুষের সেবা করাও যে অনেক বড় ইবাদত তা আমরা ভুলেই গেছি। হাজার টাকা দামের রঙ-বেরঙের বাহারি পোশাক থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে দামি-দামি পোশাক ক্রয় করি। লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে দেশ-বিদেশে ঘুরতে যাই। নামি-দামি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি আপলোড করি। অথচ পৃথিবীর কতো মানুষের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে। জন্মদিন, বিবাহ-বার্ষিকী, নামে-বেনামে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে আমাদের টাকা খরচের জায়গায় অভাব না থাকলেও একজন দরিদ্র মানুষ হাত পাতলে তাকে দশটি টাকা দিতে বুক ফেটে যায়।

আমাদের সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা তাদের ফরজ হজ্ব আদায়ের পরও বছরের পর বছর নফল হজ্ব আদায় করে যাচ্ছেন। অথচ তাদের আশপাশেই অনেক অসহায় দরিদ্র মানুষ আছেন। তাদের একাধিকার আদায়কৃত নফল হজ্বের টাকা দিয়ে একটি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে সহজেই তাদের স্বাবলম্বী করা যায়। পবিত্র  কোরআন ও হাদিসে দরিদ্র অসহায় মানুষদের সাহায্য করার ব্যাপারে বারবার শুধু উৎসাহই প্রদান করেননি। কখনো এ ব্যাপারে কঠোর  হুঁশিয়ারিও প্রদান করেছেন। পবিত্র  কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদেরকে কিসে সাক্বার (জাহান্নাম)-এ নিক্ষেপ করেছে? তারা বলবে, আমরা নামাজীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তদেরকে অন্নদান করতাম না।’ (সুরা মুদ্দাচ্ছির, আয়াত-৪২, ৪৪)। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (স) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রূষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক। আপনিতো বিশ্বপালনকর্তা কীভাবে আমি আপনার শুশ্রূষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জান না, যদি  তুমি তার শুশ্রূষা করতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?’ ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাও নি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, তুমিতো বিশ্ব পালনকর্তা, তোমাকে আমি কীভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জান না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাও নি। তুমি কি জান না যে, তুমি যদি তাকে আহার করাতে তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?’ ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, তুমি তো রাব্বুল আলামীন তোমাকে আমি কীভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ (মুসলিম হাদিস নং-৬৭২১)

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ,  জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

 

Wordbridge School
Link copied!