• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নৈতিক অবক্ষয় রোধে পরিবারের গুরুত্ব


আব্দুর রউফ জানুয়ারি ২০, ২০২১, ০২:৩৩ পিএম
নৈতিক অবক্ষয় রোধে পরিবারের গুরুত্ব

ঢাকা : পরিবার হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে নির্ধারিত হয় একটি শিশু কেমন মানুষিকতা নিয়ে বেড়ে উঠবে। সাধারণত পারিবারিক শিক্ষার ওপর নির্ভর করে একজন শিশুর মানুষিক বিকাশ। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আচার-আচারণ, বৈশিষ্ট্য, অভ্যাস সব কিছুুর প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বেড়ে ওঠে। বলা হয়, একটি শিশুর পৃথিবীতে আগমন করার পর তার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো পরিবার। আর সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হলো পিতা-মাতা। তাই উন্নত চরিত্র গঠনে সব চেয়ে পিতা-মাতাকে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। পরিবার, পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী কমবেশি সব কিছুুর প্রভাব পড়ে একজন শিশুর মনন বিকাশে। তাই সন্তান জন্ম হওয়ার পরপরেই অতি আদরে তাকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। শাসনের লাঠিটা সব সময় হাতেই রাখতে হবে। কোনোভাবেই যেন সন্তান বিপথগামী না হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে পরিবারকে।

মাঝে মাধ্যেই পত্রিকার পাতায় বেশ অবাক করা সংবাদে চোখ আটকে যায়। সন্তানের হাতে পিতা অথবা মাতা খুন! অথবা তথাকথিত শিক্ষিত ছেলে তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে। নয়তো পরিবারের অন্য সদস্যদের ঠকিয়ে পিতা-মাতার সব জমি নিজের নামে লেখে নিয়েছে। এমন শিরোনামে আমরা যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এই ঘটনাগুলো আমাদের মনে এতটুকু দাগ জন্মায় না। অথচ একটা সময়ে আমাদের দেশে এসব ঘটনা কালে-ভদ্রে ঘটতো। এখন তো এমন ঘটনা পান্তা-ভাতের মতো। তারপরেও আমাদের কোনো অভিভাবক শিক্ষাগ্রহণ করছে না; বরং তথাকথিত আধুনিকতার নামে সন্তাদের অবাধ স্বাধীনতায় ছেড়ে দিয়েছে। এর ফলস্বরূপ নিজেদের একদিন বৃদ্ধাশ্রমের অংশীদার তৈরি করছে। আমি আগেই বলেছি পিতা-মাতা সন্তানের সামনে যেমন আচরণ করবে তেমন আচরণ শিখবে সেই সন্তান। আপনি যদি আপনার সন্তানের সামনে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সাথে খারাপ আচরণ করেন তাহলে বড় হয়ে সেই সন্তান আপনার সাথে অসৎ আচরণ করবে এটাই সত্য। আপনি যদি বয়স্ক, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের সাথে খারাপ আচরণ করেন তাহলে সেই সন্তান এমন আচরণই শিখবে।

সন্তানদের তথাকথিত শিক্ষিত করে গড়ে না তুলে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। ভালোবাসা, মূল্যেবোধ, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, নৈতিকতার শিক্ষা সন্তানকে পরিবার থেকেই দিতে হবে। আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাও সন্তানকে দিতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মানুষকে মানবিক করে গড়ে তোলে। তাই একমাত্র ধর্ম পারে মানুষকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে। পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি পিতা-মাতাকে সন্তানের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। সে কার সাথে মিশছে, কেমন পরিবেশে চলাফেরা করছে, বন্ধু-বান্ধব কেমন স্বভাবের, রাতে কখন বাড়িতে ফিরছে ইত্যাদি বিষয়ে গভীরভাবে খেয়াল রাখতে হবে।

এখন নতুন সমস্যা যুক্ত হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির ব্যবহার। তাই সন্তানকে হাতে স্মার্ট ফোন দেওয়ার আগে তার ব্যাবহারবিধি নিশ্চিত করতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি কতটা ভালো কাজে ব্যবহার করছে সেই দিকে পূর্ণ খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান যেন মোবাইল গেমে আসক্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাদের সাথে বন্ধুত্ব করছে, কাদের সাথে বেশি কথা বলছে তার খোঁজখবর পিতা-মাতাকেই রাখতে হবে। কারণ প্রযুক্তি-সহায়তায় অনেকে উগ্র, ধর্মান্ধ, বিভিন্ন অপরাধী গোষ্ঠীর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। কোনো ভাবেই আপনার সন্তান কোনো সন্ত্রাসী বা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে না পড়ে সেই দায়িত্ব পরিবারকে নিতে হবে। তাই পারিবারিক শিক্ষা হোক, সহজ, সাবলীল ও ভালোবাসায় ভরপুর। অতি স্বাধীনতা বা অতি কঠোরতা কোনোটিই যেন সন্তানের ওপর চাপিয়ে না দেওয়া হয়। সন্তানের মতামতকে গুরুত্বসহকারে শুনতে হবে। কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতে হবে। যেটুকু শাসন না করলে সন্তান বিপথে চলে যাবে সেটুকু শাসন করতে হবে। প্রতিটি সন্তান তার পরিবার থেকে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা নিয়ে মানবিক মানুষ হয়ে বেড়ে উঠুক সেই প্রত্যাশা রইল।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]

 

Wordbridge School
Link copied!