ঢাকা : বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে বছরের বিভিন্ন সময়ে হরেক রকম দিবস উদযাপিত হয়ে থাকে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিবসের সাথে আমাদের সমাজের যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণীরা বেশ পরিচিত। ১৪ ফেব্রুয়ারি আসলে তরুণ শ্রেণির কিছু ছেলে-মেয়েরা এ দিবস উদযাপন করার জন্য তারা বিভিন্নভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
প্রশ্চিমা কিছু অপসংস্কৃতি মুসলমানদের ফুলের মতো চরিত্রকে ধূলিসাৎ করার জন্য যুবসমাজকে বিপদগামী করার জন্য নানা ধরনের আয়োজন করে যাচ্ছে। বিভিন্ন চাকচিক্যের মাধ্যমে যুবকদের বিপদগামী করছে। অন্যায়ের পথে তাদেরকে অগ্রসর করছে। মুসলমানদের এ দেশে এক ধরনের সাংস্কৃতিক আমদানি করছে ইসলাম বিদ্বেষীরা। এ দিবসের প্রচলনের মাধ্যমে যুবসমাজকে বিবাহপূর্ব অবৈধ নর-নারীর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশ এবং মুসলিম দেশসমূহের রাজধানীগুলোতে ইতঃপূর্বে এই ধরনের কোনো দিবস পরিচিত ছিল না। মানুষ পালন করত না ভ্যালেন্টাইনসডে বা ভালোবাসা দিবস। সম্প্রতি কয়েক বছর থেকে দেখা যায় কিছু পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও মিডিয়াগুলো এই দিবসের প্রচার-প্রসার করছে। যুবসমাজকে তারা উস্কে দিচ্ছে বিজাতীয় সংস্কৃতি চর্চার আগ্রহে।
প্রায় তিন থেকে চার বছর আগে এক জরিপে জানা যায়, শহরের দোকানগুলোতে একটি ফুলও কেনার বাকি ছিল না। সবগুলো ফুল দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয়ে গেছে। সেদিন দোকানগুলো হরেক জাতের ফুল দিয়ে সাজানো ছিল। ক্রেতার ফুল কেনার উপচেপড়া ভিড় থাকায় ফুলগুলোর দাম ছিল সেদিন বেশ চড়া। ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস-ডে উপলক্ষ করে ছেলে-মেয়েদের মাঝে ঘটে যাচ্ছে অবাধ মেলামেশা। যা ইসলাম আদৌ সমর্থন করে না। এই ভালোবাসা দিবসে সারা দেশে চলে জিনা-ব্যভিচারের মতো গর্হিত কাজ। মুসলমানদের দেশে এমন গর্হিত কাজ হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। এ দিবস পালন করার ব্যাপারে ইসলামে কোনো সমর্থন পাওয়া যায় না। কোরআন ও সুন্নাহের আলোকে তথাকথিত এই ভালোবাসা দিবস উদযাপন বৈধ নয়। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার এরশাদ করেন, তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দপথ। (সুরা বনী ইসরাঈল, আয়াত-৩২) আয়াতে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদেরকে ব্যভিচারের নিকবর্তী হতে নিষেধ করেছেন। ব্যভিচার তো দূরের কথা; এর ধারে কাছে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং আয়াত দ্বারা বিষয়টি একেবারেই দিবালোকের মতো অনুমেয়। কিন্তু আজ মুসলমানরা এসব আয়াত বা আয়াতাংশ থেকে দূরে সরে আছে। যার কারণে সমাজের দিকে সূক্ষ্মভাবে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, জিনার উপকরণ বানানো দিন দিন বাড়ছে। ফলে মানুষের চরিত্রকে নোংরা করার জন্য পাপাচার অশ্লীলতা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে যাচ্ছে সর্বত্র।
সমাজকে সুরক্ষা রাখা সব মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। সব মন্দ কাজ থেকে যুবসমাজকে সুরক্ষা রাখা সব মুসলমানের কর্তব্য। সমাজের যুবক সম্প্রদায় যখন পূত পবিত্র হয়ে যাবে, তখনই সমাজ থেকে বিদায় নেবে অনাচার ও পাপাচার। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কারো মাথায় যদি লোহার সুঁচ দিয়ে আঘাত করা হয়। তবে সেই আঘাতের যন্ত্রণা তার জন্য উত্তম। এমন মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে, যাকে স্পর্শ করা তার জন্য জায়েজ নেই।’ (তাবারানী শরীফ) এই হাদিসের মাধ্যমে জিনা বা ব্যভিচার কত মারাত্মক জঘন্য কাজ তা প্রস্ফূটিত হয়। মাথার মধ্যে সুঁচ দিয়ে আঘাত করা উত্তম। এসব কথা তখনি বলা হয়, যখন মানুষ গুনাহের দিকে ঝুঁকে পড়ে বা গুনাহ থেকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিষয়টি সূক্ষ্মভাবে প্রতিটি নর-নারীর অনুধাবন করা উচিৎ। সাধারণত মানুষ যখন অনেক সুখে থাকে তখন তার স্রষ্টাকে ভুলে যায়। দিলে প্রভুর ভয় থাকে না। ফলে সে গুনাহের দরিয়ায় ভাসতে থাকে। এসব পাপাচার বর্জন করে আমাদের এখনই তওবা করা উচিৎ। অন্যথায় কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সব প্রকার গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন!
লেখক : আলেম, ছড়াকার, প্রাবন্ধিক







































