• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন নিয়ে জাপায় বিভক্তি


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৬, ২০২১, ০৪:১৯ পিএম
নির্বাচন নিয়ে জাপায় বিভক্তি

ঢাকা : সংসদের বিরোধী দল হলেও গত কয়েকটি নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে একজোট ছিল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এর আগের সংসদে রীতিমতো মন্ত্রিসভায় ছিল তাদের উপস্থিতি।
চলতি সংসদে মন্ত্রিসভায় জাপা নেতাদের ঠাঁই না হলেও বিরোধী দল হিসেবে তারা কতটা কার্যকর, সে প্রশ্ন থেকেই গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে জাপার অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে দলটির মধ্যেই দেখা গেছে বিভক্তি।

জাপা নেতাদের একাংশ বলছেন, সরকারের ‘অনুগত’ হয়ে জোটের রাজনীতি অব্যাহত রাখলে জাপা কাগজে-কলমে বিরোধী দলের মর্যাদা পেলেও তা দলের আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে। ফলে নিজস্ব ক্ষমতায় মাঠ ও নির্বাচনের রাজনীতি করার জন্য সরকারের জোট ভেঙে বেরিয়ে আসার জন্য এখন থেকেই কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

তবে দলের আরেকটি অংশের অভিমত, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচনই দলের জন্য বেশি ‘লাভজনক’। তারা সরকারের অংশ হয়ে থাকতে হলেও মহাজোটের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব ধরে রাখতেই বেশি আগ্রহী।

নেতাকর্মীরা বলছেন, গত বেশ কয়েকদিন ধরে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের জাপার কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জাপাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সবার কাছ থেকে মতামত নিয়েছেন তিনি।

অধিকাংশ নেতারা জাপার সাংগঠনিক অবস্থা সম্পর্কে বলছেন, জাতীয় পার্টি আগের মত শক্তিশালী নেই। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা ছাড়া উপায় নেই।

আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করে জাতীয় পার্টি ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩৪টি আসনে দলীয় এমপি পায়। ওই সময় সংরক্ষিত মহিলা আসন পেয়েছে ৬টি। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২১ জন দলীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। আর সংরক্ষিত মহিলা আসন পায় ৩টি।

একজন সংসদ সদস্য বৈঠকে আরো বলেছেন, জাতীয় পার্টি কি নতুন করে কোনো মেরুকরণ সৃষ্টি করতে চাইছে? যদি চেয়ে থাকে তাহলে তা পরিষ্কার করা উচিত।

এসব বিষয় নিয়ে দলটির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু বলেন, জাতীয় নির্বাচন হবে ২০২৪ সালে, তখন আমরা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেব। বর্তমানে জাপার পলিসি হচ্ছে জনগণের পক্ষে কথা বলা। এজন্য জাতীয় পার্টি সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির প্রভাবশালী একজন সংসদ সদস্য বলেন, জাপার চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতা আছেন যারা এককভাবে নির্বাচন করতে গেলে জামানত হারাবে। আর নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করতে হলে সেক্ষেত্রে দলটির সাংগঠনিক ক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে জাপা আঁতাত করতে গেলে দলটির বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

ঢাকা মহানগরের এক নেতা জানান, জীবিত এরশাদের সময়ও জাপার মধ্যে দুটি গ্রুপ ছিল। একটি গ্রুপ আওয়ামী লীগ ঘেঁষা, অপরটি বিএনপিপন্থী। এখনো তা-ই আছে। বিএনপির সঙ্গে জাপা জোট করবে তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে ওই জোট শেষ পর্যন্ত টিকবে তো? নাকি এরশাদ এবং রওশন এরশাদকে যেভাবে তারা অপমান করেছিলেন সেটি আবার ঘটবে। যেমন এরশাদ সাহেব একবার বিএনপির সঙ্গে জোট করতে গিয়েছিলেন। ওইসময় এরশাদ সাহেব মিন্টো রোডে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

পরে বেগম রওশন এরশাদ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে বলেছিলেন, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীক নয়, লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করবে।

জবাবে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, জাতীয় পার্টি কোনো প্রতীক না পেলে কুত্তা মার্কায় নির্বাচন করবে। বেগম রওশন ওই সময় মিন্টো রোড থেকে বাসায় ফিরে বিষয়টি এরশাদ সাহেব এবং দলীয় অন্যান্য নেতাদের জানিয়েছিলেন। পরে আর বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট হয়নি।

ওই নেতা আরো জানান, ওয়ান ইলেভেনের আগে তারেক রহমান এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর এরশাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে গিয়ে বিএনপি জোটে থাকার জন্য থ্রেট করেছিল। এরশাদ সাহেব পরে মহাজোটে অংশগ্রহণ করেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!