• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জোটগত রাজনীতিতে নতুনত্ব নিয়ে আসছে বিএনপি 


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৪, ২০২১, ০২:৪২ পিএম
জোটগত রাজনীতিতে নতুনত্ব নিয়ে আসছে বিএনপি 

ঢাকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের জোর তৎপরতা শুরু করেছে দলটি। নিজ দল ও জোটে ঐক্য সুদৃঢ় রাখার পাশাপাশি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছেন সিনিয়র নেতারা। বিএনপির এ উদ্যোগে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের একটি অংশ।

আরও পড়ুন: সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা তারেক রহমানের হাতে

জানা গেছে, আন্দোলন, ঐক্য, নির্বাচনকালীন নেতৃত্ব, ভোটে অংশগ্রহণ নিয়ে দলটির হাইকমান্ডের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনে জোটগত রাজনীতির প্রয়োজন ফুরিয়ে না গেলেও এতে নতুনত্ব আনার পক্ষে দলের শীর্ষ নেতারা।

আরও পড়ুন: একটি কৌশলে মিল দু’দলে
 
এদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে পুরোনো কয়েকটি শরিক দল ছেড়ে চলে গেলেও বিষয়টিকে বড় ঘটনা হিসেবে দেখছে না বিএনপি। কারণ যে লক্ষ্য নিয়ে খর্ব শক্তির রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট গঠন করা হয়েছিল, সে লক্ষ্য পৌঁছানোর পথ অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের প্রচণ্ড চাপে ২০ দলীয় জোটের ধর্মভিত্তিক প্রধান রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী একেবারেই নিষ্ক্রিয়। জোটের দ্বিতীয় শক্তিশালী দল ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে জোট ছেড়ে চলে যায়। তবে এ্যাডভেকেট আব্দুর রকিব ও অধ্যাপক আব্দুল করিমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের বৃহৎ একটি অংশ এখনো ২০ দলীয় জোটে সক্রিয় আছে। তৃতীয় শক্তিশালী দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও আড়াই মাস আগে ঘোষণা দিয়ে বিএনপি জোট থেকে বিদায় নিয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার জোট ছেড়ে গেল কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস।

আরও পড়ুন: অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটাতে কাজ শুরু করেছে আ.লীগ
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন এক পরিস্থিতিতে বিএনপি জোটের অপেক্ষাকৃত ‘দুর্বল’ ও ‘খর্ব শক্তি’র দল খেলাফত মজলিসের সরে যাওয়া বিএনপিকে খুব বেশি ভাবাচ্ছে না। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, প্রায় ২ বছর ধরে জোটে নিষ্ক্রিয় খেলাফত মজলিস জোট ছেড়ে চলে যাওয়ায় জোট এবং বিএনপির রাজনীতির ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কারণ এমনিতেই ২০ দলীয় জোট দীর্ঘদিন ধরে নিষ্ক্রিয়। সেই জোট থেকে কোনো শরিক দল যদি চলে যায়, তাতে জোট ও বিএনপির রাজনীতিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।

আরও পড়ুন : জামায়াতের মাস্টারপ্ল্যান ফাঁস

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোট নিষ্ক্রিয়। তাই রাজনৈতিক মাঠে এখন এ জোটের সক্রিয় অবস্থান নেই।  এ অবস্থায় নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নতুন জোট গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।

আরও পড়ুন: এবার আর হায়ারে খেলবে না বিএনপি

তিনি বলেন, এখন বৃহত্তর ঐক্য এবং আগামীর রাজনৈতিক কৌশল প্রণয়নে আমরা কাজ করছি। এ ধরনের স্বৈরাচারকে হটাতে হলে জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। সেটা কী ফরমেটে হবে তা সময়ের ব্যাপার। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নিরপেক্ষ নির্বাচন ইত্যাদি বলতে গেলে একটার সঙ্গে আরেকটা জড়িত। আমরা চার্টার তৈরি করব, সেখানে ন্যূনতম কিছু দফা একসঙ্গে থাকবে। এর আগে ২০ দল, ঐক্যফ্রন্ট, বাম দলসহ অন্য ছোট-বড় যেসব দল আছে তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করব। একই ফর্মুলায় যারাই আসবে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করা হবে।

আরও পড়ুন: রাজনীতিতে সংস্কারের হাওয়া

দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির হিসাব-নিকাশ বলছে, সামনে নানা কারণে রাজনীতির প্রেক্ষাপট পাল্টাবে। দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো দেশ হস্তক্ষেপ করুক তা বিএনপি চায় না। তবে দল এটাও বিশ্বাস করে, জনগণের কাছে এখন কোন দল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তা বহির্বিশ্বের শক্তিগুলো নিশ্চয়ই জানে। তাই সরকারের বিরুদ্ধে থাকা সব জনপ্রিয় বিরোধী দলকে এবার পাশে চান তারা। ‘সর্বদলীয় বিরোধী জোট’ নামে একটি প্ল্যাটফরম গড়তে ইতোমধ্যে বাম-ডানসহ বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ শুরু হয়েছে। ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ কিংবা ‘যুগপৎ’ যে কোনো প্রক্রিয়ার আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় দলটি।

আরও পড়ুন: ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা ঘোচাতে চায় নেতাকর্মীরা
 
প্রসঙ্গত,  জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৯৯৯ সালে জামায়াতে ইসলামী, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (জাপা) ও ইসলামী ঐক্য জোটকে সঙ্গে নিয়ে চার দলীয় ঐক্যজোট গঠন করে বিএনপি। এর কিছুদিন পরই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোট থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু নিজের সমর্থকদের নিয়ে জোটে থেকে যান জাপার মহাসচিব নাজিউর রহমান মঞ্জু। সেই সময় জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে ছিল-বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) ও ইসলামী ঐক্যজোট।

আরও পড়ুন: ঘর গোছানোর পাশাপাশি শরিক বাড়ানোর চিন্তা আ.লীগের

এরপর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল পুরোনো শরিকদের সঙ্গে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে বিএনপি। সেই সময় এই জোটের শরিক দল ছিল জামায়াতে ইসলামী, প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, আন্দালিভ রহমান পার্থ-র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমেদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি), সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাকের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস, শয়াখ আব্দুল মমিনের নেতৃত্বাধীন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, প্রয়াত এইচ এম কামরুজ্জামান খানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল), প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), ইসলামিক পার্টি, প্রয়াত শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী, জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল), পিপলস লীগ ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে প্রয়াত কাজী জাফর আহমেদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও কমরেড সাঈদ আহমেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের একটি অংশ বিএনপি জোটে যোগ দিলে তা ২০ দলীয় জোটে রূপান্তরিত হয়।

আরও পড়ুন: বাঁচা-মরার লড়াইয়ে ৪ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি
 
জোটের ভাঙন শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর। ওই বছর জুনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায় প্রয়াত শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ ভাসানী, আগস্টে বেরিয়ে যায় প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি জোট ছেড়ে দেয় প্রয়াত আব্দুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের একটি অংশ। দুই বছর পর ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে বিএনপি জোট ছেড়ে দেয় জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও বাংলাদেশ লেবার পার্টির একাংশ। এরপর ২০১৯ সালের ৬ মে বিএনপি জোট ত্যাগ করে আন্দালিভ রহমান পার্থ-র নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)। আর গত আড়াই মাসের ব্যবধানে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিস।

সোনালীনিউজ/আইএ
 

Wordbridge School
Link copied!