• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এবার দ্বিতীয় পদ্মা সেতু


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১৫, ২০২২, ০১:৩৪ পিএম
এবার দ্বিতীয় পদ্মা সেতু

ঢাকা : নতুন করে আলোর মুখ দেখছে দেশের দ্বিতীয় পদ্মা সেতু। ২০১৩ সালে কাজ শুরু হওয়া কথা ছিল। সাড়ে ৯ বছর পর বর্তমানে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌরুটে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজের সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি জানান, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের স্বপ্নে পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। দীর্ঘদিনের পর ৫ কোটি মানুষের মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। তেমনি নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পশ্চিমাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষ।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত দিয়ে। এই সেতু নির্মাণ নিয়ে যখন প্রথম আলোচনা, সে সময় এই পথে নাকি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে হবে, তা নিয়ে শুরুতে ছিল আলোচনা। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর মাওয়া হয়ে বানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এই সেতুর নির্মাণকাজ এগিয়ে যাওয়ার সময়ই সরকার দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বলে।

জাতীয় সংসদ অধিবেশনে গত সোমবার মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এসব তথ্য জানান তিনি ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নটি উত্থাপন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা।

লিখিত জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর পদ্মা সেতু প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ জুন এই সেতু উদ্বোধন করবেন।

সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে বছরে পৌণে ৫০০ কোটি টাকা আয় হবে। এ হিসেবে ১০ বছরে ৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল আদায়ের পরিমাণ ৭ হাজার ১৩৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। মুক্তারপুর সেতুর টোল আদায় হয়েছে ১৮৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে এই টাকা দিয়েই অর্থাৎ নিজস্ব অর্থায়নেও দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু সম্ভব বলে সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়।

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, নড়াইল, যশোরের সঙ্গে ঢাকাসহ পূর্বাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। বাস্তবায়নাধীন মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতু দিয়ে তাদের চলাচল করতে হবে না। ফলে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হবে এবং এ এলাকার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বহুগুণ বেড়ে যাবে।

দেশের মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৮ জেলার পদ্মানদী পারাপারে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানের চেয়ে মাওয়া-জাজিরা অবস্থান দিয়ে যাতায়তে বেশি সময় লাগবে।

দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হলে রাজধানীর ঢাকার সঙ্গে এবং দেশের পূর্বাঞ্চলের সাথে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও নড়াইলের একাংশ, গোপালগঞ্জ, যশোর এবং মাদারীপুর জেলার দূরত্ব কমানোর সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ পৌর মেয়র মো. রমজান আলী।

তিনি জানান, পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু নির্মাণ করা প্রয়োজন বলে চূড়ান্ত করেছিল সেতু বিভাগ। প্রথম পদ্মা সেতু যেমন প্রয়োজন তেমনি দ্বিতীয় পদ্মা সেতুরও প্রয়োজন বলে মানিকগঞ্জের জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. গোলাম মহিউদ্দিন জানান।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের দাবি পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু হোক। সেতু হলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৮ জেলাবাসীদের উপকার হতো। আমরা দ্রুত সময়ে রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম।

তিনি বলেন, সরকারই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া দ্বিতীয় পদ্মা নির্মাণ করার জন্য প্রকল্প নিয়েছিল। তিনি দ্রুত কাজ শুরু করার আহ্বান জানান।

তিনি আরো জানান, সেতু বিভাগ বলেছিল ২০১৩ সালের শুরুতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে ঝরে গেছে নয় বছর পাঁচ মাসের অধিক সময়। তারপরেও আলোর মুখ দেখেনি সরকারের প্রতিশ্রুতি দ্বিতীয় পদ্মা সেতু প্রকল্প। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার কারণে জনগণের ভিতরে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা ভাবছেন আদৌ কি এ প্রকল্প হবে না পিছিয়ে গেল? তবে নতুন করে সমীক্ষার কাজ শেষ হওয়ার খবরে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে পশ্চিমাঞ্চলের ৪ কোটি মানুষ।

২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবার কথা ছিল। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে দ্বিতীয় পদ্মা বহুমুখী সেতুর অর্থায়ন এবং নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয় গত ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর (শুক্রবার)।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের অধীনে এ দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু ১০ বছর ৪ মাসের অধিক সময়ের পর সাড়া পাওয়া গেল।

সেতুটি নির্মাণ প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৩টি জেলার প্রায় ৪ কোটি মানুষের যাতায়াতব্যবস্থাসহ তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহায়ক হতো বলে সংশ্লিস্ট মহলের অভিমত ছিল।

এছাড়া গত ও বর্তমান সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারেও পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে ২য় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টি উল্লেখ ছিল। পদ্মানদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য জাপান-ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি ( জাইকা)’র প্রথম সমীক্ষা করে প্রাথমিক পর্যায়ে পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য সুবিধাজনক স্থান হিসেবে চিহ্নিত করে।

প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) ও উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি) গত ২০০৯ সালের ২৬ আগস্ট মাসে পরিকল্পনা কমিশন নীতিগতভাবে অনুমোদন করে। প্রকল্পটি নীতিগত অনুমোদনের পর বিশ্বব্যাংক, চীনসহ অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহকে অর্থায়নের বিষয়ে অনুরোধ জানানো সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি বলে দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সচিব মো. নজরুল হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায় না। তবে সেতু বিভাগের অ্যাডিশনাল ডাইরেক্টর (প্রশাসন) মো. মনিরুল আলম বলেন, প্রথম পদ্মা সেতু চালুর পর দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর একটি পরিকল্পনা আমাদের আছে। বর্তমানে সমীক্ষার কাজও শেষ হয়েছে।

ছয় দশমিক এক কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ১২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর এ পিডিপিপি অনুমোদন করে। সেতুর নির্মাণ ব্যয় বহনের জন্য ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয় সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!