• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট কাটবে কবে?


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৪, ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট কাটবে কবে?

ঢাকা : পৌনে এক লাখ শিক্ষক পদ শূন্য থাকায় সংকটে পড়েছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো; অথচ দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই পড়াশোনা করে এসব প্রতিষ্ঠানে।

এ সংকট কাটাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিপুল সংখ্যক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। তবে প্রবেশ পর্যায়ের (সহকারী শিক্ষক/প্রভাষক) বিজ্ঞাপিত সেসব পদ পূরণ হয়েছে অর্ধেকের মত।

এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকটি বিষয়ে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা যেমন কম, তেমনই কিছু পদে কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী না পাওয়ায় এ সংকট উৎরানো যাচ্ছে না। তাছাড়া মাদ্রাসার কয়েকটি বিষয়ে প্রার্থীদের পাসের হার একেবারেই কম।

বিজ্ঞাপিত শূন্যপদ অনুযায়ী তেমন প্রার্থী না মিললেও ফের বড় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রস্তুতি শুরু করেছে এনটিআরসিএ। আগামী বছরের প্রথমার্ধে প্রকাশিতব্য ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ শূন্য পদে আবেদন চাওয়া হতে পারে।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, গেল মার্চ পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা মিলিয়ে এমপিওভুক্ত ৩১ হাজার ৮২৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক পদ শূন্য ছিল ৭৭ হাজারের বেশি। আরও শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে, যার সময় শেষ হবে আগামী ১৭ নভেম্বর।

‘যোগ্য ও দক্ষ’ শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৫ সালে। সময়ের পরিক্রমায় ক্ষমতা বাড়লেও চাহিদা মত শিক্ষক সরবরাহ করতে পারছে না সংস্থাটি।

বছরের পর বছর এ সংকট চলায় শেষ বিচারে যে শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা মানছেন বিভিন্ন শিক্ষালয়ের প্রধানরা।

ফেনীর ছাগলনাইয়ার পূর্ব দেবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৬টি পদের মধ্যে ছয়টিই শূন্য। এগুলোর মধ্যে চারটি ২০২১ সালের মার্চ থেকে, একটি ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এবং অপরটি চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শূন্য রয়েছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী বলেন, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ের (পদটির বর্তমান নাম ভৌতবিজ্ঞান), সামাজিক বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কৃষি, শারীরিক শিক্ষা এবং চারু ও কারুকলার শিক্ষক পদ শূন্য আছে।

এর মধ্যে সামাজিক বিজ্ঞানের সহকারী শিক্ষক পদটি চলতি বছরের শুরু থেকে শূন্য থাকায় খুব অসুবিধা হচ্ছে, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সমস্যা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকের সাতটি পদ শূন্য। এর মধ্যে ছয়টি পদ ২০২০ সাল থেকেই শূন্য, আরেকটি গত বছরের মে মাস থেকে খালি রয়েছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম ফরিদ উদ্দিন বলছিলেন, ইবতেদায়ী পর্যায়ের মৌলভীর দুটি, দাখিল পর্যায়ের ভৌতবিজ্ঞান পদ শূন্য আছে। আর আরবি, বাংলা, অর্থনীতি, লাইব্রেরি সায়েন্স বিষয়ের প্রভাষক পদ শূন্য।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতগুলো শিক্ষক পদ শূন্য থাকলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা কঠিন। কিন্তু কমিটি অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় আমরা খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালাচ্ছি।

নিয়োগ হয় যেভাবে : বেসরকারি স্কুল-কলেজে শিক্ষক হতে চাইলে অবশ্যই শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সনদ থাকতে হয়। একসময় ওই সনদধারীদের মধ্য থেকে শিক্ষক নিয়োগের যাবতীয় কাজ করত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা পর্ষদ।

স্থানীয় সাংসদ বা উপজেলা চেয়ারম্যানদের নেতৃত্বাধীন এসব পর্ষদের বিরুদ্ধে ‘নিয়োগ বাণিজ্য’সহ নানা অভিযোগ উঠতে থাকে।

এই বাণিজ্য ঠেকাতে ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধন করে। তাতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আসে।

ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর নতুন নিয়মের পরিপত্র জারি করা হয়; যাতে বলা হয়-এনটিআরসিএ প্রতিবছর মেধার ভিত্তিতে যে প্রার্থীকে সুপারিশ করবে, তাকেই নিয়োগ দিতে হবে পরিচালনা পর্ষদকে। ফলে নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ আর থাকেনি পরিচালনা পর্ষদের হাতে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধন সনদ পেতে প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে অন্তত ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হয়।

বর্তমানে নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ৩ বছর; এ সনদধারীরা ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত ১০০০ টাকা ফি দিয়ে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। এ আবেদনে একজন প্রার্থী নিজ বিষয়ে ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিতে পারেন।

নিবন্ধন পরীক্ষায় ওই প্রার্থীর পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে তাকে ওইসব প্রতিষ্ঠানের একটিতে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। সুপারিশপত্র নিয়ে প্রার্থীরা নির্বাচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগদান করে থাকেন।

সংকট নতুন নয় : শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার পর ২০১৬ সালে প্রথমবারের মত ১৩ হাজার ৬৬৭ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।

দুই বছর বাদে ২০১৯ সালে ৩৯ হাজার ৫৩৫টি শূন্যপদে গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও সুপারিশ করা হয় ৩১ হাজার ৬৬৫ জনকে।

বাকি থাকা শূন্যপদের সঙ্গে যোগ হয় অবসরগ্রহণ ও মৃত্যুবরণকারী শিক্ষকের সংখ্যাও। ২০২১ সালের শুরুতে শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৪ হাজার।

ওই বছরে তৃতীয় ধাপের নিয়োগে সুপারিশ করা হয় ৩৫ হাজার ১২৭ জনকে। তবে ২০২২ সাল শেষে শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮ হাজারে।

সে বছর বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৩ হাজার ৮৪৪ জনকে এবং ২০১৯-২৩ সালে সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অধীনে স্কুল ও মাদ্রাসায় কারিগরি বিষয়ের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে ১ হাজার ২২২ জনকে নিয়োগে সুপারিশ করা হয়।

২০২৩ সালেই চতুর্থ ধাপে ২৭ হাজার ৮৪৬ জনকে নিয়োগ দিতে সুপারিশ করে কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের শুরুতে শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৬ হাজার ৭৩৬।

এসব পদে নিয়োগ সুপারিশে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হলেও যোগ্য প্রার্থী সংকটে তা পূরণ হয়নি। এই ধাপে মোট ২২ হাজার ২১ জনকে নিয়োগে সুপারিশ করে এনটিআরসিএ।

আদালতের নির্দেশে নিবন্ধিতদের সনদের মেয়াদ তিন বছর ঠিক হওয়ায় পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায় থাকা লক্ষাধিক প্রার্থীর সনদ বাতিল হয়ে যায় এ বছরের শুরুতে। সবমিলিয়ে ৭৭ হাজারের মতো পদ বর্তমানে ফাঁকা রয়েছে।

আসছে বড় নিয়োগ : ২০১৬ সাল থেকে গেল ৮ বছরে মোট এক লাখ ৩৫ হাজার ৩৯২ জনকে নিয়োগে সুপারিশ করেছে এনটিআরসিএ।

সংস্থাটির কর্মকর্তারা বলছেন, যোগ্য প্রার্থী সংকটের কারণেই বিজ্ঞাপিত পদ পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। নতুন প্রার্থী পেতে এখন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থী প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। গত ২৭ অক্টোবর থেকে তাদের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

এনটিআরসিএ সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক বলেন, তাদের ভাইভা শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। …এর মধ্যে কিছু হয়ত বাদ যাবেন।

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণরা ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ পাবেন। আমরা আশা করছি, ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক নিয়োগের পর শূন্যপদের যে আধিক্য এতোদিন ছিল তা থাকবে না।

শূন্যপদ পূরণে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি কবে জারি করা হতে পারে, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “ভাইভা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে। এর আগে হলে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া যাবে না।

আগামী বছর এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি হবে। তবে সম্ভাব্য মাস বা দিনক্ষণ এখনই বলা যাচ্ছে না।

২০২৫ সালের প্রথমার্ধে এ বিজ্ঞপ্তি জারি হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন তিনি।

এবার কত পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি আসতে পারে, এ প্রশ্নের উত্তরে সচিব রিজওয়ানুল বলেন, এখন আমরা শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করছি। এ প্রক্রিয়া শেষে বলতে পারব- কতগুলো শূন্যপদে ওই গণবিজ্ঞপ্তিটি জারি হবে।

পঞ্চম ধাপে (চক্রে) সুপারিশের পর যেসব পদ ফাঁকা রয়েছে, তার সঙ্গে নতুন করে শূন্য হওয়া পদ যোগ করে ওই বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু করেছে এনটিআরসিএ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগামী তিন বছরের জন্য শূন্যপদের তথ্য ১৭ নভেম্বরের মধ্যে দিতে বলা হয়েছে।

রিজওয়ানুল বলেন, গণবিজ্ঞপ্তি জারির জন্য আমরা ৩ বছরের শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করছি। গণবিজ্ঞপ্তি জারির আগে যে পদগুলো শূন্য হবে, সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে ষষ্ঠ চক্রে (ধাপে) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাব।

একবারে ৩ বছরের জন্য শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, মূলত এর পরের শিক্ষক নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় কতজন প্রার্থীকে কোন কোন বিষয়ে উত্তীর্ণ করার সুযোগ আছে, সে বিষয়ে ধারণা নিতেই ৩ বছরের শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পদ পূরণ হচ্ছে না কেন?

শূন্যপদে নিয়োগের জন্য সুপারিশের কাজ করে এনটিআরসিএর শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান অনুবিভাগ।

সেখানকার পরিচালক কাজী কামরুল আহছান বলেন, চারু ও কারুকলা, ভৌতবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, কলেজের আইসিটি লেকচারার, মাদ্রাসার সহকারী মৌলভী, ইবতেদায়ীর মৌলভী পদে পর্যাপ্ত প্রার্থী না পাওয়ায় আগের গণবিজ্ঞপ্তিগুলোতে বহুপদ শূন্য থেকে যায়।

একই অনুবিভাগের সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহমেদের ভাষ্য, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চারু ও কারুকলার ৫ হাজারের বেশি পদ শূন্য থাকলেও ১১টি আবেদন পাওয়া গিয়েছিল। সহকারী মৌলভীর ৮ হাজারের বেশি পদ শূন্য থাকলেও মাত্র ৪ হাজার পদে প্রার্থী সুপারিশ করা গিয়েছিল।

ওই নিয়োগে ভৌতবিজ্ঞানের পদ শূন্য ছিল ১০ হাজারের বেশি, কিন্তু সুপারিশ পান ১ হাজার ৮০০ জনের মত প্রার্থী। আইসিটি বিষয়ের সহকারী শিক্ষকের ৭ হাজার পদ শূন্য থাকলেও মাত্র ১ হাজার ৩০০ জনের মত প্রার্থীকে নিয়োগ সুপারিশ করা গিয়েছিল।

চারু ও কারুকলা ও আইসিটি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদের জন্য নিবন্ধন পরীক্ষাতেই প্রার্থী কম পাওয়া যায় বলে জানান তিনি।

বর্তমানে মহানগর ও জেলা পর্যায়ের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪০ শতাংশ ও অন্যান্য এলাকায় ২০ শতাংশ নারী শিক্ষক নিয়োগ বাধ্যতামূলক। তবে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, হাওর এলাকা, ছিটমহল ও চরাঞ্চলে এ বিধান শিথিলের সুযোগ রয়েছে।

পরিচালক কাজী কামরুল আহছান বলেন, মহিলা কোটার পদগুলো পূরণ হয় না। মফস্বল অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারী প্রার্থীরা নিয়োগ সুপারিশ পেলেও যেতে চান না। তারা স্বামীর কর্মস্থলের জেলার প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সুপারিশ পেলে যোগদান করেন।

তবে মহিলা কোটা পূরণ না করে ওই পদে পুরুষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে ওই পুরুষ শিক্ষক এমপিওভুক্তও হতে পারেন না। মহিলা কোটার পদটি যেন মহিলারা পায় তা নিশ্চিত করা হয়। তাই চাইলেও ওই পদগুলো পূরণ করা যায় না। ফলে পদগুলো খালিই থেকে যায়।

তিনি বলেন, আবার অনেকে সুপারিশ পেলেও প্রতিষ্ঠানের অবস্থান বিবেচনায় যোগদান করতে চান না। কেউ কেউ যোগদান করেও পরে অন্য চাকরিতে চলে যান।

শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান অনুবিভাগের পরিচালক কামরুল বলেন, শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হয়- বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও সাধারণ জ্ঞানের ওপর। তবে মাদ্রাসার কয়েকটি বিষয়ের আবেদন করা প্রার্থীরা প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হতে বাধ্যতামূলক ৪০ শতাংশ নম্বর পান না।

তাই ওই বিষয়গুলোতে উত্তীর্ণ প্রার্থীই কম পাওয়া যায়। সে পদগুলোও তাই পূর্ণ হয় না। যেমন- সহকারী মৌলভী, ইবতেদায়ী মৌলভী, আরবি প্রভাষক, হাদিস প্রভাষক, ফিকাহ্ প্রভাষক, আদিব প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা কম।

তিনি বলেন, আবার আইসিটি বা জীববিজ্ঞানের মত বিষয়গুলোতে শিক্ষক নিবন্ধনে আবেদনই কম পাওয়া যায়। তাই ওই পদগুলোতেও প্রার্থীরা শিক্ষক পদে নিবন্ধিত হতে কম আবেদন করেন।

সংকট শিগগিরই ‘কাটবে না’ : শিক্ষক সংকট কাটাতে আগামী বছর প্রায় এক লাখ শূন্যপদের যে গণবিজ্ঞপ্তি আসছে, সেই নিয়োগ সম্পন্ন করার পরও অন্তত ৩৫ হাজারের বেশি শিক্ষক পদ শূন্যই থাকবে বলে স্বীকার করেছেন এনটিআরসিএর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, কয়েকটি বিষয়ে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা, বিষয়ভিত্তিক উত্তীর্ণ প্রার্থীর সংখ্যা ও পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে যে পদগুলো শূন্য ছিল- সেগুলোর মধ্যে ফারাক রয়েছে।

ওই পদগুলোতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থী ভাইভায় উত্তীর্ণ হয়ে যদি নিয়োগ সুপারিশ পান, সেক্ষেত্রেও ৩৫ হাজারের বেশি পদ খালি থাকবে।

ওই কর্মকর্তার ভাষ্য, ভৌতবিজ্ঞান, সহকারী শিক্ষক আইসিটি, সহকারী শিক্ষক গণিত, ইবতেদায়ী মৌলভী, সহকারী মৌলভী- এমন বেশ কয়েকটি বিষয়ের পদে এমন অবস্থা। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীর থেকে শূন্যপদ বেশি।

আবার লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব প্রার্থী ভাইভায় উত্তীর্ণ হবে- এমনটাও নয়। ন্যূনতম যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে পারলেই প্রার্থীরা নিবন্ধিত হবেন।

যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা : এনটিআরসিএ সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক ফোরামের (বাশিফ) সভাপতি হাবিবুল্লাহ্ রাজু শিক্ষক সংকট পরিস্থিতির জন্য এনটিআরসিএকেই দুষছেন।

তিনি বলেন, একদিকে প্রিলিমিনারি, রিটেন ও ভাইভা- তিন ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও একজন প্রার্থীকে এনটিআরসিএ চাকরি দিতে পারে না; অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রচুর পদ ফাঁকা। এটি আসলে সমন্বয়ের অভাব।

শিক্ষক নিবন্ধনের প্রক্রিয়া থেকে নিয়োগের সুপারিশ পর্যন্ত সবকটি ধাপ শেষ হতে কয়েক বছর সময় লেগে যায়। ফলে অনেক প্রার্থী অন্য পেশায় চলে যান, আর শিক্ষক পদ শূন্যই থেকে যায়।

পাবনার সুজানগরের খলিলপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাবিবুল্লাহ্ রাজু বলেন, নিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা ও জটিলতাকে কমিয়ে প্রক্রিয়া সহজ করতে পারলে একদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদগুলো পূরণ হয়ে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে, অপরদিকে মেধাবী বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে বলে আমার বিশ্বাস।

এজন্য এনটিআরসিএকে কমিশনে রূপান্তর করা যেতে পারে।

১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রার্থী এখলাসুর রহমান রিজু বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে আনলে শিক্ষার্থী ও প্রার্থী- সবাই উপকৃত হবে।

২০১৫ সালের শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে নতুন নিয়ম চালু করেছিল- তাতে এনটিআরসিএকে প্রতিবছর শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করতে বলা হয়েছিল। বাস্তবে সেটি কার্যকর না হলেও গত ২৫ জানুয়ারি জারি করা এক পরিপত্রে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে ৩ মাস অন্তর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা যাবে।

তবে ‘যোগ্য প্রার্থী না থাকায়' এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন এনটিআরসিএ সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক।

এনটিআরসিএ কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৫ সালে চালুর দেড় যুগ পর এসে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা উঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বদলে যাচ্ছে এনটিআরসিএ-ও। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষকে (এনটিআরসিএ) বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও নির্বাচন কর্তৃপক্ষ নামে পরিবর্তন করতে চাচ্ছে সরকার।

আর এজন্য বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন বাতিল করে নতুন আইনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে নতুন আইনের খসড়াও প্রকাশ করা হয়েছে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, নতুন এ আইন অনুসারে শিক্ষক নিবন্ধন নয়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে আগ্রহীদের বসতে হবে নিয়োগ পরীক্ষায়। পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শূন্যপদের বিপরীতে প্রার্থীদের সরাসরি নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হবে।

এ আইন হলে শিক্ষক সংকট অনেকটাই কমবে বলে মনে করেন এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, আমাদের আইনটি (বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০০৫) সংশোধনের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।

সেটি সংশোধন হয়ে জারি হলে শূন্যপদের বিপরীতে পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি নিয়োগ পাবেন প্রার্থীরা। সেক্ষেত্রে এ ধরনের জটিলতা (শিক্ষক সংকট) কমবে বলে আশা করি। সূত্র : বিডিনিউজ

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!