• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে, ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১
বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপের সাফল্য

সহজেই নতুন দল নির্বাচন করতে পারবে বিসিবি


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২২, ২০২০, ০৫:২৪ পিএম
সহজেই নতুন দল নির্বাচন করতে পারবে বিসিবি

ফাইল ছবি

ঢাকা : করোনাবিষয়ক জটিলতার কারণে শ্রীলঙ্কা সফর হলো না। হতাশা নেমে এসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। অনেক আশা করে অনুশীলন করেন খেলোয়াড়রা। কিন্তু লঙ্কানদের শর্ত মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা যাওয়া বাতিল করতে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। সফর বাতিল হলেও বিসিবি একটি ভালো পদক্ষেপ নেয়। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ আসরের আয়োজন করে। ওই আসর শুরুর আগে কেউ কেউ ধারণা করেছিলেন, করোনাকালে এটা অযথা খেলোয়াড়দের মাঠে নামানো। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, অভ্যন্তরীণ আসরে বিদেশি খেলোয়াড় না থাকায় এটা আকর্ষণীয় হবে না। 

তবে কেউ কেউ ভেবেছিলেন, করোনায় খেলা বন্ধ ছিল বলে আসরটিতে একটা ক্রিকেট চর্চা তো হবে। শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কাপ অত্যন্ত সফলতা পেয়েছে এবং এতে খেলোয়াড়দের বড় ধরনের চর্চা হয়েছে। বলতেই হয়, আমাদের চাওয়ার চেয়েও পাওয়ার পরিমাণ বেশি। এমন একটি আসরের জন্য বিসিবি ধন্যবাদ পেতেই পারে।

টুর্নামেন্টের ফাইনালের পর বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন গর্ব করে বলেন, বিপিএলের চেয়েও আকর্ষণীয় হয়েছে বঙ্গবন্ধু কাপ। 

পাপন হয়তো আবেগের বশবর্তী হয়ে খানিকটা বেশিই বলেছেন। কিন্তু এ কথা মানতেই হবে, বঙ্গবন্ধু কাপের প্রতিটি ম্যাচ ছিল কঠিন লড়াইয়ের। বিশেষ করে ফাইনাল ম্যাচটি ছিল রুদ্ধশ্বাসের ব্যাটে-বলের অসাধারণ লড়াই। মাত্র ৫ রানের ব্যবধানে ঢাকাকে হারিয়ে শিরোপা জেতে খুলনা। 

বঙ্গবন্ধু কাপে যেসব ইতিবাচক দিক ছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো, মোস্তাফিজুর রহমানসহ তরুণ বোলারদের দারুণ ফর্ম প্রদর্শন, দীর্ঘদিন পর প্রতিযোগিতামূলক আসরে ফিরেই সাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজার মানিয়ে নেওয়া, লিটন দাস, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো খেলোয়াড়রা প্রমাণ করলেন ‘অভিজ্ঞতার মূল্য আছে’, নতুনদের উঠে আসা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ দলের ওপেনিং ব্যাটিং জুটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা চলছে। মনে হচ্ছে এই আসরের মধ্য দিয়ে লিটন ও তামিম দারুণ ব্যাটিং করে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করলেন। লিটন ১০ ম্যাচে ৪৯.১২ গড়ে মোট ৩৯৩ রান করেছেন তিনটি ফিফটিসহ। তামিম ৯ ম্যাচে ৪০.৫ গড়ে মোট ৩২৪ রান করেছেন দুটি ফিফটিসহ। তামিম ও লিটন সাফল্য ধরে রাখতে পারলে উপকৃত হবে বাংলাদেশই। এ ছাড়া নাজমুল হোসেন শান্ত (১০৯) মোহাম্মদ নাইম (১০৫) ও আনিসুল ইসলাম ইমন (১০০) সেঞ্চুরি করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরিও ইতিবাচক দিক। 

এ আসরের ‘কাটারমাস্টার’ মোস্তাফিজ অসাধারণ বোলিং করে ১০ ম্যাচে ২২টি উইকেট পেয়ে টুর্নামেন্টসেরা হয়েছেন। মোস্তাফিজের ফর্ম দারুণ ইতিবাচক বিষয়। এছাড়া মুক্তার আলীর ১৭টি, কামরুল ইসলাম রাব্বির ১৬টি, শরিফুল ইসলামের ১৬টি, শহিদুল ইসলামের ১৫টি এবং রবিউল ইসলাম রবির ১৩টি উইকেট লাভে বাংলাদেশের বোলিং সাইডের দুর্বলতা লাঘব করবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

এছাড়াও শামিম হোসেনের ১২টি ক্যাচ লুফে নেওয়া, উইকেটকিপার হিসেবে মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাসের ১০টি করে ডিসমিসাল, আল আমিনের ইকোনমিক বোলিং রেট ৫.০২ এবং নাজমুল হোসেন শান্তর ২১টি, মোহাম্মদ নাইমের ১৯টি ও ইমনের ১৫টি ছক্কা হাঁকানোও লক্ষণীয় বিষয়। বঙ্গবন্ধু কাপ না হলে এসব কৃতিত্ব আমরা দেখতে পেতাম না। এখন বিসিবি এই টুর্নামেন্টে পাওয়া সাফল্য থেকে সহজেই নতুন করে দল নির্বাচন করতে পারবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।

একনজরে সেরা একাদশ :

১. লিটন দাস (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম- উইকেটরক্ষক) : এ আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক লিটন দাস। চট্টগ্রামের ফাইনালে ওঠার অন্যতম কারিগর তিনি। ১০ এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ৩টি ফিফটিসহ করেছেন মোট ৩৯৩ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৭৮ রান। স্ট্রাইকরেট ১১৯.৩৪। উইকেটরক্ষক হিসেবে ৮টি ক্যাচ নেওয়ার সাথে সাথে ২টি স্ট্যাম্পিং করেছেন লিটন।

২. নাজমুল হোসেন শান্ত (মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী) : লিটনের সঙ্গী হিসেবে ওপেনিংয়ে রাখা হয়েছে শান্তকে। রাজশাহী প্লে-অফে উঠতে না পারলেও শান্তর ব্যাটে রানের ফোয়ারা ছিল। ৮ ম্যাচে ৩০১ রান করেছেন এই ওপেনার। আসরের প্রথম সেঞ্চুরিও আসে তার ব্যাট থেকেই। তাছাড়া ২টি ফিফটি হাঁকিয়েছেন শান্ত। স্ট্রাইকরেট ১৫৬.৭৭! সর্বোচ্চ ইনিংস ১০৯।

৩. পারভেজ হোসেন ইমন (ফরচুন বরিশাল) : বাংলাদেশি হিসেবে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড এখন ইমনের দখলে৷ ৯ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরি ও ১ ফিফটিতে মোট ২৩৩ রান করেছেন তিনি। স্ট্রাইকরেট ১৩০.৮৯!

৪. মুশফিকুর রহিম (বেক্সিমকো ঢাকা) : মুশফিকের ব্যাট থেকেও এসেছে ধারাবাহিক রান। ৯ ম্যাচে তিনি ১ ফিফটিতে করেছেন ২৮৭ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৭৩ রান। স্ট্রাইকরেট ১১২.১০।

৫. ইয়াসির আলি রাব্বি (বেক্সিমকো ঢাকা) : টানা হারের পরে ঢাকার ম্যাচ জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন ইয়াসির। এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান বিপদের মুখ থেকে দলকে রক্ষা করেও জয় এনে দিয়েছেন। ৯ ম্যাচে ২ ফিফটিতে তিনি করেছেন মোট ২৯৪ রান। স্ট্রাইকরেট ১২৪.৫৭!

৬. মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (জেমকন খুলনা- অধিনায়ক) : আসরের শুরুতে হাসছিল না রিয়াদের ব্যাট। তবে ফাইনালসহ দুইটি ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৭০ রানের ইনিংস খেলেছেন ফাইনালে। ১০ ম্যাচে ১২৯.৮৫ স্ট্রাইকরেটে করেছেন মোট ২৭৪ রান।

৭. শুভাগত হোম (জেমকন খুলনা) : দলের প্রথম ৩ ম্যাচে একাদশেই সুযোগ পেয়েছিলেন না শুভাগত। প্রথম সুযোগ পাওয়ার দিনেই হন ম্যাচসেরা। তারপর যতটুকু সুযোগ পেয়েছেন ধারাবাহিক পারফর্ম করেছেন তিনি। ১৮৪.৬১ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট হাতে করেছেন ৭২ রান ও বল হাতে ৬.৬৭ ইকোনমিক রেটে শিকার করেছেন মূল্যবান ১০টি উইকেট। সেরা বোলিং ১৩ রানে ৩ উইকেট।

৮. রবিউল ইসলাম রবি (বেক্সিমকো ঢাকা) : ঢাকার ম্যাচ জয়ের আরেক কারিগর ছিলেন রবিউল ইসলাম রবি। এই ডানহাতি স্পিনার ইনিংসের শুরুতেই ও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন। ৮ ম্যাচে মোট ১৩ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ইকোনমিক রেট ৬.৯৪। সেরা বোলিং ২৭ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট।

৯. মুস্তাফিজুর রহমান (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম) : চট্টগ্রামের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ ২২ উইকেট শিকার করে আসরের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছেন মুস্তাফিজ। ইকোনমিক রেট ৬.২৫ ও বোলিং গড় ১১.০৪৷ সেরা বোলিং ৫ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট।

১০. শরিফুল ইসলাম (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম) : যুব বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার শরিফুল টুর্নামেন্ট জুড়েই দুর্দান্ত খেলেছেন। ১০ ম্যাচে তিনি শিকার করেছেন ১৬টি উইকেট।

১১. শহিদুল ইসলাম (জেমকন খুলনা) : ফাইনাল ম্যাচে শেষ ওভারে বল হাতের নায়ক ছিলেন শহিদুল। জেমকন খুলনার এই পেসার ৮ ম্যাচে শিকার করেছেন ১৩টি উইকেট। ইকোনমিক রেট ৭.৬৩। সেরা বোলিং ১৭ রানে ৪টি উইকেট।

দ্বাদশ খেলোয়াড় : দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে রাখা হয়েছে আকবর আলিকে। যুব বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বেক্সিমকো ঢাকার পক্ষে ১০ ম্যাচে ১৫০ স্ট্রাইকরেটে করেছেন মোট ১৭১ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস অপরাজিত ৪৫ রানের।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!