• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

নতুন শহরে শতবর্ষী হোটেলে নতুন শুরুর আশায় বাংলাদেশ


ক্রীড়া ডেস্ক অক্টোবর ২১, ২০২৩, ১০:২২ এএম
নতুন শহরে শতবর্ষী হোটেলে নতুন শুরুর আশায় বাংলাদেশ

ঢাকা : পুনে থেকে মুম্বাই দেড়শ কিলোমিটারের মতো পথ। বিমানবন্দরে যাওয়া, চেক-ইন, নিরাপত্তা তল্লাশি মিলিয়ে অতসব ঝামেলায় যেতে হয়নি বাংলাদেশ দলকে। সড়কপথে দুটি বাসে করে মুম্বাই এসেছে দল। তাতে শুধু ঝক্কি কমেছে বলেই নয়। পথের মনোরম সৌন্দর্যও উপভোগ করতে পেরেছেন ক্রিকেটাররা।

পুনে শহরের জ্যাম ঠেলে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর গাড়ীর গতি যেমন বাড়তে থাকে, তেমনি প্রকৃতির অপরূপ চেহারাও ধাঁধিয়ে দেয় চোখ। পাহাড়ের বুক চিড়ে গড়া হয়েছে এই পথ। দুই পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সবুজ পাহাড়। কোথাও কোথাও পাহাড় খুড়ে তৈরি করা হয়েছে টানেল। এরকম টানেল পার হতে হলো গোটা চারেক। কোথাও কোথাও লম্বা পথ জুড়ে গাঁদা ফুলের বাগান। কারও যত্নে গড়া নয়, প্রকৃতির মহিমা।

মাঠের ক্রিকেটে টানা তিন ম্যাচে বাজে হারের ধাক্কায় ক্রিকেটারদের বিপর্যস্ত মন কিছুটা হলেও আর্দ্র আর শান্ত হয়ে উঠতে পারে পথের নান্দনিকতার পরশে।

মুম্বাই শহরে ঢোকার মুখ থেকে অবশ্য ট্রাফিক জ্যামের বিরক্তি হানা দেয় আবার। তবে ঢাকা শহরে যারা অভ্যস্ত, তাদের জন্য এটা তো আর নতুন অভিজ্ঞতা নয়!

ক্রিকেটারদের মনে রোমাঞ্চের দোলা জাগাতে পারে মুম্বাইয়ে তাদের আস্তানাটিও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য এই শহরে বাংলাদেশ দলের ঠিকানা তাজ মহল প্যালেস হোটেল। অনেক ইতিহাসের স্বাক্ষী ‘হেরিটেজ’ হোটেল এটি।

ব্রিটিশ আমলের ‘ইন্দো-সারাসিনিক’ স্থাপত্যের দারুণ এক নিদর্শন এই তাজ মহল প্যালেস হোটেলে থাকবে বাংলাদেশ দল।
|

ব্রিটিশ আমলের ‘ইন্দো-সারাসিনিক’ স্থাপত্যের দারুণ এক নিদর্শন মনে করা হয় এই হোটেলকে। ১৯০৩ সালে যাত্রা শুরু হয় এটির। ১৯২৪ সালে ঠিক পাশেই গড়ে তোলা হয় ‘গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া।’

গোটা ভারতবর্ষের অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই হোটেলের নাম। প্রথম বিদ্যুৎ আসে এখানে, প্রথম মার্কিন ফ্যান, জার্মান এলিভেটর, লাইসেন্সড বার সবই এখানে। সেসময় মূলত ইউরোপিয়ানরা, মহারাজাগণ আর সমাজের অভিজাতরা এখানে আসতেন। যুগে যুগে এই হোটেলে পা পড়েছে গোটা বিশ্বের বিভিন্ন আঙিনার খ্যাতিমানদের। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে এটিকে রূপ দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে।

শুধু ইতিহাস-ঐতিহ্যের কারণেই নয়, বছর ১৫ আগে এই হোটেল আলোচনার শিরোনামে উঠে আসে সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়েও। ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় দক্ষিণ মুম্বাইয়ে যে ৮টি জায়গায় হামলা চালানো হয়েছিল, এর মধ্যে ছিল এই হোটেলও। সেসময় তাজ প্যালেসের ওপর দিয়ে ধোঁয়া ওড়ার ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বময়। আক্রমণের শিকার সব জায়গার মধ্যে সবশেষে মুক্ত করা হয়েছিল এই হোটেলকেই। ভারতের ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস বিশেষ অপারেশন চালিয়ে মুক্ত করে এই হোটেল।

তাজমহলের অনুসরণেই এই হোটেলের নামকরণ করা হয়। একসময় অবশ্য তাজ টাওয়ারও বলা হতো। এখন বদলে গেছে নাম। তবে শুধু ‘দা তাজ’ বলেই এটি বেশি পরিচিত। মুম্বাই শহরের দর্শনীয় জায়গাগুলোর মধ্যে শীর্ষের দিকেই আছে এই হোটেল ও এই এলাকা।

বাংলাদেশের এই দলের কেউ কখনও আগে এখানে থাকেননি বলে জানালেন অপারেশন্স ম্যানেজার রাবিদ ইমাম। তার নিজের অবশ্য এই অভিজ্ঞতা আছে, ২০১১ বিশ্বকাপের সময় যখন আইসিসির হয়ে কাজ করছিলাম, তখন এখানে ছিলাম। দলের অন্যদের এবারই প্রথম। বিস্তারিত খুব বেশি না জানলেও ওরা জানে যে এটা অনেক পুরোনো হোটেল। এরকম জায়গায় এলে বাড়তি একটা ভালো লাগা তো কাজ করেই। এছাড়া হোটেলের চারপাশে দৃশ্যবলীও সুন্দর। ছেলেরা উপভোগ করছে।

মাঠের ক্রিকেটের যা অবস্থা, তাতে অবশ্য উপভোগের বাস্তবতা খুব একটা নেই দলের। তবে বিশ্বকাপ অভিযানে হারের বিষাদকে সঙ্গী করে বয়ে নিলে তো আর চলে না। ভারতের বিপক্ষে হারের পর টিম মিটিংয়ে আলোচনা হয়েছে ঘাটতির জায়গাগুলো নিয়ে। খোঁজা হয়েছে সমাধানের সম্ভাব্য পথ। দক্ষিণ আফ্রিকার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা নিয়েও প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।

সেই লড়াইয়ে সাকিব আল হাসানকে পাওয়া দলের জন্য জরুরি। অপারেশন্স ম্যানেজার আশার কথাই শোনালেন অধিনায়ককে নিয়ে, সাকিবের অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ হয়নি, বরং আরেকটু ভালো হয়েছে। ক্রমেই উন্নতি হচ্ছে।

মঙ্গলবার ম্যাচের আগে সময় আছে আরও তিনদিন। ফিট হয়ে ওঠার যথেষ্ট সুযোগ তাই তার আছে। শনিবার বিশ্রামে থাকবে দল। এ দিন এখানে ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াই। রোববার ও সোমবার অনুশীলন করবে দল। সাকিব কতটা অনুশীলন করতে পারেন, নজর থাকবে সেদিকে।

সাকিব ফিরলেও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো সহজ হবে না। তবে বিশ্বকাপে সহজ কিছুর প্রত্যাশাও তো করা যায় না। পথে ফিরতে হলে জিততেই হবে। নতুন শহর, নতুন ভেন্যুতে লক্ষ্যটা পুরোনোই। কিন্তু আশা নতুন শুরুর।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!