• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অঙ্কেও ভুল করে ‘চোকার্স’ দক্ষিণ আফ্রিকা!


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ মে ২৩, ২০১৯, ০৮:৩৯ পিএম
অঙ্কেও ভুল করে ‘চোকার্স’ দক্ষিণ আফ্রিকা!

ফাইল ছবি

ঢাকা: বিশ্বকাপ ভাগ্য বরাবরই দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে বিদ্রুপ করে আসছে। শুরুটা সেই ১৯৯২ সালে। তখন বর্ণবাদের অপবাদ ঘুচিয়ে ২২ বছর পর ক্রিকেটে ফেরে প্রোটিয়ারা। শুধু তা-ই নয় সিডনিতে তারা সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ডের। সেবার দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল স্বপ্ন ধুয়ে যায় বৃষ্টিতে। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে এক ব্রায়ান লারাকেই সামলাতে পারেননি প্রোটিয়া বোলাররা। দক্ষিণ আফ্রিকার হৃদয়ে সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে ১৯৯৯ বিশ্বকাপে। এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনাল ম্যাচটি টাই করে বসে প্রোটিয়ারা। রানরেটে এগিয়ে থাকায় ফাইনালে উঠে  যায় অস্ট্রেলিয়া।

টানা তিন বিশ্বকাপে এমন হৃদয়বিদারক বিদায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার গায়ে সেটে যায় চোকার্স তকমা। খাঁটি বাংলায় বললে প্রয়োজনের মূহুর্তে ভেঙে পড়া। ক্রিকেট বিশ্ব সেটা আরও ভালভাবে অবলোকন করল ২০০৩ বিশ্বকাপে। এবার বিশ্বকাপ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতেই। তাই সমর্থকদের প্রত্যাশাও বেড়ে হলো দ্বিগুন। নিজেদের চেনা কন্ডিশন কাজে লাগিয়ে শন পোলকের দল প্রথম বারের মতো ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন কেউ কেউ এমনটাও ভেবে রেখেছিলেন! কিন্তু পোলক যে হিসাবে ভুল করবেন সেটা কে-ই বা ভেবেছিলেন! মূলত অঙ্কে ভুল করেই নিজ দেশের বিশ্বকাপে পোলকের দক্ষিণ আফ্রিকা ছিটকে পড়ল প্রথম রাউন্ড থেকেই।

ডারবানের কিংসমিডে সেদিন কী ঘটেছিল? প্রত্যাশার চাপে পড়েই দক্ষিণ আফ্রিকার ২০০৩ বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল অত্যন্ত জঘণ্য! নিউজিল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারের পর গ্রুপের শেষ ম্যাচ ছিল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। সুপার সিক্সে উঠতে হলে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না প্রোটিয়াদের সামনে। পক্ষান্তরে শ্রীলংকা শুরুটা ভালো করলেও নাইরোবিতে স্বাগতিক কেনিয়ার কাছে তাদের পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। তাই সনাৎ জয়াসুরিয়ার দলের সামনেও ছিল একই লক্ষ্য। অর্থাৎ দু’দলের যেই হারবে তাকেই বিদায় নিতে হবে বিশ্বকাপ থেকে।

আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা ২৬৮/৯ রানের স্বাস্থ্যবান স্কোরই গড়ল। আর এতে বড় ভূমিকা রাখলেন ওপেনার মারভান আতাপাত্তু ১২৯ বলে ১২৪ রান করে। মিডল অর্ডারে ৭৮ বলে ৭৩ রান আসে অরবিন্দ ডি সিলভার ব্যাট থেকে। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটাও চমৎকার করে দিয়ে যান দু’ওপেনার গ্রায়েম স্মিথ ও হার্সেল গিবস। ওপেনিং জুটিতেই তারা তুলে ফেলেন ৬৫ রান। স্মিথ ৩৪ বলে ৩৫, গিবস ৮৮ বলে করেন ৭৩। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিতে থাকেন ডি সিলভা, জয়াসুরিয়া ও মুত্তিয়া মুরালিধরণ।

এর মাঝে হঠাৎ ডারবানের আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল। খেলা বন্ধ থাকল। ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়ের জন্য দরকার পড়ে ৪৫ বলে ৫৭ রান। লঙ্কান স্পিনারদের সামলাতে গলদঘর্ম হলেন ল্যান্স ক্লুজনার। অবশ্য বল গ্রিপ করতে অসুবিধা হচ্ছিল লঙ্কানদেরও। এরই মাঝে ৪৫ তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুম থেকে ব্যাট করতে থাকা মার্ক বাউচারের কাছে বার্তা পাঠানো হয় যে, ৪৬ তম ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ২২৯ রান তোলা তাদের জন্য নিরাপদ। ওই ওভারটি করতে আসেন মুরালিধরণ। তার পঞ্চম বলটিকে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা মারলে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর হয়ে যায় ২২৯। বাউচারও মনে করেন জেতার জন্য তো এই রানই যথেষ্ট। তাই মুরালির ষষ্ঠ বলটি তিনি মিড উইকেটে খেললেন বটে কিন্তু কোনও রান নিলেন না।  

হঠাতই দেখা গেল দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে রাজ্যর হতাশা। গালে হাত দিয়ে বসে আছেন অধিনায়ক পোলক। পাশে মাখায়া এনটিনির চোখেুমখে সব হারানোর হতাশা। কারণ বাউচারকে যে বার্তা পাঠানো হয়েছিল সেটা ছিল ভুল। ২২৯ রান তুললে ম্যাচটি টাই হয় আর ২৩০ রান তুললে জিতে যেত দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ বলে ১ রান নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ভুল বার্তার কারণে সেটা আর নেননি বাউচার। ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতেও ম্যাচটি টাই হয়ে যায়। আর এতেই টানা দ্বিতীয়বার টাইয়ের কবলে পড়ে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা। অথচ শেষ বলে ১ রান করলেই সুপার সিক্সে শ্রীলঙ্কার বদলে উঠে যেত দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচের পর এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্রু হাডসন বলেন,‘৪২ মিলিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকান জনগণ আজ রাতে শুয়ে চিন্তা করবে তারা খারাপ স্বপ্ন দেখেছেন।’

 সোনালীনিউজ/আরআইবি/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!