• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আদালতে মিন্নির ছবি উঠানো বোরখা পরিহিত কে এই ব্যক্তি


বরগুনা প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৯, ০১:১৯ এএম
আদালতে মিন্নির ছবি উঠানো বোরখা পরিহিত কে এই ব্যক্তি

বরগুনা : আলোচিত মামলার শুনানির দিন আদালত প্রাঙ্গণে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদারের রেওয়াজ বহু পুরনো। বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় হয়নি।

রিফাত হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতারের পর আদালতে সোপর্দ, রিমান্ড শুনানি, স্বীকারোক্তি প্রদানসহ মামলার জামিন শুনানির দিন বরগুনার আদালত প্রাঙ্গণ ছিল নিরাপত্তাবেষ্টনীতে মোড়ানো।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) রিফাত হত্যা মামলার অভিযোগপত্রের শুনানির দিনও আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। মামলার শুনানি ঘিরে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য সকাল থেকে পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন।

আদালতের কার্যক্রম শুরুর আগে বরগুনা জেলা কারাগারে থাকা এ মামলার অপর সাত অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। সকালে অভিযোগপত্রের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও মামলার মূল নথি বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে থাকায় শুনানি শুরু হতে বিলম্ব হয়। এ অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী অভিযোগপত্র শুনানির জন্য দুপুর ২টায় নির্ধারণ করেন।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের সঙ্গে মোটরসাইকেলে চড়ে আদালতে আসেন মিন্নি। এরপর আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার সঙ্গেই আদালতের একটি কক্ষে অবস্থান করেন তিনি।

অভিযোগপত্র শুনানির জন্য বিচারক দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করার কারণে বেলা ১১টার দিকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের সঙ্গে মোটরসাইকেলে বাসায় যান মিন্নি।

আদালত থেকে বের হয়ে আদালত প্রাঙ্গণে বাবার মোটরসাইকেলে ওঠার আগ পর্যন্ত মিন্নির ছবি সংগ্রহ করেন সংবাদকর্মীরা। তখন মিন্নিকে দেখতে জড়ো হন সাধারণ মানুষও। এতে লোকে লোকারণ্য হয় আদালত প্রাঙ্গণ।

লোকে লোকারণ্য আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকরা যখন সবার ছবি তুলছিলেন তখন ব্যতিক্রমী পোশাকে মোবাইল হাতে মিন্নির ছবি তুলতে হাজির হন এক ব্যক্তি। সংবাদকর্মী ও উৎসুক মানুষকে ভেদ করে একের পর এক মিন্নির ছবি তুলছেন ওই ব্যক্তি।

এ সময় সবার চোখ পড়ে ওই ব্যক্তির দিকে। দেখা যায় হাতে-পায়ে মোজাসহ বোরকা পরিহিত ওই ব্যক্তি মিন্নির খুব কাছ গিয়ে ছবি তুলছেন। মিন্নি আদালত প্রাঙ্গণে থাকা পর্যন্ত সাংবাদিকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে মিন্নির ছবি তোলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয় স্থানীয় সাংবাদিকদের। সর্বাঙ্গ ঢেকে মিন্নির ছবি তোলা ওই ব্যক্তি ‘নারী নয় বরং পুরুষ’ এমনটিও বলেছেন কেউ কেউ। তবে ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। এমনকি স্থানীয় সাংবাদিক ও মিন্নির পরিবারের সদস্যরাও ওই ব্যক্তিকে চিনতে পারেননি।

আদালতে পেশাগত দায়িত্ব পালনে থাকা কয়েকজন সাংবাদিক বলেন, অভিযোগপত্রের শুনানি থাকায় বুধবার সকাল ৯টার দিকে আদালতে উপস্থিত হন মিন্নি। আদালতের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় এজলাসের পাশের একটি কক্ষে বাবার সঙ্গে বসে থাকেন তিনি।

এ সময় হাত-পায়ে মোজা ও বোরকা পরিহিত এক ব্যক্তি মিন্নির কক্ষের বাইরে ঘোরাফেরা করেন। তবে বিষয়টি তখন আমরা গুরুত্ব দেইনি। এরপর আদালত প্রাঙ্গণে ছবি তোলার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করে মিন্নির ছবি তোলেছেন ওই ব্যক্তি। তাকে দেখে মনে হয়েছে, ‘তিনি নারী নয়, পুরুষ।’

বরগুনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য বুধবার আমি আদালতে যাই। বোরকা পরিহিত ওই মানুষটিকে দেখে মনে হয়েছে একজন ধার্মিক নারী। কিন্তু মিন্নির ছবি তোলার সময় তিনি যেভাবে হুলুস্থুল করেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি নারী নয়, পুরুষ। বিষয়টি খুবই সন্দেহজনক। তাই হাত-পা মোজা ও বোরকা পরিহিত ওই মানুষটি কে তা জানা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, কারামুক্ত হওয়ার আগ থেকে মিন্নির নিরাপত্তাহীনতাসহ হুমকির কথা বলছেন মিন্নির বাবা। বুধবারের ঘটনাটি মিন্নির নিরাপত্তা নিয়ে সর্বোচ্চ সংশয় তৈরি করল। এ ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণসহ বোরকা পরিহিত ওই মানুষটিকে খুঁজে বের করার জন্য পুলিশকে অনুরোধ করছি।

এ বিষয়ে মিন্নির বাবা মো. মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘আমি যখন মিন্নিকে নিয়ে আদালত থেকে বের হচ্ছিলাম তখন বোরকা পরিহিত ওই মানুষটি মিন্নির কাছে এসে ছবি তোলা শুরু করে। তাকে দেখে ধর্মপ্রাণ নারী মনে হলেও তিনি যেভাবে মিন্নির কাছে এসেছেন, সেটা তার পোশাকের সঙ্গে বেমানান। আদালত প্রাঙ্গণে ওই ব্যক্তির কার্যকলাপ দেখে আমার সন্দেহ হয়েছে। বোরকা পরা হলেও ওই ব্যক্তি পুরুষ। নারী সেজে আমাদের ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে এসেছিলেন কিনা এটা জানা দরকার। পুলিশকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরগুনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। সাংবাদিকদের কাছ থেকে ঘটনাটি শুনেছি। ওই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজখবর নেব আমরা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!