• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনায় আ.লীগ-বিএনপির পক্ষের সুশীল সমাজ


বিশেষ প্রতিনিধি নভেম্বর ২৮, ২০১৮, ০২:৪১ পিএম
আলোচনায় আ.লীগ-বিএনপির পক্ষের সুশীল সমাজ

ঢাকা : সব দেশেই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে সেদেশের সুশীল সমাজ। বিভিন্ন নির্বাচনে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বাংলাদেশের সুশীল সমাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী-সুশীল সমাজের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও দেশের শিল্পী-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা ছিল অনন্য, অসাধারণ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মতোই প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে সুশীল সমাজের।

যে কোনো নির্বাচনেই দেখা যায়, সুশীল সমাজের বক্তব্য, চিন্তাভাবনা জনগণকে প্রভাবিত করে। শুধু বাংলাদেশেই না, যে কোনো দেশেই নির্বাচনের সময় সে দেশের সৃষ্টিশীল বুদ্ধিজীবী-লেখক-সাংবাদিক-পরিচিতজনদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও নিজ নিজ দর্শন অনুযায়ী সুশীল সমাজকে বিভিন্ন ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোও নিজ নিজ আদর্শের বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে পরিকল্পনা করছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও তার ব্যতিক্রম নয়।

আওয়ামী লীগের পক্ষে সুশীল সমাজের যারা : বিভিন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নাগরিক কমিটি গঠন করে থাকে। তবে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ এখন পর্যন্ত কোনো নাগরিক কমিটি গঠন করেনি। কিন্তু দেশের কয়েকজন শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং বরেন্য ব্যক্তি আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলবেন এবং আওয়ামী লীগের হয়ে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। এই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে শীর্ষ ছয়জন নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে প্রভাবশালী।

ড. আনিসুজ্জামান : বাংলা সাহিত্যের পণ্ডিত ড. আনিসুজ্জামান একজন প্রথিতযশা অধ্যাপক। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ’৭২ এর সংবিধানের বাংলা অনুবাদকারী। সারা জীবন তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করেছেন। শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখা ড. আনিসুজ্জামান ব্যক্তিগতভাবে আবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার শিক্ষক। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি কোনো নাগরিক কমিটি বা প্ল্যাটফর্ম গঠন করে তাহলে নিশ্চিতভাবে তিনি হবেন এর সভাপতি।

ড. আতিউর রহমান : ড. আতিউর রহমান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ছিলেন। ২০০৮ এ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এবারও আওয়ামী লিগ সরকারের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সাফল্য এবং আওয়ামী লীগের ইশতেহারের অর্থনৈতিক অংশটুকু প্রণয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে তিনিও আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি জোরালো কণ্ঠস্বর হিসেবে কাজ করবেন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল : ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল রাজনীতি সংশ্লিষ্ট নন। কিন্তু তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তিনি তুমুল জনপ্রিয়। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল সরাসরি আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারে অংশ নেবেন না। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান দৃঢ় হওয়ার কারণে তিনি নির্বাচন উপলক্ষে যা লিখবেন বা বলবেন তা আওয়ামী লীগের ঘরেই যাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা।

ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও সাংবাদিকতার অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকী। ড. আরেফিন সিদ্দিকী বরাবরই আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জন্য তিনি বেশ কিছু কাজ করবেন বলে জানা গেছে।

ড. এ কে আজাদ চৌধুরী : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। সবসময়ই তিনি আওয়ামী লীগের পক্ষে অত্যন্ত সোচ্চার। জানা গেছে, এবারও ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় এবং সুশীল সমাজের মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন।

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক : আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা বিতর্কের অন্যতম আলোচিত ব্যক্তি। সিনহার অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন তিনি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিচারপতি মানিকের অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অত্যন্ত স্পষ্ট ও সরাসরি। এবার সরাসরি নির্বাচন না করলেও তিনি নির্বাচনে জনমত তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির পক্ষে সুশীল সমাজের যারা : যে কোনো দেশের নির্বাচনে তাৎপর্যপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে সংশ্লিষ্ট দেশের সুশীল সমাজ। সে কথা মাথায় রেখেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি একটি নাগরিক কমিটি তৈরি করবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিএনপির নেতারা। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে যে কজন বুদ্ধিজীবী বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াই করতে পারেন তাদের মধ্যে শীর্ষ ছয়জনের পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

ড. এমাজউদ্দিন আহমদ : অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। বিএনপির নাগরিক কমিটিতে অনিবার্য ভাবে ড. এমাজউদ্দিন আহমেদই নেতৃত্ব দেবেন।

এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি যে শত নাগরিক কমিটি করেছিল সেই নাগরিক কমিটিতেও ড. এমাজউদ্দিনকেই আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে জনমত তৈরির ক্ষেত্রে তিনি ধানের শীষের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবেন।

ড. আলী রীয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ দেশের বাইরে থাকেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি তার আসল রঙ প্রকাশ করেছেন। ইতোমধ্যেই তিনি বিএনপি পক্ষে লেখালেখি শুরু করেছেন এবং জনমত তৈরি করছেন। পরবর্তীতেও তিনি এই ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ড. আসিফ নজরুল : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বরাবরই বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত। যে কোনো ইস্যুতে তিনি বিএনপি-জামাতের পক্ষেই কথা বলেন। অতীতে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলেও তীব্র সমালোচিত হয়েছেন তিনি। এবারের নির্বাচনে আসিফ নজরুল সরাসরি বিএনপির পক্ষে কাজ করবেন বলে জানা গেছে।

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য : ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য একসময় আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ’৯৬ সালের নির্বাচনে তার মাকে আওয়ামী লীগ থেকে মহিলা আসনে মনোনয়নও দেওয়া হয়। কিন্তু ড. দেবপ্রিয় এখন আর আওয়ামী লীগ ঘরানার বুদ্ধিজীবী নেই।

তিনি এখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনদের সঙ্গে মিলে তরুণদেরকে ভোটে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করছেন, যার ফসল বিএনপি-ঐক্যফ্রন্টের ঘরে উঠবে বলেই ধারণা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের কট্টর সমালোচক হিসেবেও পরিচিত।

ড. মাহবুব উল্লাহ : অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী হিসেবে স্বীকৃত। বিএনপির এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে অর্থনৈতিক নীতি-কৌশল ইত্যাদি তৈরি করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবেন বলে জানা গেছে।

ড. বদিউল আলম মজুমদার : সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার নিজেকে নিরপেক্ষ হিসেবেই প্রচার করতে ভালোবাসে। কিন্তু নির্বাচনের আগে আগে তার নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে গেছে।

জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় সুজন যে প্রশিক্ষণ ও কর্মকাণ্ডগুলো পরিচালনা করছে সেগুলো বিএনপির পক্ষে এবং আওয়ামী লীগের সমালোচনামুখর। এবারের নির্বাচনে তিনি স্পষ্টতই বিএনপির পক্ষে কাজ করবেন এমনটাই প্রতীয়মান হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!