• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গরমে ব্যস্ততা বাড়ছে পাখা পল্লীর কারিগরদের


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি এপ্রিল ২৯, ২০১৯, ০৩:৫১ পিএম
গরমে ব্যস্ততা বাড়ছে পাখা পল্লীর কারিগরদের

ছবি : সোনালীনিউজ

ঝিনাইদহ : জেলার কালীগঞ্জের পাখা পল্লীর কারিগরদের প্রচণ্ড গরমে ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েকগুণ। কেউ পাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ সেলাই করছে, কেউ সুতা ও বাঁশের শলাতে রঙ করছে। কেউ তৈরি করা পাখার বোঝা বাধছে। আবার কেউ পাইকারী ক্রেতাদের সঙ্গে বকেয়া হিসেব ও আপ্যায়নে ব্যস্ত। কাজের ব্যস্ততায় শরীর ঘেমে মাটিতে পড়লেও নিজেদের তৈরি তাল পাখার বাতাস নেওয়ার সময় তাদের নেই।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পাখা পল্লী খ্যাত দুলাল মুন্দিয়া ও পারিয়াট গ্রামে বর্তমান এ অবস্থা বিরাজ করছে। সরেজমিনে কথা হয় দুলালমুন্দিয়া গ্রামের মজনু, ফজলু, খালেক, নুর আলী, আব্দুলবারিক, চাঁনমিয়া, মোস্তফা ও আব্দুর রহিম সঙ্গে। তারা জানায়, তাদের পূর্ব পুরুষেরা এই পাখা তৈরির কাজ করতেন। পূর্ব পুরুষদের পেশাটাকে ধরে রাখার জন্য এখনো তারা পাখা তৈরির কাজ করে যাচ্ছেন।

কালীগঞ্জের দুলালমুন্দিয়ার ৫০ পরিবার ও পারিয়াট গ্রামের প্রায় ৩৩টি পরিবার তাল পাখা তৈরি করে জীবন জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। জন্মগতভাবে এ পেশাটাকে পেয়ে থাকে বলেই তাদের ছেলেমেয়েরাও বিভিন্ন নকশার পাখা তৈরিতে পারদর্শপাখা কারিগর জানায়, হাত পাখার তৈরির প্রধান উপকরণ তাল পাতা এই এলাকাতে পাওয়া যায় না। শীত মৌসুমে ফরিদপুর ও মাগুরা জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে চারা গাছের পাতা কিনে আনেন তারা। তারপর পাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভিজিয়ে রাখেন।

পরে পানি থেকে উঠিয়ে নরম ভেজা পাতা গোলাকার করে কেটে মাঝখান থেকে দু’খণ্ড করেন। এরপর বোঝা বেঁধে পাতা ঘরে রেখে দেন এবং সেখান থেকে নিয়েসারাবছর বাড়িতে বসে তালপাখা তৈরি করেন। একটি তাল পাতা থেকে দুটি তালপাখা তৈরি হয়।

তিনি আরও জানান, পুঁজি না থাকায় এবং অনেক দূর থেকে পাতা কেনার কারণে পরিবহনে অনেক বেশি খরচ পড়ে যায়। কারিগর মজনু মিয়া জানান, বছরে ২/৩ মাস তাল পাখার বেশি চাহিদা থাকে। চৈত্র থেকে শুরু করে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যস্ত বিক্রির মৌসুম হলেও চৈত্র ও বৈশাখ মাসই পাখা বিক্রির উপযুক্ত সময়। প্রচণ্ড- তাপদাহ ও বিদ্যুতের লোডশেডিং এ সময়টাতে বেশি হওয়ার কারণে এ সময়টাতে তাল পাখার কাটতি বেশি হয়ে থাকে।

ফলে এ সময় তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বছরের অন্যান্য মাসে তালপাখার তৈরির কাজ ও বিক্রি চললেও শীত আসলে বিক্রি বন্ধ। তাইতারা শীতের আগমনকে ভয় পায়।

তিনি জানান, পরিবারের ছোটরাও বাবা মায়েদের ব্যস্ততা দেখে বসে থাকতে পারে না। পড়াশুনার পাশাপাশি পাখা তৈরির বিভিন্ন কাজ করে তার বড়দের সাহায্য করে। নুর আলী নামের একজন কারিগর জানান, গত বছরগুলোর চেয়ে এবছর একটি পাখাতে দাম বেড়েছে প্রায় ৩ টাকা। কিন্তু লাভ হচ্ছে কম। কারণ প্রতিটি জিনিসেরই দাম বেশি।

তিনি জানান, প্রতিটি পাখায় তৈরি পর্যন্ত প্রায় ৮ থেকে ১০ টাকা খরচ হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১২ থেকে ১৫ টাকা টাকা। অবশ্য পাইকার ব্যবসায়ীরা উপরোক্ত দামে পাখাগুলি তাদের কাছ থেকে নিয়ে যায়। তারা একটি পাখা ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করে। অবশ্য খুব গরমের মধ্যে হাত পাখার চাহিদা বেশি হওয়ায় সে সময় একটি পাখা তারা ২৫ থেকে ৩০ টাকা বিক্রি করে। একজন কারিগর প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০টি তালপাখা তৈরি করতে পারেন।

ফলে প্রতিটি কারিগর বিক্রির মৌসুমে দিনে যাবতীয় খরচ বাদে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আয় করতে পারেন। পাইকাররা এখন বাড়ি থেকেই পাখা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে পরিবহন খরচ থেকে রেহাই পাচ্ছেন। জোছনা নামের এক গৃহবধূ জানান, পাতা দিয়ে পাখা তৈরি করে, শরীর ঘেমে মাটিতে পড়লেও বাতাস নেওয়ার সময় তাদের হয় না। কারণ রান্নবান্না ও গৃহস্থলীর কাজের পাশাপাশি তাদেরকে পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। অমেলা বেগম নামের বৃদ্ধা মহিলা জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি পাখা তৈরির কাজ করছেন। তিনি জানান, বাড়ির বউদেরকেও পাখা তৈরির কাজ শিখিয়েছেন। ফলে তার ব্যস্ততা এখন একটু কমেছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!