• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সিবিআই’র প্রতিবেদন

গরু চোরাচালানে বিএসএফ


আন্তর্জাতিক ডেস্ক সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০, ০৮:২০ পিএম
গরু চোরাচালানে বিএসএফ

ঢাকা : বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে মূল্যায়িত বাংলাদেশ-ভারত মিত্রতা। তবে সম্প্রতি এই সম্পর্কের মাঝে সৃষ্ট কূটনৈতিক শীতলতার বিষয়টি সারাবিশ্বেই ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। যার অন্যতম কারণ সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে একের পর এক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যাকাÐে মত নির্মম ঘটনা।

এক্ষেত্রে বিএসএফ এবং ভারতীয় কূটনৈতিক পর্যায় থেকে বরাবরই দাবি করা হয়েছে যে, সীমান্ত হত্যকাণ্ডে শিকার এসকল বাংলাদেশি নাগরিকদের অন্তত ৯৫ শতাংশ গরু চোরাকারবারি। আর তাদের অবৈধ অনুপ্রবেশ রুখতে গিয়ে ঘটছে এসব 'অনাকাঙ্ক্ষিত' ঘটনা।

তবে এবার বিএসএফের এই ‘কথিত’ অযুহাতের গ্রহণযোগ্যতাকে রীতিমত প্রশ্নের মুখে ফেলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-এর বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা, দেশটির সীমান্তে গরু চোরাচালানি সম্পৃক্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য। সিবিআই-র বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য মতে, বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে বিএসএফ এবং ভারতীয় কাস্টমস গরু পাচারে সাহায্য করে। পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক কর্মকর্তাকেও আটক করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলাবাহিনী।

এ প্রসঙ্গে প্রকাশিত সংবাদে আরো বলা হয়, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের অনন্য নজির বাংলাদেশ-ভারত মিত্রতা। আর বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান সেই দুটি রাষ্ট্রের সীমান্তকেই পৃথিবীর অন্যতম রক্তক্ষয়ী সীমান্ত হিসেবে পরিচিতি দিয়েছে। প্রায়শই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা পত্র পত্রিকার খবরে উঠে আসে। হতাহতের ঘটনার কারণ হিসেবে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বরাবর গরু চোরচালানকে দায়ী করে আসছে। কিছুদিন আগে বিএসএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচারের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষীবাহিনী (বিজিবি) জড়িত। বাংলাদেশ অবশ্য সেই অভিযোগ নাকচ করে পাল্টা ভারতের ওপর দোষ চাপিয়েছিল।

ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী এই সংস্থা বলছে, অভিনব কায়দায় এই গরু পাচার চালানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী- বিএসএফকে সীমান্তে গরু ধরতেই হয়। খাতা-কলমে দেখাতে হয় মাসে কতজন পাচারকারীকে তারা গ্রেফতার করেছে এবং কতসংখ্যক গরু উদ্ধার হয়েছে। বিএসএফ তা নিয়মিত করেও। খেলা শুরু হয় তার পরে। মালদা, মুর্শিদাবাদসহ রাজ্যের বিভিন্ন সীমান্তে বিএসএফ বাজেয়াপ্ত গরুকে খাতা কলমে বাছুর বানিয়ে দেয়। খাতায় বাছুর অথচ বাস্তবে পূর্ণ বয়স্ক গরু নিয়ে বাজারে যাওয়া হয়। সেখানে সেই গরু বাছুর হিসেবে নিলাম করা হয়। অর্থাৎ খুব কম টাকায় তা বিক্রি করা হয়।

যারা সেই গরু কিনছে, তারা পাচারকারী। নিলাম এমনভাবে করা হয়, যাতে পাচারে বাজেয়াপ্ত গরু ফের পাচারকারীদের হাতেই পৌঁছায়। প্রতিটি নিলামে বিএসএফের অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের দেয়া হয় গরু পিছু দুই হাজার টাকা। শুল্ক বিভাগের অফিসারদের দেয়া হয় ৫০০ টাকা। পাচারকারীরা ফের সেই গরু সীমান্তের অন্য পারে পৌঁছে দেন। দ্বিতীয়বার তাদের গরু আর ধরা হয় না।

দীর্ঘদিন ধরে এই প্রক্রিয়ায় মালদা-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তে পাচার চলছে বলে জানিয়েছে সিবিআই। কয়েকদিন আগে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জায়গায় সিবিআই কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করেন। অন্য রাজ্যের কয়েকটি স্থানেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। এফআইআর করা হয়েছে বিএসএফের এক কর্মকর্তা এবং বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত বিএসএফ কর্মকর্তার নাম সতীশ কুমার।

তিনি বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কমান্ডান্ট ছিলেন। তার সল্টলেকের বাড়ি সিল করে দেয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্য রাজ্যে তার আরও বাড়ি আছে। বর্তমান কর্মস্থল মালদায় হলেও মালদা মুর্শিদাবাদ সীমান্ত অঞ্চলের দীর্ঘদিন কাজ করেছেন সতীশ। সেই সময়েই গরু পাচারের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। তার ছেলেও একই কাজের সঙ্গে যুক্ত। সতীশের সঙ্গে বেশ কয়েকজন গরু পাচারকারীর বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে।

সিবিআই সূত্র বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে প্রায় ১৬ মাস সীমান্তে কাজ করেছিলেন সতীশ। সে সময় অন্তত ২০ হাজার গরু পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উপার্জন করেছেন তিনি।

এর আগেও বিএসএফের এক কর্মকর্তাকে একই অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এখন তিনি জামিনে মুক্ত। তার কাছ থেকেই সতীশের নাম পাওয়া যায়। বিএসএফ এবং শুল্ক বিভাগের এমন আরও কয়েক কর্মকর্তা সিবিআইয়ের নজরে আছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!