• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে ডেটা সাংবাদিকতা


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৩০, ২০১৯, ১২:৫৯ পিএম
নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে ডেটা সাংবাদিকতা

ঢাকা : তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের ফলে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। অবাধ তথ্যপ্রবাহকে সংবাদচিত্রে উপস্থাপন করাটাও এখন সাংবাদিকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন, ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার, লিঙ্কডইন, ব্লগ এখন সামাজিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। যার কল্যাণে প্রতি মুহূর্তে খবর পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে।

একই সঙ্গে প্রিন্ট মিডিয়া, টেলিভিশন ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের কারণে তথ্যের অবারিত জগৎ উন্মোচিত হয়েছে। সময়ের এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে তথ্য-উপাত্তের বিপুল ব্যবহার। আর এসব তথ্য-উপাত্তকে উপজীব্য করেই ডেটা সাংবাদিকতার অবারিত সুযোগ ও সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত ডেটা সাংবাদিকতাবিষয়ক তিন দিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, বাংলাদেশে সাংবাদিকতায় নতুন যুগের সূচনা করবে ডেটা সাংবাদিকতা।

কেননা ডেটা সাংবাদিকতার মাধ্যমে আমরা পাঠকসমাজকে আরো সমৃদ্ধ এবং সক্রিয় রাখতে পারব। তাই সাংবাদিকদের আরো দক্ষ এবং যুগোপযোগী করার লক্ষ্য নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক আগ্রহে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাচ্ছে পিআইবি। আমরা মনে করি ডেটা সাংবাদিকতা একটি নতুন বিষয় হলেও এটিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। পিআইবি এজন্য যা যা করণীয় তার সবই করবে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে ডেটা সাংবাদিকতার চর্চা দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। একই সঙ্গে ডেটা সংবাদের প্রতি পাঠকদের আগ্রহও বাড়ছে। কারণ মানুষের হাতে সময় কম। মানুষ দ্রুততম সময়ে বিভিন্ন উৎস থেকে সংবাদ পাচ্ছে বলেই এক জায়গায় স্থির থাকছে না। টেলিভিশনের রিমোট কন্ট্রোলের মতোই দ্রুত ঘুরছে তথ্যের সন্ধানে। তার মানে মানুষ তথ্য জানতে চায় বা খোঁজ করে। একই সঙ্গে তারা তথ্য-উপাত্তের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ক্ষেত্রে আস্থাহীনতায়ও ভোগে।

মূলত সাধারণ মানুষের তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে জানার আগ্রহ এবং অনুসন্ধানী প্রবণতাকে বড় উৎস হিসেবে বিবেচনা করেই ডেটা সাংবাদিকতার প্রয়োজনীয়তা সামনে উঠে এসেছে। আবার বিশ্বায়নের এ যুগে আধুনিক প্রযুক্তির নানামুখী প্রভাবকে মোকাবেলা করার লক্ষ্যে সাংবাদিকতার ধরন, ক্ষেত্র, উপযোগিতার নানান পরিবর্তন ঘটেছে। অতীতে কোনো সাংবাদিক নিজের উদ্যোগেই তথ্য সংগ্রহ করে সংবাদপত্রে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করতেন। এখন ইন্টারনেটের অভাবনীয় বিকাশের ফলে তথ্য প্রায় সবার হাতের নাগালে।

সাংবাদিকরাও আর একা নন, দল বেঁধে গোটা বিশ্বে কর ফাঁকির মতো স্পর্শকাতর বিষয় ফাঁস করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে উইকিলিকস একটি বড় উদাহরণ হতে পারে। আমরা যদি লক্ষ করি ইন্টারনেট সংযোগসহ হাতে মোবাইল ফোন থাকা জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে গণমাধ্যমগুলো এখন আর শুধু তার আগের পরিচয়ে থাকছে না। মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্টসহ একেকটি পত্রিকা হয়ে উঠছে টেলিভিশন, আর  টেলিভিশনগুলো টেক্সট কন্টেন্টসহ একেকটি পত্রিকা। এভাবে ইন্টারনেট,  মোবাইল ফোন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাবে বদলে যাচ্ছে সংবাদকক্ষ এবং প্রায়োগিকভাবে বদলে যাচ্ছে বার্তাকক্ষের কাজের ধরন। বদলে যাচ্ছে সাংবাদিকতার ধরন। কারণ বদলে যাচ্ছে পাঠকের মানসিকতা। আর এই বদলে যাওয়ার প্রেক্ষাপটটিই ডেটা সাংবাদিকতার জন্য বিরাট সুযোগকে সামনে নিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে যেটা সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকতা সবসময়ই ডেটা নির্ভর। তবে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে গ্রাফিকসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। এভাবে ডেটা সাংবাদিকতার দিকেই অগ্রসর হচ্ছি আমরা।

বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, মানুষ এখন অল্প কথায় বেশি তথ্য জানতে চায়। স্মার্টফোন, ফেসবুক ও অনলাইনের সুবাদে খুব দ্রুত খবর পেতে চায়। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে খবরের চেয়ে মানুষ এখন ছবির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। ফেসবুকের লাইক এর বাস্তব উদাহরণ। তাই মানুষের চাহিদা পরিবর্তনের এই অবস্থাকে একটি সুযোগ হিসেবে ডেটা সাংবাদিকতাকে আমরা সহজেই কাজে লাগাতে পারি। কেননা ডেটা সাংবাদিকতার মাধ্যমে কেবল তথ্য এবং উপাত্তকে একই সঙ্গে চিত্রায়ণের মাধ্যমে ছোট আঙ্গিকে বড় ফিচার প্রতিবেদন করা সম্ভব। অর্থাৎ মানুষ যে ছবির প্রতি বেশি আগ্রহী সেটা ডেটা সাংবাদিকতায় সহজেই উপস্থাপন করা সম্ভব। প্রিন্ট মাধ্যমেও কম জায়গা ব্যবহার করে ইনফোগ্রাফিকসের মাধ্যমে ডেটা সাংবাদিকতা চর্চার ব্যাপক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে।

আগামীর বার্তাকক্ষ যেমন একদিকে টেক্সট, অডিও, ভিডিও, গ্রাফিকসসহ সব ধরনের মাল্টিমিডিয়া এবং লাইভ সম্প্রচারের সুবিধায় স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে, তেমনি একজন সাংবাদিককেও এইসব মাধ্যমে কাজের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। বিষয়টা আর শুধু লেখা বা বলা কিংবা দেখানোর প্রচলিত সাংবাদিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, অনেক প্রযুক্তিগত বিষয় যোগ হবে এর সঙ্গে।

তিন দিনের এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী দিনে কোর্স কো-অর্ডিনেটর পলাশ দত্ত বলেন, আমি খুব আশাবাদী সংবাদ উপস্থাপনায় ডেটা সাংবাদিকতা নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে। পাঠকসমাজকে তথ্যপ্রবাহ বিষয়ে আলোড়িত করবে এই ধারা।

তিনি আরো বলেন, খুব সীমিত হলেও ডেটা সাংবাদিকতা নিয়ে চিন্তা ও চর্চা দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয়েছে। এই ধারা দ্রুত বিকশিত হবে, কারণ সময়ের সঙ্গে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে পাঠকসমাজের মানসিকতা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!