• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনার অনিবার্যতা স্পষ্ট


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৭, ২০১৯, ১০:৫০ এএম
বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রভাবনার অনিবার্যতা স্পষ্ট

ঢাকা : বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ শুরু হলো আজ। আগামী বছর ১৭ মার্চ হবে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধু প্রায় সাড়ে তিন বছর দেশ পরিচালনা করেন। দেশ পরিচালনার শুরুতে তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা করলেও পরবর্তী সময়ে সব দলের সমন্বয়ে বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের রাজনৈতিক বাস্তবতা বিশ্লেষণ করলে দুটি পর্যায় স্পষ্ট। তা হলো, শুরুর দিকে সংসদীয় গণতন্ত্র এবং শেষের দিকে বাকশাল গঠন।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরদিন, ১১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ জারির মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করেন! সেই তিনিই মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ‘বাকশাল’ কর্মসূচি গ্রহণের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি থেকে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল ছিল ৩ বছর ৭ মাস ৩ দিন।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর (ধারা ১১৭/এ) মাধ্যমে বহুদলীয় সরকারব্যবস্থা বাতিল করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন করা হয়। বহুদলীয় গণতন্ত্রের ব্যর্থতা, বৈদেশিক চাপ, দেশের ভেতর নকশাল, জাসদসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের চরম বিরোধিতা ও উগ্র কার্যকলাপ, আওয়ামী লীগের ভেতরের ষড়যন্ত্র, সামরিক বাহিনীতে অসন্তোষ, ’৭৪-এর দুর্ভিক্ষসহ বিভিন্ন কারণে বহুদলীয় সরকারব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। এমতাবস্থায়, বঙ্গবন্ধু তাঁর দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করেন, যা ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ‘বাকশাল’ নামে পাস করা হয়। একই বছর ৬ জুন সব রাজনৈতিক দলের সমন্ব্বয়ে একটাই সংগঠন ‘বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ৭ স্তরবিশিষ্ট বাকশাল কমিটিতে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়। বাকশালের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রাজনৈতিক দুরবস্থা, কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ এবং ভঙ্গুর অর্থনীতিকে বিকশিত করার সর্বাত্মক উদ্যোগ নেন।

ক্ষমতা গ্রহণের পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোযোগী হন। এক্ষেত্রে প্রথম ধাক্কাটি আসে আওয়ামী লীগে ভাঙন। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রব, মেজর (অব.) জলিলদের নেতৃত্বে জাসদের জন্ম হয়। গণবাহিনীর নামে সারা দেশে শুরু হয় খুন-খারাবি। সাড়ে তিন বছরে আওয়ামী লীগের ৮ জন সংসদ সদস্য, প্রায় তিন শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতা এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার তিন হাজারের বেশি নাগরিক নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রে ৭৪-এ কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টির পাঁয়তারা চলে। এমতাবস্থায় বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষা করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আর সে অবস্থায় অনিবার্য হয়ে পড়ে বাকশাল গঠনের আবশ্যকতা। বঙ্গবন্ধু দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রধান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক পরামর্শ করেন। সবার ঐকমত্যে বাকশালের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়।

বাকশাল ব্যবস্থায় একজন চেয়ারম্যান, একজন সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটির এক-তৃতীয়াংশ চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত হবেন। কোনো সংগঠন, সংস্থা বা কমিটির কোনো সদস্যপদ শূন্য হলে, তদস্থলে চেয়ারম্যান নতুন সদস্য নিয়োগ করবেন। কাউন্সিলে চেয়ারম্যান ৫০ জন পর্যন্ত মনোনয়ন করবেন।

বিভিন্ন সরকারি বা আধাসরকারি দফতর বা প্রতিষ্ঠান, করপোরেশন, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীসমূহের প্রতিনিধি থাকবে। বাকশালের কৃষিব্যবস্থায় প্রতিটি গ্রামের মানুষ এক হয়ে জমি চাষ করবে, চাষের উপকরণ দেবে সরকার, উৎপাদিত ফসল তিন ভাগ হবে, একভাগ পাবেন জমির মালিক, একভাগ চাষে নিয়োজিত শ্রমিকরা এবং আরেক ভাগ সরকার। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের বর্তমান বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধু ৭৫-এ যা ভেবেছিলেন, ৪৪ বছর পর আজ তার অনিবার্যতা স্পষ্ট।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!