• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বমঞ্চে দ্রুততম গোলদাতা এখন উবার চালক


ক্রীড়া ডেস্ক জানুয়ারি ১৬, ২০২০, ০৫:২৫ পিএম
বিশ্বমঞ্চে দ্রুততম গোলদাতা এখন উবার চালক

ঢাকা: কেনা জানে তুরস্কের একসময়কার দূরন্ত ফুটবলার হাকান সুকুরের কথা? ২০০২ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ শুরুর মাত্র ১০.৮ সেকেন্ডে গোল করেন তিনি। দুর্দান্ত ফ্রি-কিক থেকে তার করা সেই গোলটিই এখন পর্যন্ত বিশ্বমঞ্চে দ্রুততম গোল হয়ে আছে। আর ওই সময় সুকুরের অর্থ, যশ, খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি সবই ছিল। তবে সময়ের ব্যবধানে এখন নিঃস্ব সুকুর। খবর স্পোর্তবাইবেল।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে উবার চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন সাবেক তুর্কি এই ফুটবলার। মাঝে মধ্যে বইও বিক্রি করেন তিনি। অতীতে তুরস্কে জাতীয় বীরের মর্যাদা ভোগ করতেন সুকুর। ফুটবলপ্রেমীদের নয়নমণি ছিলেন তিনি। ২০১১ সালে দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল একেপিতে যোগ দেন সুকুর। সেটিই তার জীবনের মস্ত বড় ভুল বলে জানান সুকুর। স্পষ্টভাষী সুকুর একপর্যায়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের চক্ষুশূলে পরিণত হন। তার দলের রোষানলে পড়ে নিজেকে আলবেনিয়ান দাবি করে বসেন তিনি। 

ফলে তুরস্কের জনগণের সমর্থনও হারান ৪৮ বছর বয়সী ফুটবলার। একর পর এক মামলা শুরু হয় সুকুরের নামে। ২০১৬ সালে সুকুরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার বিচার শুরু করে তুরস্ক সরকার। তার সব সম্পত্তি (স্থাবর-অস্থাবর) বাজেয়াপ্ত করেন আদালত। দেশ থেকে তাকে বিতাড়িত করা হয়। সুকুর আত্মগোপনে থাকায় গ্রেফতার করা হয় তার বৃদ্ধ বাবাকে।

এমতাবস্থায় ২০১৭ সালে প্রাণভয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আসেন তারকা এই ফুটবলার। সম্প্রতি জার্মান আউটলেট ওয়েল্ত অ্যাম সোন্ত্যাগে সাক্ষাৎকার দেন সুকুর। সেই সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে সুকুরকে নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল। সেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বেঁচে থাকার তাগিদে এখন আমি উবার চালাই। আমার নিজের বলতে বর্তমানে আর কিছুই নেই। 

এরদোগান সব কেড়ে নিয়েছেন। আমার স্বাধীনতা, আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও কাজের অধিকার সব কেড়ে নিয়েছ এরদোগান সরকার। ‘আমার সঙ্গে এমন কিছু করার কোনো যুক্তি দেখি না। আমি অবৈধ কিছু করিনি। আমি বিশ্বাসঘাতক কিংবা সন্ত্রাসীও নই’-যোগ করেন সুকুর।

পরিবারের ওপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, আমি বর্তমান তুর্কি সরকারের শত্রু হতে পারি। তবে সেই রাষ্ট্র বা জাতির নই। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। এরদোগানের সঙ্গে সম্পর্ক আলগা হওয়ার পর আমি হত্যার হুমকি পেতে শুরু করেছি। দোকানে আমার স্ত্রী হামলার শিকার হয়েছেন। আমার ছেলেমেয়েদের হয়রানি করা হয়েছে। আমার বৃদ্ধ বাবাকে জেল দেয়া হয়েছে। আমার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।

সুকুর আর বলেন, তাই আমি তুরস্ক ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছি। প্রথমে ক্যালিফোর্নিয়ায় আমি একটি ক্যাফে চালাতাম।সেখান থেকেও বের হয়ে যেতে বাধ্য হই। এখন আমি উবার চালাই এবং বই বিক্রি করি।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে গ্যালাতাসার, ইন্টার মিলান ও ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের হয়ে খেলেন সুকুর। গোল করেন আড়াইশর বেশি। পাশাপাশি জাতীয় দলের হয়ে ১১২ ম্যাচে ৫১ গোল করেন ‘বুল অব বসফরাস’ খ্যাত ফুটবলার।

তার জীবিকার তাগিদে সব হারিয়ে উবার চালালেও নিজের পরিচয় গোপন রাখার চেষ্টা করেন সুকুর। ফলে তার ট্যাক্সিতে ওঠা যাত্রীরা জানতেও পারেন না, চালকের নামের পাশে রয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল ইতিহাস দ্রুততম গোলের রেকর্ড।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!