• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ মে, ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

বেত শিল্পের দৈন্যদশা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৫, ২০১৮, ০১:২৮ পিএম
বেত শিল্পের দৈন্যদশা

ঢাকা : বাঁশ ও বেত বাগান সৃজন প্রকল্পের আওতায় ২০০৫-০৬ সালে শ্রীপুর সদর, সিংড়াতলী, গোসিংগা, সাতখামাইর, কাওরাইদ, শিমলাপাড়া, রাথুরা বিটে মোট ২০০ হেক্টর জমিতে উপকারভোগীর মাধ্যমে বেত বাগান সৃজন করা হয়। ২০০৯-১০ সালে শিমলাপাড়া বিটের অধীনে ৪ হেক্টর, ২০১০-১১ সালে একই বিটে ৫ হেক্টর জমিতে বেত রোপণ করা হয়। পুনরায় ২০১১-১২ সালে শ্রীপুর সদর, গোসিংগা, সাতখামাইর, শিমলাপাড়া বিটগুলোতে মোট ১৫ হেক্টর জমিতে বেত রোপণ করা হয়।

এ ছাড়া ২০১২-১৩ সালে গোসিংগা বিটে ২.৫০ হেক্টর ও একই বিটে ২০১৩-১৪ সালে ৭ হেক্টর জমিতে বেত রোপণ করা হয়। তাদের হিসাব মতে, গত ২০০৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত শ্রীপুর উপজেলার সাতটি বিটে মোট ২৩৩.৫০ হেক্টর জমিতে বেত বাগান সৃজন করা হয়েছে। উপকারভোগী নজরুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামের ১০-১২ জন উপকারভোগী বেতের প্লট পেয়েও কোনো সুবিধা করতে পারেনি।

পরিকল্পিতভাবে এ খাতটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করলে একসময় খুব লাভজনক হয়ে উঠতে পারে বেত বাগান। বেত দিয়ে তৈরি আসবাবপত্র বিক্রেতা রহমত মিয়া জানান, বেতকে ঘিরে আমাদের দেশে কুটির শিল্পের বিপ্লব ঘটতে পারে। অনেকের কর্মসংস্থান হতে পারে এ বেত শিল্পকে ঘিরে। বেত দিয়ে তৈরি আর্কষণীয় পাটি, মোড়া, ঝুড়ি, চেয়ার, টেবিল, সোফাসেট, খাট, দোলনাসহ বিভিন্ন দৈনন্দিন আসবাবপত্র তৈরি করা যায়।

তিনি বলেন, আমাদের অঞ্চলের এসব আসবাবপত্রের চাহিদা পূরণ করতে সিলেট থেকে কাঁচামাল (বেত) আনতে হয়। সরকার উদ্যোগ নিয়ে এ অঞ্চলে আরো বেশি বেত বাগান সৃজন করলে এখানে উৎপাদিত বেত দেশীয় ঐতিহ্য কুটির শিল্পে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে।

বিট কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমাদের এ অঞ্চলে জালি ও গোল্লা- এই দুই প্রজাতির বেত ভালো জন্মে। বন বিভাগও এ প্রজাতির বেতগুলো বনে কর্মসৃজন করছে। বন বিভাগ আপ্রাণ চেষ্টা করছে সৃজন করা বেত ও বাঁশ বাগানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তিনি আরো জানান, সৃজন করা বেত বাগানের মোট বিক্রীত মূল্যের ৪৫ শতাংশ উপকারভোগী পাবে- এ শর্তে বেত বাগানের প্লট পাচ্ছে উপকারভোগীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী নাহিদা বেগম জানান, বেত আমাদের দেশীয় প্রজাতির উদ্ভিদ। আমাদের দেশে ১২-১৩ প্রজাতির বেত ছিল। বিভিন্ন প্রতিকূলতায় পড়ে এরই মধ্যে ছয় প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাকিরা রয়েছে জীবন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়।

তিনি বলেন, বান্ধরি বেত, গোল্লা বেত, জালি বা জায় বেত, বুদুম বেত, উদুম বেত ও বড় বেত বা কেরাগ প্রজাতির বেতগুলো বিভিন্ন বন জঙ্গলে কোনো রকমে বেঁচে আছে।

তিনি আরো বলেন, বেত ও বাঁশ শিল্প আমাদের দেশীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত, বেকার যুবক-যুবতীদের কর্ম তৈরি করে এ দেশের ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পকে আরো সমৃদ্ধি এনে দিতে পারে। প্রকৃতিতে আরো বেশি করে বেত ও বাঁশকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি বলেন, একটি খুশির খবর হলো পার্বত্য অঞ্চলের লামায় ২০-২৫ প্রজাতির বাঁশ রয়েছে। যা সংরক্ষণে স্থানীয়রা বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। বেত ও বাঁশ শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে এখনই বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিতে হবে। অবাধে বেত ও বাঁশ নিধন বন্ধে সুপরিকল্পনা নিতে হবে।

শ্রীপুর উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, বেত রোপণের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বনকে সুরক্ষা দেওয়া। বেত হচ্ছে বনের প্রাকৃতিক পাহারাদার। আজ বেত নিজেই বিভিন্ন প্রতিকূলতায় পড়ে ধ্বংসের পথে। তবে বনে আবারো সগৌরবে বেতকে ফিরিয়ে আনতে বন বিভাগ বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে।

আবারো পর্যাপ্ত পরিমাণ বেত পাওয়া যাবে বনের ভেতরে। কুটির শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে, প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় মাটির ক্ষয় রোধ ও বনের নিরাপত্তার জন্য বনের ভেতর বেত বাগান করা খুবই প্রয়োজন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!