• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভূতের মুখে রামনাম


সেলিম আহমেদ ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৯, ০৩:২৩ পিএম
ভূতের মুখে রামনাম

ঢাকা : ৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিতর্কিত ভূমিকায় ছিল জামায়াতে ইসলাম। যুদ্ধপরাধের দায়ে ইতোমধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন হয়ে অনেক শীর্ষনেতার ফাঁসি হয়েছে, কারাবন্দিও রয়েছেন কয়েক নেতা আবার বিচারকাজও চলছে অনেক নেতার। নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধনও বাতিল করেছে। বর্তমানে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে অন্ধকারে। আদৌ সংগঠনটি কোন অবস্থায় আছে তা জানেন না দেশের সাধারণ জনগণ এমনকি রাজনীতির অন্দর মহলের অনেকই। ধর্ম ব্যবসায়ী এ দল নিয়েও মাথা ব্যাথা নেই দেশের মানুষের।

এ অবস্থায় গত শুক্রবার দল থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার পদত্যাগের কারণ হিসেবে তিনি দুটি বিষয় সামনে এনেছেন। এর একটি হচ্ছে, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত তাদের সংঘটিত অপরাধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করার জন্য ভুল স্বীকার করে এদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করা। আরেকটি হলো, স্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের আলোকে জামায়াত নেতাদের নিজেদের সংস্কার করতে না পারা।

এই দুটি বিষয়ের ভিত্তিতে তিনি জামায়াত থেকে পদত্যাগ করে এ রাজনীতির সঙ্গে আর যুক্ত না থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। আসলে স্পষ্টভাবে বলতে গেলে সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামের ভেতরে একটি নতুন ভাবনা উঠে এসেছে। তারা নিজেদের নতুনভাবে গোছাতে চায় এবং ভিন্ন আদলে তাদের চেহারা তুলে ধরতে চায়। সম্ভবত গত ছয় বছরে লন্ডনে প্রবাসী আবদুর রাজ্জাক অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, সাবেকি কাঠামোয় জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে আর এগোনো যাবে না। এ জন্যই তিনি এতদিন পর জামায়াত থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে আমি সে বিষয় নিয়ে বেশি এগুতো চাই না।

আমার প্রশ্ন হলো-ব্যারিস্টার রাজ্জাক দীর্ঘদিন থেকে জামায়াতে ইসলামের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। বর্তমান সময়ে দলটির প্রথম সারির কয়েক নেতার মধ্যে তিনি অন্যতম। রাজ্জাক ছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের মামলায় জামায়াতের পক্ষের প্রধান কৌঁসুলি। কাদের মোল্লার ফাঁসি হওয়ার ৫ দিনের মাথায় দেশত্যাগ করেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। এরপর থেকে লন্ডনে অবস্থান করছেন। আকষ্মিক দল থেকে পদত্যাগ করলেন তিনি। আর দলকে দিলেন নানা নীতির বাণী। কিন্তু তিনি নিজে জামায়াতের দর্শন ছাড়বেন, সেটা কিন্তু বলেননি। পদত্যাগ করে দলকে ক্ষমা চাওয়ার উপদেশ দিলেও তিনি তার দীর্ঘদিন দিনের ভুল পথে চলার জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাননি আর ক্ষমা চাইবেন কি না তাও বলেননি।

এখন তাকে যদি প্রশ্ন করা হয় তিনি কেন জাতির কাছে ক্ষমা চাইলেন না? তাহলে হয়তো তিনি সোজাসাপ্টা উত্তর দিবেন, আমি একাত্তরে জামায়াত করেননি। গণহত্যার রক্তের দাগ তার গায়ে নেই।

হ্যাঁ, মেনে নিলাম রাজ্জাকের গায়ে সেই কলঙ্ক লেপন করা নেই। কিন্তু তার সারাটা জীবন কেটেছে সেই কলঙ্কের সঙ্গে। জামায়াত শুধু মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কিত ভূমিকা পালন করে থেমে যায়নি। তারা দেশদ্রোহিতা ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আর সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত ছিল পুরোটা জীবন। বিশেষ করে বাংলাদেশে নির্বাচন এলেই সংখ্যালঘুদের ওপর যে হামলা-নির্যাতন হয় সেসব হামলায় অগ্রভাগে নেতৃত্ব দিয়েছে এ জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরাই। ২০০১ ভোটের পর সংখ্যালঘুদের ওপর যে সহিংসতা হয়েছিল, তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিল বিএনপি, পেছনে ছিল জামায়াত।

জামায়াত এদেশের কিছু সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করে সাম্প্রদায়িক প্ররোচণা ও উস্কানির মধ্যে রাখতে চেয়েছে। ইসলাম বিপন্ন বলে প্রচার করে করে এ পর্যন্ত এসেছে। এই ধর্মব্যবসার রাজনীতি কোনো সামাজিক কল্যাণের কাজে উৎসাহ দেয় না। বরাবর যে রাজনীতি তারা করেছে সেই রাজনীতি হলো ভয় দেখিয়ে লোক খ্যাপানো, জুম্মা বারের নামাজি সমাবেশ থেকে রণহুঙ্কার তোলে ধর্মীয় সহিংসতাকে উস্কিয়ে দিত।

কই, ব্যারিস্টার রাজ্জাকতো সে সময় এর কোনো প্রতিবাদ করেননি। এখন এসেছেন বাংলার মানুষকে নীতি কথা শুনাতে। গণমাধ্যমে জামায়াতকে সংস্কার আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলে আবারো মানুষের মগজ ধোলাই করে সমর্থন নিতে। বাংলার মানুষ যে জামায়াতকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে, সে জামায়াতকে আবারো নতুন রূপে নিয়ে এসে আবারো দেশের তরুণদের বিপদগামী করছে চাচ্ছেন। দেশের মানুষ ভালো করেই বুঝে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের এ নীতি কথা ‘ভূতের মুখে রামনাম’ ছাড়া কিছু নয়।

লেখক: সাংবাদিক
ই-মেইল : [email protected]

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!