• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসা ও মন্ত্রীকে নিয়ে গুজব


মালয়েশীয়া প্রতিনিধি জুলাই ২৯, ২০১৯, ০২:১১ পিএম
মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসা ও মন্ত্রীকে নিয়ে গুজব

ঢাকা : মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে অপপ্রচার চলছে। এ অপপ্রচারে সক্রিয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা কৌশলে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, উইচ্যাটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এ অপপ্রচার চালাচ্ছেন। চক্রটি এবার বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদকে নিয়েও অপপ্রচার চালাচ্ছে।

তারা ফেসবুকে ছড়াচ্ছে, ‘প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী এখন মালয়েশিয়ায়। শ্রমচুক্তি হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো। ইত্যাদি….ইত্যাদি!’

তিনি যখন স্থানীয় কর্মসূচি নিয়ে সিলেটে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তখন, ‘বিটিভি ভি এস মালয়েশিয়া’ এবং কতিপয় ব্যক্তি মন্ত্রীর গোপনে মালয়েশিয়া সফর এবং উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছে মর্মে সংবাদ প্রচার করে।
সিলেটে অবস্থানরত প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী এমরান আহমদের সঙ্গে সোমবার (২৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় মোবাইল ফোনে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রী এ প্রতিবেদককে বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে যারা অপপ্রচার করছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উভয় দেশের সরকার একসঙ্গে কাজ করছে। নতুন একটি পদ্ধতি চূড়ান্ত করা এখন সময়ের ব্যাপার। পুরনো পদ্ধতি ঠিকঠাক কাজ করছিল না বলেই নতুন পদ্ধতি করা হচ্ছে। আমরা সবাইকে নিয়েই এটা করছি। দ্রুত একটা সমাধানে আমরা পৌঁছে যেতে পারব।

ইমরান আহমদ আশ্বস্ত করে বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া এবার চালু হবে, তাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি যেন বাছাই হয়, লোক পাঠানোর খরচ যেন সাশ্রয়ী হয়, কোথাও কোনো আইন যেন লঙ্ঘন না হয়- তা নিশ্চিত করা হবে।

এমন চক্রের কারণে একদিকে ক্ষুণ্ন হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি অন্যদিকে সহায়-সম্বল বিক্রি করে পথে বসছে হাজার হাজার যুবক।

এ ছাড়া ফেসবুকের মাধ্যমে বিদেশে যেতে ইচ্ছুকদের ব্যাপারে চটকদার বিজ্ঞাপন ও সর্বনিম্ন মূল্যে বিদেশে যাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাটাস আপডেট করা হচ্ছে।

বলা হচ্ছে, আপনাদের মোবাইল ফোন নম্বরটা দেন, আমরা যোগাযোগ করে নেব। ওই নম্বরে যোগাযোগ করে বলা হচ্ছে, মেডিকেল পরীক্ষা করে আসেন, ভিসা পাওয়া যাবে। মেডিকেল পরীক্ষা করার পর নেয়া হচ্ছে ৫০ হাজার টাকা।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলার জহিরু ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ, বেতন, আবাসিক, চিকিৎসা ইত্যাদি নিশ্চিতের কাজ করছে হাইকমিশন। অপতৎপরতার কারণে ভালো উদ্যোগগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বন্ধুরাষ্ট্রের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিরূপতা তৈরি হচ্ছে। তাদের কারণে বৈধরাও নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। দূতাবাস সব অপতৎপরতা রুখে দিতে কাজ করছে।

ফেসবুকে অপপ্রচার-সংক্রান্ত বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে’- বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের কার্যক্রম ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হওয়ার প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশসহ সোর্স কান্ট্রিভুক্ত ১৬ দেশ থেকেই বিদেশি কর্মী আমদানি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। তবে আবার কোন প্রক্রিয়ায় বিদেশি কর্মী নেয়া শুরু হবে, সে জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের নির্দেশে মানবসম্পদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (কেডিএন) মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ করছে। তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত হলেই স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে দেশটি শ্রমিক নেয়ার কার্যক্রম শুরু করবে বলে সে দেশে থাকা রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের একাধিক বৈঠকে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে।

কিন্তু তার আগেই বাংলাদেশের কিছু মিডিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার ও মালয়েশিয়া সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে বলে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকেই অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এসব অভিযোগ নিয়ে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রতিনিয়ত নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ সরকারের গ্রিন সিগন্যালের পর ২০১৬ সালে ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী যাওয়া শুরু হয়। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই ২০১৮ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কলিং ভিসায় দেশটিতে পাড়ি জমান দুই লাখ ৯৭ হাজার শ্রমিক। এরপরই মালয়েশিয়ার নতুন সরকার (এসপিপিএ পদ্ধতি) দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার কার্যক্রম স্থগিতের ঘোষণা দেয়। পরে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে দেশটির সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হলে সেটি ২০১৮ সালের  ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এরপর থেকে আর কোনো বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে বৈধভাবে যেতে পারেননি।

তবে অভিযোগ রয়েছে, এ সময়ের মধ্যে রিক্রুটিং ও ট্রাভেল এজেন্সির মনোনীত দালালদের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করে আকাশপথে ও টেকনাফ দিয়ে সাগরপথে হাজার হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে ট্যুরিস্ট ও ভিজিট ভিসার নামে পাড়ি জমিয়েছেন। যাদের বেশির ভাগ এখন দেশটিতে পালিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন নতুবা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগার/ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রয়েছেন।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় নাজিব রাজাক সরকার নির্বাচনে পরাজিত হলে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি এসেই ঘোষণা দেন, বাংলাদেশ থেকে যে প্রক্রিয়ায় লোক আসছে, সেভাবে তারা আর লোক নেবেন না। মিয়ানমার, নেপাল, ভারত পাকিস্তানসহ ১৬টি সোর্স কান্ট্রিভুক্ত দেশ থেকে তারা একই সিস্টেমে কর্মী আমদানি করার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। এমন ঘোষণার পরই দেশটির শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে একাধিক বৈঠক করেন বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম। তার সঙ্গে বৈঠকের পরই নতুন কোন পদ্ধতিতে এবং কত কম টাকায় কর্মী আনা যায়, তা নিয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয় দুই দেশেই

সর্বশেষ চলতি বছরের মে মাসের প্রথম দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সপ্তাহব্যাপী দেশটি সফর করেন। তিনি সফর থেকে ফিরে আসার পরই ৩০-৩১ মে আবারও দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বায়রা নেতৃবৃন্দ আশা করেছিলেন, মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে হয়তো নতুন কোনো ঘোষণা আসতে পারে। কিন্তু বৈঠকে নতুন কর্মী না নেয়ার ঘোষণা দিয়ে অবৈধ শ্রমিকদের কীভাবে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়, সেটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলকে কোন পদ্ধতিতে এবং কত কম টাকার মধ্যে শ্রমিক পাঠাতে পারবে সেটি দ্রুত জানাতে বলে দেয় তারা।

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শ্রমিক নেয়ার কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। আমরা তাদের অনুরোধ করে সময় বাড়িয়ে তা ৩১ ডিসেম্বর করেছিলাম। এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে দুই লাখ ৯৭ হাজার শ্রমিক এসেছেন। তারা সবাই কাজ করছেন। এরপর চার-পাঁচ মাস গেল। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমাদের দেশের মিডিয়াতে যে যেভাবে পারছে লিখে যাচ্ছেন? এতে মালয়েশিয়া সরকার খুবই বিরক্ত।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা তো শুধু আমাদের ক্ষেত্রে চিন্তা করলে হবে না, তাদেরও প্রায়োরিটি আছে। তারা কখন কী করবে, না করবে সে সিদ্ধান্ত তারাই নেবে। আসলে শ্রমবাজার নিয়ে ওরা একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে, পৃথিবীর সব দেশগুলোকে নিয়ে। এ নিয়ে তারা বিভিন্ন কমিটি করেছে। কমিটি ফাইনাল পেপার তৈরি করবে। এগুলো আমার দেশে আর্জেন্ট হতে পারে। কিন্তু তাদের কাছে এটা আর্জেন্ট কিছু না। এর মধ্যে কেউ লিখছে এই মার্কেট আর কোনো দিন খুলবে না। এটা আবার বন্ধ হয়েছে। এত লাখ লোক জেলে। এসব শুনে মালয়েশিয়ানরা ভিষণ ক্ষিপ্ত।

সোনালীনিউজ/এএম/এএস    

Wordbridge School
Link copied!