• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আসছে গরম, ব্যস্ত কারিগর


আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৮, ০১:৫৩ পিএম
আসছে গরম, ব্যস্ত কারিগর

তালপাখা তৈরিতে ব্যস্ত নারীরা

ঝিনাইদহ: কালীগঞ্জের হাত পাখা তৈরির কারিগরদের যেন বাতাস নেয়ার সময় নেই! গরমে মানুষকে একটু শান্তির পরশ দিতে দিন রাত পরিশ্রম করে হাতপাখা বা তালপাখা তৈরি করছেন তারা। পূর্ব পুরুষের এই ব্যবসা করে এখনো সংসার চালাচ্ছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ প্রায় অর্ধশত পরিবার। 

গরম শুরুর সাথে সাথে তাদের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে কয়েকগুন। এদের কোনো জমি নাই, যেখানে চাষ করে জীবন চলাবে। পাখা তৈরিই তাদের একমাত্র জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম। উপজেলার দুলালমুন্দিয়া, পারিয়াট, চাচড়া, আড়পাড়া ঘুরে এই শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গরম পড়লেই তাদের বস্ততা বেড়ে য়ায়, আর শীতকালে বেকার থাকতে।

গ্রামে এখনো শীতের প্রভাব থাকলেও রাজধানী ঢাকার মত শহরগুলোতে কোনো শীত নেই; রীতিমত ঘমতে হয় পথচারীদের। তাই ব্যস্ত কালীগঞ্জের এই কারিগররা। যেন কথা বলারও সময় নেই। শরীর দিয়ে নোনতা পানি বের হলেও, নিজের তৈরি পাখা বাতাসে জিরানোরও অবকাশ নেই।

কেউ বা পাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ সেলাই করছে; আবার কেউ বা পাখা তৈরি করেছে। তাদেরই একজন আব্দুল গফুর বললেন, তাদের পূর্ব পুরুষরা এই তালপাখা তৈরি করে জীবন জীবিকা চালাতো। ফলে তারাও পূর্ব পুরুষের কাজটিই বেছে নিয়েছেন। তিনি জানান, কালীগঞ্জে প্রায় ৫০টি পরিবার পাখা তৈরির কাজ করেন। 

কুষ্টিয়া থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানালেন, কালীগঞ্জের তালপাখা এলাকার ক্রেতাদের কাছে রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। 

শীতে পাতা সংগ্রহ করতে হয়
প্রতিটি বাড়িতেই পাখা তৈরি কাজে এত ব্যস্ত যে কাউকে একটু সময় দেয়ার ফুসরত নেই। কাজের চাপে অনেকে সকালের খাবার, রাতে খায়।
 পাখা কারিগর নজরুল ইসলাম জানান, পাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করা হয় শীতকালে। মাগুরা, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে পাতা সংগ্রহ করতে হয়।

এই তালপাতা এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। তারপর পাতা ভিজে নরম হয়ে গেলে পানি থেকে উঠিয়ে তা কেটে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা পাতায় দুটো পাখা হয়। এই পাতা পুনরায় বেঁধে রাখা হয়। এভাবে রাখার পর গরমের মৌসুম আসার সাথে সাথে সেগুলো আবার পানিতে ভিজতে দেয়া হয়। 

পাতা থেকে পাখা
পানিতে ভিজিয়ে পাতা নরম হয়ে গেলে শুরু হয় মূল পাখা তৈরীর কাজ। সাধারণত পরিবারের বড়রা পানিতে ভিজে নরম হয়ে যাওয়া পাতা ছাড়িয়ে পাখা আকৃতির করে চারিদিক কেটে সমান করে থাকে। আর বাড়ির মেয়েরা সেগুলো বাঁশের শলা (কাঠি) দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরিবারের ছোট সদস্যরা এগুলো সুচ আর সুতা দিয়ে সেলাই করে থাকে। এভাবে ব্যবহারের উপযোগী একটি তালপাখা তৈরী হয়। পর তাতে বাহারি রঙ লাগিয়ে বিক্রি করা হয়। 

শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই পাখাশিল্পী
বাড়ির ছেলে, মেয়ে, শিশুরা গৃহবধূ ও বৃদ্ধ সবাই মিলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১/২টা পর্যন্ত পাখা তৈরির কাজে ব্যাস্ত থাকেন। গৃহবধূরা জানান, তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দু, বেলার খাবার রান্না করে রাখে। দুপুরে গৃহবধূরা কেউ রান্না করে না। তারা সকাল ও রাতে রান্না করে। 

নজরুল আরো জানান, তাদের তৈরিকৃত পাখা পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করা হয়। এখান থেকে পাইকাররা প্রতিপিস পাখা ১২/১৫ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে খুচরা ২০/২২ টাকায় বিক্রি করে। 

মূলত পাখা ব্যবসা থাকে গরমের ৩/৪ মাস। কালীগঞ্জের পাখা বিশেষ করে কুষ্টিয়া, মাগুরা, রাজশাহী, নাটোর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙাসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়িরা এসে পাইকারি দরে পাখা কিনে নিয়ে যায়। কালীগঞ্জ উপজেলায় এরা খুচরা ও বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়িদের কাছে পাইকারি হিসাবে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু এরা সবার তালপাখার বাতাস খাওয়ানোর জন্য পাখা তৈরি করে অথচ নিজেরা কোন সময় পাখার বাতাস খায় না।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!