• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
জীবন সংগ্রাম

এক হাতেই চলছে ফারুকের অদম্য জীবন যাত্রা


এস. কে সাহেদ, লালমনিরহাট অক্টোবর ৪, ২০১৬, ১০:০৮ এএম
এক হাতেই চলছে ফারুকের অদম্য জীবন যাত্রা

কষ্ট আর বেদনা নিয়ে একটি হাত নিয়ে চলছে লালমনিরহাটের প্রতিবন্ধী ফারুক হোসেনের (৪৫) অদম্য জীবন সংগ্রাম। কারো মুখাপেক্ষি নয় এই প্রতিবন্ধী নিজেই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে চায়, আর বেঁচেও আছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। কিন্তু জীবন সংগ্রামের রুপ চিন্তা কখনো কখনো থমকে দাড়িয়ে যায় আর তাকে ভাবায়, কাঁদায়। নিজের সামান্য আয়ে নুন আনতে পানতা ফুরানোর দশা কিন্তু কখনোই নিজের দুদর্শার চিত্র কাউকে বুঝতে না দিয়ে এগিয়ে চলছে ফারুক।

লালমনিরহাট পৌরসভার খোচাবাড়ি নজরুলটারী এলাকার খয়রাত হোসেন ও ফাতেমা বেগমের ছেলে ফারুক হোসেন জন্মের মাত্র দুই বছর পরই তাকে একটি হাত হারিয়ে হতে হয়েছে শারিরীক প্রতিবন্ধী। ১ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে ফারুক সবার ছোট। সব বোনের বিয়ে হয়ে গেছে । এখন বৃদ্ধ বাবা-মার ভরণ পোষনের ভার পরেছে ফারুকের উপর। দুইবছর আগে জানুফা বেগম নামের এক মেয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের আগ থেকেই ফারুক লালমনিরহাট জেলা থেকে প্রকাশিত স্থানীয় একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা অফিসে কম্পিউটার অপেরাটর পদে চাকুরি করছে। বাম হাত নেই ফারুকের, একটি মাত্র হাত ডান হাত। এই একটি হাতই তার সম্বল। এক হাত দিয়েই স্বাভাবিক মানুষের মতই কাজ করতে পারে ফারুক। একহাত দিয়েই সে ওই পত্রিকা অফিসটিতে অন্য সবার মত দ্রুত কম্পিউটার কম্পোজ করতে পারে। সুমিষ্টভাসি প্রতিবন্ধী ফারুক হোসেন সবসময় নিজেকে কাজের মধ্যে রাখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। পত্রিকা অফিসের স্বল্প বেতনে ফারুকের সংসার চলে না তাই সে বাড়তি আয়ের জন্য সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে টিউশনি করছে। এমনিভাবে চলছে প্রতিবন্ধী ফারুকের জিবনের অদম্য পথ চলা।
 
শারিরীক প্রতিবন্ধীতা ফারুককে দমাতে পারেনি। সে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। লালমনিরহাট গিয়াস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, লালমনিরহাট সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও কালীগঞ্জ করিম উদ্দিন পাবলিক ডিগ্রী কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে ডিগ্রী পাশ করে ফারুক। অর্থের অভাবে আর পড়াশুনায় এগুতে পারেনি ফারুক। বছরের পর বছর সরকারী চাকুরীর পেছনে হন্যে হয়ে ছুটেছিল ফারুক কিন্তু টাকা আর মামা না থাকায় কোন কাজ হয়নি। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে ছুটে যায় রাজধানী ঢাকায়। সেখানে উপযুক্ত কাজ যোগাতে না পেরে যোগ দেয় দৈনিক জনতা পত্রিকা অফিসে সহকারী সার্কুলেশন ম্যানেজার হিসেবে। দীর্ঘ ১০ বছর চাকুরী করে অবশেষে বাড়ীতে ফিরতে হয় ফারুককে। তবে থেমে যায়নি পথচলা, আবার শুরু করে টিউশনি, যোগ দেয় স্থানীয় পত্রিকা অফিসে কম্পিউটার অপেরাটর পদে।

প্রতিবন্ধী ফারুক হোসেন জানান, আগে টিউশনি পড়িয়ে কিছু আয় করতাম কিন্তু এখন স্কুলের শিক্ষকরাই টিউশনি দখল করে রেখেছে তাই আমি আর তেমন টিউশনি পাচ্ছি না। এদিকে সামান্য আয়ে সংসার চলাতে হিমশিম খাচ্ছি। বাঁচতে চাই সংগ্রাম করে, নিজের পায়ে দাড়িয়ে কিন্তু সামর্থ্য না থাকায় কিছুই করতে পারছি না। সহযোগিতা পেলে ভালো কিছু করার ইচ্ছা আছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!