• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
সিন্ডিকেটের জালে বন্দি বিএনপি

ক্ষোভ নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছেন খালেদা জিয়া


বিশেষ প্রতিনিধি আগস্ট ১৩, ২০১৬, ০২:৪২ পিএম
ক্ষোভ নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছেন খালেদা জিয়া

সিন্ডিকেটের জালে বন্দি হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। যার প্রতিফলন ঘটেছে বিএনপির ঘোষিত নতুন জাতীয় কমিটিতে। কমিটি ঘোষণার পরদিন থেকেই দলের সিনিয়রদের নেতাদের মাঝে পদত্যাগ প্রবণতা দেখা যায়। বিষয়টি প্রথমে আমলে না নিলেও এখন পদবঞ্চিত ও পদাবনত নেতাদের মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি হাইকমান্ড। একই সঙ্গে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নের জন্য অভিযুক্ত সিন্ডিকেটকে 'তিরস্কার' করেছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি দলের যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের তালিকা তৈরি করারও নির্দেশ দিয়েছেন।

শিগগির বিএনপি ঘোষিত নতুন জাতীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদে রদবদল করা হবে। একই সঙ্গে ..যোগ্য নেতাদের স্থান করে দিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির পরিধিও বৃদ্ধি করা হতে পারে। দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটি ২১ বা ২৩ সদস্য বিশিষ্ট করা হতে পারে। সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমানসহ বিক্ষুব্ধ সিনিয়র নেতাদের সর্বোচ্চ ফোরামে স্থান করে দেয়া হতে পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, কাউন্সিলে তারা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কমিটি গঠনে সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করেছেন। একটি শক্তিশালী ও গতিশীল নেতৃত্ব তৈরিতে দলের চেয়ারপারসনের ওপর তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। দলে এখন যে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে তারা আশা করেন, তা নিরসন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান দ্বিধাবিভক্ত ও হতাশাগ্রস্ত কমিটি নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন কঠিন হতে পারে। তার বিশ্বাস, চেয়ারপারসন সবাইকে নিয়ে বসে ঘোষিত কমিটিকে পুনর্গঠন করে সকলকে উজ্জীবিত করতে সক্ষম হবেন।

কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পরপরই দলের ভেতর ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দেয়। প্রথম দিকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি বিএনপি হাইকমান্ড। কমিটি ঘোষণার পরদিনই দলের সিনিয়রদের বিক্ষুব্ধ নেতাদের বোঝানোর পরামর্শ দিয়েছেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দু-একজন সিনিয়র নেতা বিএনপি চেয়ারপারসনকে কমিটি পুনর্মূল্যায়নের পরামর্শ দিলেও তা আমলে নেননি তিনি। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের নিয়ে বড় বড় শিরোনাম হয়েছে বলে খালেদা জিয়াকে জানালেও তিনি তার অবস্থানে অনড় থাকেন। এ পরিস্থিতিতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বঞ্চিত নেতাদের আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিচ্ছেন। বাদ পড়া বা অবমূল্যায়ন হওয়া নেতাদের আগামীতে প্রাপ্য পদ দেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন তিনি। একই সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খানসহ সিনিয়র নেতারাও ক্ষুব্ধ নেতাদের ধৈর্য ধারণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন।

অবশ্য দলের হাইকমান্ডের ধৈর্য ধারণের পরামর্শ আমলে নিচ্ছেন না ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। দলের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল নোমান ও সহসভাপতি মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ স্বপদে থেকে আর রাজনীতি করতে আগ্রহী নন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এরই মধ্যে হাফিজউদ্দিন আহমেদ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেই তার বক্তব্য জানিয়েছেন। অন্যদিকে আবদুল্লাহ আল নোমান গণমাধ্যমে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। পুনর্মূল্যায়ন না করলে দলের অনেকেই পদত্যাগ বা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকার চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

সূত্র জানায়, সিনিয়র নেতাদের পরামর্শে অবশেষে কিছুটা নমনীয় হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। একই সঙ্গে গুলশান কার্যালয় ও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের ওপর রীতিমতো রুষ্ট খালেদা জিয়া। বুধবার গুলশান কার্যালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেটের অন্যতম শীর্ষ নেতাকে খালেদা জিয়া 'তিরস্কার' করেন। ভুল বুঝিয়ে কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গুরুত্বহীন পদ দেওয়া এবং পদবঞ্চিত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সিনিয়র নেতাদের নাম জুনিয়র নেতাদের পরে দেওয়ায় ওই সিন্ডিকেট নেতার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে তিনি বলেন, 'এসব কীভাবে হলো?' তার নজরে না এনে কিছু নেতাকে পদপদবি দেওয়া এবং পদাবনতি দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি নেত্রী। একই সঙ্গে গ্রেফতারি পরোয়ানা এড়াতে আত্মগোপনে থাকা সিন্ডিকেটের আরেক শীর্ষ নেতার ওপরও ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া। ওই নেতা একসঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও উচ্চ আদালতের মামলার জামিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও সঠিকভাবে আইনি লড়াই না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। ওই দুই নেতার ওপর দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও অসন্তুষ্ট বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পদবঞ্চিত ও অবমূল্যায়িত নেতাদের নাম সংগ্রহ করে তালিকা তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং বিএনপির বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক জানান, বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিবারই নতুন কমিটি ঘোষণায় কিছু ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে। পরে রদবদল করে তা ঠিক করা হয়।

বিএনপির সহসভাপতি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, একটি বড় রাজনৈতিক দলে সবাইকে পদ দিয়ে খুশি করা সম্ভব নয়। দলে অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা থাকেন। সবাই বড় পদ প্রত্যাশা করেন। তবে এবারের কমিটিতে ইতিবাচক দিক হলো ২৫ শতাংশ নেতৃত্ব তরুণ। একই সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবী নেতাও। তিনি মনে করেন, এ মুহূর্তে পদপদবি বড় কথা নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই বড় কথা। তিনি আশা করেন, নতুন এ কমিটির মাধ্যমে সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!