• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদ হামিদীর একগুচ্ছ কবিতা


খালেদ হামিদী ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭, ০৪:৩৯ পিএম
খালেদ হামিদীর একগুচ্ছ কবিতা

লক্ষ্মী পূজায় এবার

তুমি মা, হাতির পিঠে চড়ে কেন এলে ধরাধামে!
সৌর ব্যবস্থাপকের সঙ্গিনী হয়েও, দেখো,
আমার অকিঞ্চিৎকর সমূহ অর্জন আর
জন্মভিটাও হঠাৎ উপড়ে হস্তিপৃষ্ঠে তুলে ওরা যায় শ্যেন দৃষ্টি হেনে।

নিহতের’ পর হাঁটা হৃতসম্ভ্রম ও
জখমেও ক্ষীয়মাণ আমাদের কান্তার কি মরুভেদী ক্ষিপ্র
ধাবমানতায় কেন সামনে এসে পড়ে
শুধু পানি আর পানি! অনন্তর দিগন্ত পেরোয়
সমুদ্রের সব বিরাট তরঙ্গমালা।

তবে ফের কোথায় পালাই!
স্মৃতিই কি শেষাবধি অস্তিত্বের কেন্দ্র?
নইলে কেন, মাগো, আশ্চর্য পেঁচার পাশে
পদ্মাসনে তুমি এখনো দেদীপ্যমান!

এদিকে ওদিকে তবু কারা যেন কহে:
ইংরেজি বইয়ের সারি-কলামের সম্মুখে পাঠক
এক রাখেন কাঠের শো পিস সুচারু কালো ছোট ঐরাবত,
সেই ভাষা-সাহিত্যের আভিজাত্য বুঝে!
কেউ বলে, সাগর ও আকাশের সন্ধিস্থলে কখনো হারিয়ে গেলে
লক্ষ্মীছাড়া পেঁচামুখে আমিও তাকাবো দূর সভ্যতার দিকে।

ধর্ষিত শিশুর রক্ত

মুঠোয় দুর্ধর্ষ রতি, হেড ফোনে প্রবল শিৎকার;
কোথায় নিবদ্ধ দৃষ্টি? রিকশায় চলেছে একা কিংবা ভিন্ন যানে
কোন্ তরুণ অথবা তন্বীগণ? মুষ্টিতে চিত্রিত
আমারও রিরংসা, কভু। পথ চলতে কখনো হঠাৎ
দৃষ্টি থেকে নেমে চিবুকের নবতর
মানানসই দাড়ি, কারুর ঈষৎ দীর্ঘ
চকচকে গোঁফের গুচ্ছ, মিষ্টি হাস্যময়
নেত্রপাতের চকিত প্রখর তারুণ্য,
ত্রিদিকের লঘু বিন্যাসের ওপর চুলের
অভিনব অগ্নিশিখা কিংবা ফিলিপিনা
হেন আস্কন্ধ কেশের আশ্চর্য ববকাট,
বর্তুল বুকের জোড়া কিসমিস অথবা
লিপস্টিকময় দুই ঠোঁটের বহুত্ববাদ
স্পর্শের আলপনা আঁকে আমারও নানান
অনুভবে শুধু নয়, শিরার রক্তেও।
তাই বলে আমিও কি, স্পন্দিত ওদেরই
কারুর সমান্তরালে, কিয়ৎ দিঘল মাছে সংগুপ্ত নিজেকে
আবিষ্কারে আনন্দিত? জানার আগেই
প্রচণ্ড বৃষ্টির সঙ্গে আকাশচ্যুত অসংখ্য কাচকির
জীবন্ত রুপায় ভ‚মি ক্রমশ আস্তীর্ণ হলে কোত্থেকে রক্তিম
ক্ষীণ রেখা এসে চিরে ফেলে দৃশ্যপট।
তৎক্ষণাৎ ছাতা ফেলে বজ্রাহতের ধরনে সটান দাঁড়িয়ে
পড়ি, আর, কে যেন কানের কাছে
বর্ষণ ছাপিয়ে কহে : হাসপাতাল থেকে
ধর্ষিত শিশুর রক্ত কিভাবে এখনো
এতোদূর বয়ে আসে!

কার কথা কারে কমু

‘বন্ধুকে কেন ভালোবাসিবো না’ ব’লে
হ্লে দোস্তের এঁকে গলে ও কপোলে
অভ্যর্থনা কে জানায় সন্ধ্যায়
পথিপার্শ্বের ভাসমান আড্ডায়?
তখন কানুন ব্যস্ত অন্য কোথা,
দর্শক কেউ বিস্ময়ে থামে, যথা
দুর্মুখ ক্রোধে আপাতত বাক্হারা,
নাম পরিচয়ে তবে কি সীমিত ওরা?
অভিন্ন কিবা অমিলের যোগে নয়,
মানুষ তাহলে কিভাবে অসীম হয়?

মরুদেশে মোলাকাতের অর্ধ চুমু
মনে এলে কার কথা ভেবে কারে কমু!

তোমাকে, ফিদেল ক্যাস্ট্রো

আমি হলুদের ফুল, সর্ষে পাতা কিংবা থানকুনির ভর্তাযোগে ভাতই খেতে চেয়েছি কেবল। হেলেঞ্চার মর্ম থেকে উৎসারিত রক্তাক্ত ফিনকি একদা জাতীয় পতাকাকে আহত করছে দেখেও কাচকির সাথে খেলে, মলার সঙ্গে মিলে এবং ডাঙায় হামাগুড়ি এঁকে, আরও পরে ভুবন জুড়ে বুকে হেঁটে কিভাবে, কি করে যেন পাড়ি দিয়ে ফেলি আধেক শতাব্দী! নিজ গৃহশূন্যতায়, সংশ্লিষ্ট তাড়ায় আর বিভিন্ন ভাড়ায় অনন্তর ঠাঁই বদলের মজদুর বাংলার ফিলিস্তিনি আমার, মেলেনি আজও প্রাণ ভরে কিংবা নিজেকে উজাড় করে কাঁদবার ফুরসত। তথাপি তোমার পতাকার নিচে আমারও উড়েছে চুল।

পরিমাণবাদীদের তাচ্ছিল্যের নানা স্তর ডিঙিয়ে আমি কি আদুরে মধ্যম আজ? কতিপয় উত্তম চালিয়ে নিলে সংখ্যাহীন অধমদের, ক্ষুন্নিবৃত্তির সংগ্রামী সাথীদের সঙ্গে কোথায় দাঁড়াই তবে? প্রশ্নের অনতি পরে, জিজ্ঞাসার ঢের আগে, মাথা ঘষে মার্কিন ডলারে পুণ্যবান আখ্যায়িত যারা তাদের অনুজ কতো মহাসাগরে ঝাঁপ দেয়, সে অর্থের দিকে ভাসে বিরাট, বিশাল হরেক টায়ারে। এদিকে ওদের বিপরীতে আমি কি পুরোই ন্যুব্জ, বিচ্ছিন্ন, পরাস্ত? জানার আগেই তোমার ভূভাগ থেকে উড়ে এসে হামিংবার্ড আমারই সত্তার অতলে নিবিড় খোঁজে কোন অবশেষ? ক্ষুদ্রতম পাখিটির ক্রিয়ার সমান্তরালে, তোমাকে, ফিদেল ক্যাস্ট্রো, প্রণতি জানিয়ে রাখি, যে-তুমি দেহাবসানের পরেও সদা বিদ্যমান। যদিও, এখনো নই আমি নিজেরও সমান।

চেনো না আমাকে তুমি

তোমরা আমার শুধু বাস্তু হরণে ক্ষান্ত নও, আমাকে সপ্রজাতি নিশ্চিহ্ন করতেও অসম্ভব কৃতকার্য বলেই কি তোমাদেরই লক্ষ লক্ষ বৎসর পরের কিংবা কয়েক শত বছর আগেকার প্রজন্ম, কেটে নেয় বহু দূরান্বয়ী স্বজনের জিভ কঙ্গোয়, লাইফবয় হ্যান্ড ওয়াশ লিকুইড ছাড়াই ক্ষিপ্র ধুয়ে ফেলে নিজেদের রক্তাত হাত এবং কখনো বিষ্ঠাকীর্ণ শিশ্ন দক্ষিণ আফ্র্রিকায় ? হায়! ছি! তোদের ধরনে নই মনুষ্যপ্রতিম। তবু বলি কাউকে না কাউকে: শয়নে, রমণে, আহারে ও সর্বদা বিহারেও ভীষণ সংলগ্ন থেকেও চেনো না আমাকে তুমি, কিছুতেই, এক্কেবারেই না। উপরন্তু শুনতেই পাও না তোমাদের ব্যঞ্জন বর্ণের দুরন্তপনাশুন্য আমার স্বরবর্ণময় জবান, মুখরতায় যা শোনায় গানের অনুরূপ। কে বা কারা ঘোষণায় আজো তৎপর আমার অনস্তিত্ব! ফিলিস্তিন কি তামিল, বাগদাদ কিংবা দামেস্ক এবং এমনকি ত্রিপোলি জুড়েও এখনো প্রবহমাণ সেই তুরকানা হ্রদ, নিহত অথচ জ্যান্ত, কিন্তু মৃতবৎ খোলা চোখে চিৎ হয়ে আধো ডুবে ভেসে আছি অন্য নিয়ান্ডার্থাল, সঙ্গে কাছে ও দূরে বাতাসকে চোখ মেরে, কনুইয়ে আকাশ গেঁথে ও আরো নানান ভঙ্গিতে আমারই আবালবৃদ্ধবনিতা। একই জলভ‚গোলে ভাসমান আমার নিছক খাদ্য সংগ্রহের পাথুরে অস্ত্র, কাষ্ঠনির্মিত সিংহমানবের সজাগ আনন, কর্ণালংকার আর ছোট্ট ঢোলকতুল্য আশ্চর্য বাজনা। তুমি কিন্তু জানো না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!