• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

চতুর্ভূজ প্রেমে খুন শাম্মী: ৪ প্রেমিকই ঘাতক!


সেলিম আহমেদ, জেলা প্রতিনিধি মে ২১, ২০১৭, ০৯:০৬ পিএম
চতুর্ভূজ প্রেমে খুন শাম্মী: ৪ প্রেমিকই ঘাতক!

গ্রেপ্তার চার প্রেমিক ঘাতক (ইনসেটে শাম্মী)

মৌলভীবাজার: রাজনগর উপজেলায় কলেজছাত্রী শাম্মী বেগম (১৮) খুন একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর পেছনে রয়েছে তারই চার প্রেমিক। তারাই নিজেদের প্রতারিত ভেবে প্রতিশোধ নিতে পরিকল্পিতভাবে প্রেমিকা শাম্মীকে জঙ্গলে নিয়ে হত্যা করেছে।

রোববার (২১ মে) মৌলভীবাজার আদালতে শাম্মী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন ঘাতক প্রেমিকদের অন্যতম আলকুম মিয়া। রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

নিহত শাম্মী (১৮) রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের কাছাড়ী করিমপুর গ্রামের হারুন মিয়ার মেয়ে ও তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

ঘাতক প্রেমিকারা হচ্ছেন- কাছাড়ী করিমপুর গ্রামের গনি মিয়ার ছেলে আলকুম মিয়া(২৩), তমজির আলীর ছেলে বরকত হোসেন সুমন ওরফে বক্কর(২৫), মকবুর মিয়ার ছেলে দিপু মিয়া(২৫) ও উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের সুনাটিকি  গ্রামের ছকা মিয়ার ছেলে মাজহার মিয়া (২৫)।

পুলিশ সূত্রমতে, শাম্মীর সঙ্গে প্রথমে আলকুম মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সে প্রেম চলে বেশ কিছুদিন ধরে। এরপর শাম্মী একে একে বরকত হোসেন সুমন, দিপু মিয়া ও মাজহার মিয়ার প্রেমের জালে জড়িয়ে পড়েন। এক সঙ্গে একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার প্রমাণ পেয়ে ক্ষুব্ধ হন প্রথম প্রেমিক আকলুম মিয়া। এনিয়ে দুজনের মধ্যে কয়েক দফায় ঝগড়া ঝাটিও হয়। এক পর্যায়ে প্রেমিকা শাম্মীকে হত্যার হুমকিও দেন আলকুম।

শাম্মীর একাধিক সম্পর্কে জড়ানোর ঘটনা এক এক করে জেনে যান চার প্রেমিক। তারা এক সঙ্গে বসে নিজেদের প্রতারিত হিসেবে চিহ্নিত করে। এরপর শাম্মীকে শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে গেল ১৭ মে সন্ধ্যায় কাছাড়ী করিমপুর গ্রামে বৈঠক করে চার প্রেমিক। বৈঠকে শাম্মীকে হত্যা করার পরিকল্পনা আসে প্রথম প্রেমিক আলকুমের মাথা থেকে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী পরদিন বৃহস্পতিবার (১৮ মে) দুপুরে বরকত হোসেন সুমন শাম্মীর বাড়িতে গিয়ে তাকে একবার দেখে আসেন। এরপর সন্ধ্যায় দিপু গিয়ে তার মায়ের সঙ্গে গল্প করতে থাকে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাম্মীর ফোনে মিসডকল আসে। এরপর শাম্মী টয়লেটের কথা বলে ঘর থেকে বের হয়। এরপর আর ঘরে ফিরে আসেনি।

শুক্রবার (১৯ মে) দুপুরে গ্রামের একটি টিলায় শাম্মীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসী। পরে পরিবারের লোকজন লাশ শনাক্ত করে রাজনগর থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় পুলিশ নিহতের বাবার কথার সূত্রধরে প্রথমে বরকত হোসেন সুমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিপু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার বক্তব্যে অসংলগ্নতা পাওয়ায় তাদের আটক করা হয়। একই সময়ে শাম্মীর সহপাঠিকে দেয়া মোবাইল ফোনের হোয়াটসআপের একটি কথার সূত্রধরে প্রথম প্রেমিক আলকুমকে আটক করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে প্রেমিক শাম্মীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন প্রথম প্রেমিক আলকুম। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যার পরিকল্পনাকারী মাজহারকে রাতেই তার বাড়ি থেকে পুলিশ আটক করে। নিহতের বাবা আটক চারজনকে আসামি করে রাজনগর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

এদিকে শাম্মী হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে শনিবার (২০ মে) স্থানীয় বাজারে তারাপাশা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে ছিলেন অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম খান, ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মো. বশারত আলী, শিক্ষক মোবারক হোসেন, শিক্ষক শওকতুজ্জামান, আকবর আলী, টেংরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রিপন মিয়া, রইছ আলী প্রমুখ।

রাজনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, শাম্মী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪ ঘাতক প্রেমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এন

Wordbridge School
Link copied!