• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

চরম অব্যবস্থাপনায় সোনাকাটা ইকোপার্ক বেহাল


আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি  অক্টোবর ৮, ২০১৬, ০৫:২৭ পিএম
চরম অব্যবস্থাপনায় সোনাকাটা ইকোপার্ক বেহাল

চরম অব্যবস্থাপনায় বেহাল হয়ে পড়েছে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইকোপার্ক। দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য ১৬টি কাঠের সেতুর  ১২টি এখন চলাচলের অনুপযোগি। সড়কের হেরিংবনের ইট ও বিশুদ্ধ পানির জন্য স্থাপিত নলকুপ ও শৌচাগারের দরজা-জানালা ও বেসিন খুলে নিয়ে গেছে দুবৃত্তরা। ফলে এগুলো এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় দর্শনার্থীদের আগমন কমে গেছে পার্কটিতে।

পটুয়াখালী বন বিভাগ  সূত্র জানায়,  ইকো-ট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সখিনা বিটে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে  ২ কোটি  ৬৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৩৪ একর জমির উপর  ৯৬ হাজার ৬শ’টাকা ব্যয়ে একটি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। 

উপকুলীয় সংরক্ষিত প্রাকৃতিক সৌন্দের্য্যরে অপরূপ লীলাভুমি সোনাহাটি ইকোপার্ক। এখানে শীত মৌসুমে সড়ক পথে নৌ-ভ্রমনে আসা শত শত পর্যটকদের ভীড়ে মুখরিত হয়ে ওঠে এ বনাঞ্চল। বছরের কার্তিক মাস থেকে জ্যৈষ্ঠ মাস পর্যন্ত চলে পিকনিকের উৎসব।  দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভ্রমন ও পিকনিক করতে আসছে শত শত পর্যটক।

সোনাকাটা বনের ভিতরে বিভিন্ন প্রানী সংরক্ষনের জন্য ইটের দেয়াল ও লোহার রড দিয়ে  সীমানা প্রাচীর তৈরী করে এর মধ্যে চিতা বাঘ, হরিন, সজারু,শুকর, অজাগর, কুমির ও বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী অবমুক্ত করা হয়। পার্কটির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য পর্যটকদের জন্য পিকনিক স্পট, চলাচলেরর জন্য বনের ভিতরের ছোট ছোট খালের উপর ১৬টি কাঠের সেতু, ৪টি গভীর নলকুপ, ৪টি শৌচাগার, ২টি টিকেট কাউন্টার, ৪টি গোল আকারে বিশ্রামাগারসহ বনের ভিতরে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ইটের রাস্তা তৈরী করা হয়। ইকোপার্ক নির্মানের পর দীর্ঘদিন ধরে আর কোন সংস্কার না করায় এবং নির্মাণের সময় নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অল্পদিনের মধ্যেই পার্কটি বর্তমানে বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।

শনিবার সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বনের ভিতরে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য বসানো ৪টি নলকুপের ৩টি অকেজো হয়ে  পড়েছে।শৌচাগারে ৩টির দরজা-জানালা বেসিন খুলে নিয়ে গেছে দুবৃত্তরা। ফলে এসব শৌচাগার এখন সম্পূর্ন ব্যবহারের অনুপোযোগী। বনের ভিতরে দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য  ছকিনা খাল থেকে সাগরের মোহনা পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে তাতে ইট বিছিয়ে দেয়া হয়।  সংস্কারের অভাবে সড়কের অনেক যায়গার ইট সড়ে গিয়ে কাঁদা বেড়িয়ে গেছে। অনেক জায়গার ইট আবার চুরি হয়ে গেছে। এসড়কটি  এখন দর্শনার্থীদের চলাচলের সমপূর্ন অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কের মাঝে  ছোট ছোট ১৬টি খালের উপর ১৬টি কাঠের সেতু নির্মান করা হয়েছে। ১৬টি সেতুর মধ্যে ১২টি সেতুই সংস্কারের অভাবে সম্পূর্ন চলোচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। ৪টি সেতু দায়সাড়াভাবে সংস্কার করা হয়েছে। শুকনো মৌসুমে সেতুর পাশ দিয়ে কাঁদা মাটি পেরিয়ে চলাচল করতে হয়। বর্ষা আসলে চলচল সম্পূর্ন বন্ধ হয়ে যায়। পার্কের  প্রবেশ দ্বারে রয়েছে সকিনা খালের উপর একটি লোহার সেতু। সেতুর অনেক জায়গার পাটাতন খসে খালে পড়ে গেছে। সেতুর উপর লোকজন উঠলেই দুলতে থাকে ফলে ভয়ে সেতু পার হতে হয়। সেতুটি ধসে যেকোন সময় পার্কের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। 

এছাড়া পার্কের ভিতরে রয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য গোল আকৃতির ৪টি বিশ্রামাগার। এসকল বিশ্রামাগার সংস্কারের অভাবে পলেস্তারা খসে পড়েছে। বসার বেঞ্চের সিমেন্ট বালু উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এগুলোতে বসে কেউ আর বিশ্রাম নিতে পারে না। একটি আবার সাগরের ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেছে।  বন্য প্রাণীদের জন্য নির্মিত দেয়ালের উপর লোহার শেডে মরিচা ধরে অনেক জায়গায় ভেঙ্গে গেছে। দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। যে কোন সময় এগুলো ধসে বন্য প্রানী বেরিয়ে যেতে পারে। কুমির প্রজনন কেন্দ্রেরও একই অবস্থা। 

সংস্কারের অভাবে পুকুরটি ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে কুমিরগুলো মারা যাবার উপক্রম হয়েছে। ইকোপার্কে বেড়াতে আসা ঢাকার  নাহিদ বিন হাবিব  বলেন, পার্কের ভেতরে পরিবেশ ভালো নেই, পানি নেই, শৌচাগারের বেহাল দশা, হাটার রাস্তা নেই। সব কিছুতেই অব্যবস্থাপনা। দর্শনার্থী হাশিম খাঁ জানান, পার্কের  ভেতরে খুব খারাপ অবস্থা, সেতুর অভাবে হাটাচলার জায়গা নেই। এভাবে একটা বিনোদন কেন্দ্র  হয় না।  

সকিনা বিটের বন কর্মকর্তা ও পার্কের দায়িত্বরত সজীব কুমার মজুমদার বলেন, শুরুতে পার্কটি জমমাট ছিল। প্রতি দিন শত শত দর্শনার্থীর ভিড় ছিল। পার্কটির ভিতরের পরিবেশ খারাপ হয়ে যাওয়ায় এবং সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে দর্শনার্থী সংখ্যা অনেক কমে গেছে। দ্রুত সড়ক, সেতু ও বিশুদ্ধ পানির জন্য গভীর নলকুপ বসানো জরুরী হয়ে পড়েছে। তা না হলে পার্কটি আস্তে আস্তে তার জৌলুস হারিয়ে ফেলবে। 

পটুয়াখালী  বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র পার্কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বলেন, সোনাকাটা ইকোপার্ক সংস্কারের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট বরাদ্ধ চাওয়া হয়েছে বরাদ্ধ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!