• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাইলট থেকে অন্ধকার জগতে এসে বিশ্ব কাঁপিয়েছে এই নারী


ফিচার ডেস্ক ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭, ০৬:৪২ পিএম
পাইলট থেকে অন্ধকার জগতে এসে বিশ্ব কাঁপিয়েছে এই নারী

ঢাকা: সেক্স বা যৌনতা প্রকাশ্য নিয়ে আসার প্রচেষ্টা উনবিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি প্রথম ঘটিয়েছিলেন জার্মান মনবিজ্ঞানী ও চিকিৎসক সিগমুন্ড ফ্রয়েড তার বিখ্যাত মানুষের ‘যৌনক্ষুধা তত্ত্বে’র মাধ্যমে। তার আগেও অনেকেই যৌনতা প্রকাশ্যে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে, তবে ফ্রয়েডের তত্ত্বের মাধ্যমে এটা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিষয়টি আরো খোলামেলা করে তুলেছেন আরেক জার্মান নাগরিক। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানের নারী পাইলট ছিলেন। সেক্স চেইন শপের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। অনেকই হয়তো বুঝে ফেলেছেন কার কথা বলছি। হ্যাঁ, তিনি বেয়াটে উহসে রোটেরমন্ড।

বৈমানিক বেয়াটে উহসে

বৈমানিক থেকে কীভাবে ‘সেক্স সম্রাজ্ঞী’ হয়ে উঠলেন বেয়াটে উহসে?
বেয়াটে উহসে তার স্টান্ট পাইলটের লাইসেন্স পান ১৯৩৮ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি জার্মানির হয়ে মেসারস্মিট জঙ্গিবিমান চালিয়েছেন। অসম এই সাহসী নারী ১৯৪৬ সালে তিনি চিন্তা করেন কিভাবে গর্ভবতী হওয়া থেকে রেহাই পেতে পারে। এই পরই তিনি এ বিষয়ে একটি প্রচার পত্রিকা বাজারে নিয়ে আসেন।

এরপর তার পেছনে তাকাতে হয়নি। খুলে বসেন মেইল অর্ডার ব্যবসা। বিক্রি করেন বিভিন্ন যৌনউত্তেজক পণ্য। ভালোই চলতে থাকে; ফলে বেয়াটে উহসে-র ‘বৈবাহিক স্বাস্থ্যবিধি প্রতিষ্ঠানের’ প্রথম বিপণীটি খোলে ১৯৬২ সালে, ফ্লেন্সবুর্গে। 

যেখানে নারীদের অন্তর্বাস ও গর্ভনিরোধক পণ্য বিক্রি করা হতো। নৈতিকতা নিয়ে চিন্তিত নাগরিকদের দায়ের করা বহু মামলা সত্ত্বেও তিনি এটা চালিয়ে যান। 

সত্তরের দশকে জার্মানি যখন অবশেষে তার পর্নোগ্রাফি আইন শিথিল করে, ততদিনে বেয়াটে উহসের নাম জার্মানির সব প্রাপ্তবয়স্কের জানা হয়ে গিয়েছে।

এসবের মধ্যেও একটি টেলিভিশন সেক্স চ্যানেলও খোলেন। ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাকারের পতনের পর সাবেক পূর্ব জার্মানির বাসিন্দারাও বেয়াটে উহসের খদ্দের হন, যার ফলে তার ‘ইরোটিক’ পণ্যের বিক্রি বাড়ে দারুণভাবে। এভাবেই সেক্স জগতে নিজের অবস্থা পাকা পোক্ত করে তোলেন তিনি। ২০০১ সালে মারা যান এই সেক্স সম্রাজ্ঞী।

পর্নো সিডির প্রচারে বেয়াটে

বেয়াটের মৃত্যুর পর কিন্তু, তার সেক্স সম্রাজ্য আর ভালো কিছু করতে পারেনি। মাত্র দেড় দশকের মাথায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছে।  

গত ১৪ ডিসেম্বর তার ফ্লেন্সবুর্গে হোল্ডিং কোম্পানি ‘বিইউ’ দেউলিয়া হওয়ার নোটিশ দাখিল করে– তবে নিজের নিয়ন্ত্রণে ও আদালতের তত্ত্বাবধানে থেকে।

প্রতিষ্ঠানটির কর্মীসংখ্যা এখন মাত্র ১০, কিন্তু ইউরোপ জুড়ে তাদের যে ৪৩টি সেক্সশপ আছে – কোম্পানির প্রশাখাগুলি যেসব বিপণী চালিয়ে থাকে– সেখানে আজও প্রায় ৩৪৫ জন কর্মী নিযুক্ত।

পতন শুরু হয় ইন্টারনেট ভিত্তিক ভিডিও ক্লিপে – যার সঙ্গে ইন্টারনেট ভিত্তিক মেইল অর্ডার যুক্ত হয়ে যৌন পণ্য সংক্রান্ত ব্যবসায়ের ধারাপ্রকৃতিই বদলে যায়।

তার সেক্স সম্রাজ্যে বেয়াটে

‘বিইউ’ হোল্ডিং-এর মূল সমস্যা হলো বিনিয়োগকারীদের হাতে কোম্পানির প্রায় তিন কোটি ইউরো মূল্যের বন্ড বা কাগজ, যা ২০১৯ সালের মধ্যেই ফেরত দিতে হবে। ওদিকে কোম্পানি ২০১৬ সালে ১০ কোটি ইউরোর বেশি আয় করলেও, লোকসান হয়েছে সাকুল্যে প্রায় ৬২ লাখ ইউরো।

১৯৯৯ সালে বেয়াটে উহসে কোম্পানির শেয়ার যখন প্রথম বাজারে আসে, তখন তার মূল্য ছিল শেয়ার প্রতি ৭ ইউরো ২০ সেন্ট। পরে সেই শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছিল ২৮ ইউরো ২০ সেন্টে। ২০০৫ সালেও বেয়াটে উহসে কোম্পানি সবচেয়ে বেশি আয় করে। তা সত্ত্বেও ২০০৮ সালের মধ্যে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ৫৮ সেন্টে। গত সপ্তাহান্তে সেই শেয়ার বেচাকেনা হয়েছে মাত্র পাঁচ সেন্টে।

বেয়াটে উহসে যে সময়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেনি, এমন নয়। ২০০৪ সালে সংস্থাটি হামবুর্গে শুধুমাত্র নারীদের জন্য তাদের প্রথম সেক্সশপ খোলে, এমনকি কোম্পানির লোগো-তেও নারীসুলভ ছোঁয়া আনে। এ সব সত্ত্বেও এই বাজারে টিকতে পারছে না বিইউ। ধারণা কার হয় হয়তো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ওই কথায় সত্য হতে চলছে, একটি বিখ্যাত আদর্শ ১০০ বছরের বেশি টিকসই হয় না। সূত্র: রয়টার্স, দ্য লোকাল, ওয়াশিংটন পোস্ট, ডিডাব্লিউ

ভিডিও:

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএ

Wordbridge School
Link copied!