• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্ত প্রায় বেসরকারি ল্যান্ড ফোন কোম্পানি


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১৬, ২০১৬, ০৯:২৪ পিএম
বিলুপ্ত প্রায় বেসরকারি ল্যান্ড ফোন কোম্পানি

ওয়ানটেল, ওয়ার্ল্ড টেলিকম, এসএ টেলিকমসহ বেশ কিছু ল্যন্ডফোন কোম্পানি আরও এক যুগ আগে যাত্রা শুরু করলেও তেমন সাড়া পায়নি। দীর্ঘদিন ধুঁকে ধুঁকে এখন সেগুলোর দু’একটি ছাড়া বাকিগুলো কার্যত বিলুপ্ত হয়ে পড়েছে।

বেসরকারি ল্যান্ড ফোন কোম্পানিগুলোর (পিএসটিএন) কাছে বিটিআরসির পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু তা আদায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির দৃশ্যমান কোনো তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে না। আবার দেনা পরিশোধের আর্থিক সামর্থ্য হারিয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কারণ বেসরকারি পিএসটিএন (পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক) অপারেটরের ১১টির মধ্যে ৯টিরই দীর্ঘদিন কোনো কার্যক্রম নেই। বহুমাত্রিক সংকট সমাধানে উদ্যোগ না থাকায় এখন বিলুপ্তির পথে পিএসটিএন।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বিটিআরসি ২০০৪ সাল থেকে এক বছরের মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ঢাকা বাদে বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য ৩০টি পিএসটিএন লাইসেন্স দিলেও পরে লাইসেন্সের সংখ্যা পৌঁছায় ৩৭টিতে। শুরুতেই নানা তৈরি হয় সমস্যা। একই এলাকায় লাইসেন্স পায় একাধিক প্রতিষ্ঠান। নামসর্বস্ব কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেশি-বিদেশি অংশীদার খুঁজে সময় পার করে, কাজ শুরু করেনি যথাসময়ে।

বিটিআরসির নির্দেশনা মতে, ঢাকা বাদে সারা দেশে পিএসটিএন পরিচালনার জন্য তখন লাইসেন্স ফি দিতে হয় আট কোটি টাকা। ওই ফি ছাড়াও প্রতিটি জোনের জন্য পাঁচ কোটি টাকা করে জামানত রাখতে হয়। শর্ত ছিল, যেদিন লাইসেন্স ইস্যু হচ্ছে সেদিন থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে তাদের কমপক্ষে ৫০ হাজার টেলিফোন সংযোগের ব্যবস্থা করতে হবে। এর অন্যথা হলেই শাস্তি। জামানত বা পারফরম্যান্স ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা থেকে জরিমানা হিসেবে ৪০ শতাংশ কর্তনের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কমিশন। এসব শর্ত মেনেই লাইসেন্স নিয়েছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান ওই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ২০০৭ সাল নাগাদ ছয়টি প্রতিষ্ঠান অপারেশন শুরু করতে সক্ষম হয়নি। বিটিআরসি সে বছর দুটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে এবং গ্রাহকসংখ্যা বাড়াতে না পারায় দুই কোটি টাকা করে জরিমানা আদায় করে তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।

বিটিআরসির তথ্য অনুসারে, ২০০৯ সালের জুন মাসে বিটিসিএলসহ পিএসটিএন অপারেটরদের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬১। ওই সময় মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ছিল চার কোটি ৬৭ লাখ ১৫ হাজার ৮০০। এরপর ২০১০ সালে ভিওআইপির অবৈধ কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে পাঁচটি পিএসটিএন অপারেটর র‌্যাংকস টেলিকম, ন্যাশনাল টেলিকম, পিপলস টেলিকমিউনিকেশন, ঢাকা টেলিফোন ও ওয়ার্ল্ডটেলের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। পরে ২০১১ সালে র‌্যাংকস টেলিকম, ন্যাশনাল টেলিকম ও ওয়ার্ল্ড টেলিকমের লাইসেন্স ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

বিটিআরসির তথ্য অনুসারে, বিভিন্ন সময়ে বাতিল বা সারেন্ডার করা হয়েছে ২৫টি লাইসেন্স। র‌্যাংকস টেলিকম ও বাংলাফোন ছাড়া আর কোনো পিএসটিএন অপারেটরের কার্যক্রম চালু নেই। র‌্যাংকস টেলিকমের অ্যাক্টিভ গ্রাহক ২৩ হাজার ৮২৮ এবং বাংলাফোনের গ্রাহক মাত্র ২৭৫ জন বলে জানতে পারে বিটিআরসি।

সূত্র জানায়, পিএসটিএন অপারেটরদের কাছে পাওনা ও সমস্যার বিষয়গুলো গত দুই বছরে বিটিআরসি মাত্র দুটি সভায় আলোচ্যসূচিতে স্থান পায়। অপারেশনে নেই এমন পিএসটিএন লাইসেন্স বাতিল করা, পাওনা আদায় এবং বরাদ্দকৃত স্পেকট্রাম ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরে তা কার্যকর হয়নি নানা জটিলতায়। পিএসটিএন অপারেটরদের কাছে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওনার পরিমাণ মোট ৬৪ কোটি ৯৮ লাখ ৬৩ হাজার ২৩ টাকা দাঁড়িয়েছে।

এদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সময়োপযোগী নীতিমালা ও সিদ্ধান্তের অভাবেই প্রচুর বিনিয়োগ করে তারা সর্বস্বান্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে অপারেটরদের। এছাড়া অপারেটরদের বরাদ্দ দেওয়া স্পেকট্রাম দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!