• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোদীর ওপর তিস্তার ভার, নিশ্চিন্ত হাসিনা


শেখ আবু তালেব, সিনিয়র রিপোর্টার এপ্রিল ৮, ২০১৭, ০২:০৫ পিএম
মোদীর ওপর তিস্তার ভার, নিশ্চিন্ত হাসিনা

ফাইল ছবি

ঢাকা: তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনীতিতে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। এ নিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিও উত্তপ্ত করে রেখেছে বিরোধী দলগুলো। এর প্রভাব পড়েছে সুশীল সমাজ ও কূটনৈতিক মহলে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার সরকারের চলছে বেশ টানা পোড়েন। তবে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, তিস্তা চুক্তি নিয়ে বেশ ভারমুক্ত আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদীর ওপর সব ভার দিয়ে অপেক্ষায় আছেন সু-খবর শোনার জন্য।

দীর্ঘ বিরতির পরে গেল ৭ এপ্রিল দিল্লিতে দ্বিপাক্ষিক রাষ্ট্রীয় সফরে গেছেন শেখ হাসিনা। কাঙ্ক্ষিত এই সফরটি গত বছরের ডিসেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিস্তা ইস্যুতে দু’বার পিছিয়েছে এ সফর। আগের সফরের সময়ে ট্রানজিট ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারসহ দ্বিপাক্ষিক কয়েকটি চুক্তি নিয়েই আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়া এই সফরে নতুন যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত প্রতিরক্ষা চুক্তি।

প্রধানমন্ত্রীর এবারের দিল্লি সফরকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে ভারত সরকার। পদ ছাড়াও শেখ হাসিনাকে ব্যক্তি হিসেবেও মূল্যায়ন করতে চাইছে দেশটি। সফরের প্রস্তুতি, শেখ হাসিনাকে বরণ ও তিস্তা নিয়ে ভারতের খোলা-মেলা আলোচনা সেই বার্তাই দিচ্ছে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর নিয়ে গত ৪ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। সেসময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের সময়ে দুই দেশের মধ্যে ৩৩টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে।

আলোচিত তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে বলেছিলেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমাদের সম্পর্ক এখন যে অবস্থানে আছে, সেখানে আমরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি। সেখানে একটি বিষয় হলো কি হলো না, সেটি তেমন বড় কিছু নয়। সম্পর্কের বিষয়টি সামগ্রিক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন সাহসী বক্তব্যে বেশ স্পষ্ট হয় তিস্তা ইস্যুর বল এখন ভারতের কোর্টে। এর আগেও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন বাংলাদেশে। কিন্তু মমতার আপত্তিতে আলোচিত চুক্তিটি হয়নি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশ্বস্ত এক সূত্র জানিয়েছে, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখন বহুমাত্রিক। সীমান্ত ছাড়াও ভারতের অর্থনীতির বড় অংশীদার বাংলাদেশ। দিল্লির প্রয়োজনে ট্রান্সশিপমেন্টের মতো স্পর্শকাতর চুক্তিও করেছে বাংলাদেশ। অপরদিকে, দেয়া-নেয়ার সম্পর্কে মোদীও চাইছেন বাংলাদেশের মর্যাদা রক্ষা হোক। এজন্য তিস্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ এখন আর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তেমন চিন্তিত নন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার ভারতীয় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়ে দিয়েছে তিস্তা চুক্তি নিয়ে তিনি আশাবাদী। তবে এর পুরো ভার মোদী ও তার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন।

এজন্য এবারের সফরের শেষ মুহূর্তের চমক দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। তিস্তার পানি বণ্টন কবে হবে তা নিয়ে সময় চাইলেও চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত হতে পারে বলে বাংলাদেশ আশাবাদী বলে জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্র।

এ বিষয়ে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ সরকার সমর্থক এক কূটনীতিক বলেছেন, সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের একটি বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য আওয়ামী লীগকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য মোদী নিশ্চয়ই কোনো পথ বের করবেন। মমতাকে অন্যকোনো ভাবে পুষিয়ে দিতে পারেন বলেও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে। বহুমাত্রিক বিষয়ে যোগাযোগের ফলেই সরকারের মধ্যে এ বিশ্বাস জন্মেছে জানিয়ে ওই কূটনীতিক বলেন, তিস্তা চুক্তি বা এ বিষয়ে কোনো রূপরেখা নির্ধারিত না হলে বিরোধী রাজনৈতিক মহল বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াত এ নিয়ে রাজনীতি করবে। এ সুযোগ দিতে চাইছেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে চুক্তি করতে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। তা বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশনের কাছে রয়েছেও। এছাড়ও ভারত সরকারের কাছে কূটনৈতিক চ্যানেলের মধ্যে ঢাকার পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের সময়েই চুক্তিটি হওয়ার কথা চূড়ান্ত হয়েছিল, কিন্তু মমতার আপত্তিতে হয়নি।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে নতুন কোনো খবর দেয়া হয়নি। তবে, ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি পৌঁছালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেছেন দেশটির আমলারা। মমতার দাবি ও সুবিধা ঠিক রেখে কীভাবে পানি বণ্টন করা যায় তা নিয়ে চলছে ম্যারাথন বৈঠক।

এর আগে ভারতীয় মিডিয়ায় মমতা বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ ঠিক রেখেই বাংলাদেশের বিষয়টি ভাববেন। কূটনীতিকরা মনে করছেন, এর ভেতরেই কোনো সমাধান বের করতে পারেন মোদী। ভারতীয় পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মোদী সরকার শেষ মুহূর্তে কিছু একটা করতে পারেন। এবারের সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি করার প্রস্তাব নেই। পুরোটাই হচ্ছে ভারতের আগ্রহে। এজন্য শুধু তিস্তার দাবিতে বেশি পানি ঘোলা করা ঠিক হবে না ভারতের।

গত কয়েকটি রাজ্য সরকার নির্বাচনে জেতার পরে মোদীর অবস্থান ও ব্যবস্থাপনা শক্তি আরো মজবুত হয়েছে। সেই শক্তির প্রভাব মমতার ওপরও কাজে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!