• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

রাবার বাগানে বেড়েছে লোকসান, শ্রমিকদের দুঃসময়


কাজল সরকার, হবিগঞ্জ সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮, ০৩:২০ পিএম
রাবার বাগানে বেড়েছে লোকসান, শ্রমিকদের দুঃসময়

হবিগঞ্জ: ক্রমাগত লোকসান গুনতে হচ্ছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজীবাজার রাবার বাগানে। বিদেশ থেকে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্কে কাঁচা রাবার আমদানি করায় দেশীয় উৎপাদনকারী রাবার বাগান এখন দিন দিন লোকসানে পড়েছে।

এক কেজি রাবার উৎপাদনে খরচ হয় ২৮০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি মাত্র ১২৫ থেকে ১৫০ টাকায়। ফলে কেজিতে লোকসান হচ্ছে ১৫০ টাকা। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএফআইডিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান শাহজীবাজার ৩ শতাধিক রাবার শ্রমিকের দুঃসময় চলছে। যেন নুন আনতে পানতা পুড়ায় আর পানতা আনতে নুন।

যে শ্রমিক রাবার গাছ থেকে কষ সংগ্রহ করে এক সময় রাবার শিল্পকে সমৃদ্ধি করেছিল আজ এই শ্রমিক অতি কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। যে বেতন পাচ্ছে তা দিয়ে পরিবার পরিজন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, ২০১৩ সাল থেকে রাবার বাগানে এমন দুর্দিন শুরু হয়েছে। দেশে কাঁচা রাবারের চাহিদা রয়েছে প্রায় ২০ হাজার টন। কিন্তু দেশে উৎপাদন হচ্ছে ১৫ হাজার টন। বাকি রাবার বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। যারা দেশি রাবার ক্রয় করেন তাদের ১৫ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। উচ্চ মূল্যে কর দেওয়ার কারণে অনেকেই বিদেশ থেকে রাবার আমদনি করতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

যে কারণে দেশে উৎপাদিত রাবার বিক্রি হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই দেশি রাবার কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে রাবার বাগানগুলো প্রতি বছর লোকসানের মুখে পড়ছে। ১৯৮০ সালের দিকে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের উদ্যোগে শাহজীবাজারে ২১শ’ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫৮ হাজার রাবার গাছ লাগানো হয়। একটি রাবার গাছের আয়ুষ্কাল হচ্ছে ২৫ বছর। এরই মধ্যে শাহজীবাজার রাবার বাগানের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার গাছ জীবনচক্র হারিয়েছে।

শাহজীবাজার রাবার শ্রমিক লুৎফুর রহমান বলেন, গাইবান্ধা থেকে ১৯৯০ সালে ৬শ’ টাকা বেতনে যুবক বয়সে রাবার বাগানে শ্রমিকের চাকরী নিয়েছিলাম। আশাছিল একদিন ভাল বেতন পেয়ে সংসার চালাবো কিন্তু ২৮ বছর হয়ে গেল এখনো আশানুরুপ কোন বাড়েনি। যে স্বল্প বেতন পাই তা দিয়ে থাকা খাওয়ার খরচ বাদে বাড়িতে স্ত্রী সন্তান মা বাবার জন্য যে টাকা পাঠাই তা অতি নগন্য। একই অবস্থা প্রায় সাড়ে ৩শ’ শ্রমিকের।

এ কারণে রাবার শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও শ্রমিকদের মজুরী বিষয়ে কোন কথা বলছে না। কোন শ্রমিক এ নিয়ে কথা বলতে গেলে বদলি ও বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়া হয়।

শ্রমিকদের অভিযোগ সারা দেশে রাবার বাগানের কাঁচা রাবার বিক্রি করে ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকে সঞ্চয় করে রাখা হয়েছিল। এ টাকার লভ্যাংশ হিসেবে ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে প্রত্যেক শ্রমিক ৩৬ হাজার টাকা করে লভ্যাংশ পায়। কিন্তু এর পর থেকে আর কোন লভ্যাংশ দেওয়া হচ্ছে না। এর কোন জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নেই।

শাহজীবাজার রাবার বাগান শ্রমিক কর্মচারী সভাপতি আলামিন জানান, বর্তমান সরকার সম্প্রতি মজুরী কমিশন করে ইস্পাত, চিনি, বস্ত্র, রাসায়নিক এবং রাবার শ্রমিকদের বেসিক বেতন ৮ হাজার ৭শ’ টাকা করার ঘোষণা দিলেও বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফআইডিসি) এর বাস্তবায়ন করছে না। এতে করে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই স্বল্প বেতনে চাকুরী করে শ্রমিকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃসময় কাটাচ্ছেন।

তিনি বরেন- মজুরী কমিশন বাস্তবায়িত হলে শাহজীবাজার রাবার বাগানে শ্রমিকদের কষ্টের দিন কেটে যেত। ঘোষিত মজুরী কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য শ্রমিকরা মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি পালন করেছে।

শাহজীবাজার রাবার বাগানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মতুর্জ আলী জানান, রাবার গাছের বয়সের পাশাপাশি শ্রমিকদেরও বয়স বেড়েছে। এখন রাবার শিল্পের দুঃসময় চলছে। প্রতি বৎসর রাবার বাগানে অর্ধেক টাকা লোকসান দিতে হয়। তবে শ্রমিকদের মজুরী কমিশন বাস্তবায়ন করা হলে তাদের দুঃখ কষ্ট দুর হবে।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!