• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘হামরা ভ্যালেন্টাইন বুজি ন্যা’


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৭, ০৬:৪৭ পিএম
‘হামরা ভ্যালেন্টাইন বুজি ন্যা’

রংপুর: ‘বাহে ভালোবাসার জনতে বিশেষ কোন দিন নাগে না। তোমার একদিনের ভালোবাসা দিয়্যা কি হইবে। ভালো থাইকপ্যার জনতে হামার প্রত্যেক দিনে ভালোবাসা নাগে। হামরা ইগল্যা ভ্যালেন্টাইন বুজি না।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রিক্সাচালক বজলার মিয়া। 

বজলার মিয়ার সুরেই কথা বলেন ভিক্ষুক রহিম বাদশা। পয়ষট্টি বছর বয়সী এই বৃদ্ধ বলেন, ‘বাবা মোর মেল্যা বয়স হইছে, মুই আগোত ইগল্যা দিবসের নাম শোনোং নাই। মোক মাইনষে ভালোবাসি করুণা করি ভিক্ষা দেয়। মুই প্রত্যোক দিনে মাইনষের ভালোবাসা পাও। এ্যলাকার জুয়ান ছাওয়া পোয়ারা একদিনের ভালোবাসর জনতে পাগল হইচে বাহে।’ 

মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপনে নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে উচ্ছাস আর উদ্দীপনা দেখা গেছে তার ছিটে ফোটাও চোখে পড়েনি হত-দরিদ্র অসহায় মানুষদের মধ্যে। সমাজের নিম্ন শ্রেণীর মানুষ আর খেটে খাওয়া দিনমজুর শ্রমিকের ভ্যালেন্টাইনস ডে যেন এখনো অধরাই রয়ে গেছে। 

তবে তরুণ যুবক দিনমজুর, শ্রমিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে অনেকেই দেখা গেছে ভালোবাসা দিবস পালন করতে নতুন সাজসজ্জ্বায়।

উল্লেখ্য, সময়টা ২৬৯ খ্রিস্টাব্দ। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক, যিনি একাধারে একজন চিকিৎসকও ছিলেন। সেই সময় রোমান সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস।

রোমানরা একের পর এক রাষ্ট্র জয় করে চলেছে। যুদ্ধের জন্য রাষ্ট্রের বিশাল সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলা দরকার। কিন্তু রাজ্যের লোকজন বিশেষ করে তরুণরা এতে উৎসাহী নয়। সম্রাট ধারণা করলেন, পুরুষরা বিয়ে করতে না পারলে যুদ্ধে যেতে রাজি হবে। তিনি তরুণদের জন্য বিয়ে নিষিদ্ধ করলেন। কিন্তু প্রেমিক তারুণ্য মন এমন নিয়ম মানতে চায় না। তাদের পাশে এগিয়ে এলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্টাইন প্রেমাসক্ত তরুণ-তরুণীদের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। কিন্তু একসময় ধরা পড়ে গেলেন ভ্যালেন্টাইন। তাকে জেলে নেয়া হলো। দেশজুড়ে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই ভ্যালেন্টাইনকে জেলখানায় দেখতে যান। কারাগারে জেলারের একজন অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেত। চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির অন্ধত্ব দূর করলেন। 

একসময় হৃদয়ের বন্ধনে বাঁধা পড়লেন তারা। ধর্মযাজক হয়েও নিয়ম ভেঙে প্রথমে প্রেম এবং পরে বিয়ে করেন ভ্যালেন্টইন। খবর যায় সম্রাটের কানে। তিনি ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। সে তারিখটি ছিল ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের আজকের দিন ‘১৪ ফেব্রুয়ারি’। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে ভ্যালেন্টাইন তার প্রেয়সী এবং বধূকে যে চিঠিটি লেখেন, তার শেষটায় লেখা ছিল- ‘লাভ ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন’। 

ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর দিনটিকে স্বরণ করেই পালিত হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

সোনালীনিউজ ডটকম/ঢাকা/এআই

Wordbridge School
Link copied!