• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাড়িভাঙ্গায় ২ শতাধিক কোটি টাকার স্বপ্ন বুনছেন চাষী


রংপুর ব্যুরো জুন ২৪, ২০১৮, ০৮:১৭ পিএম
হাড়িভাঙ্গায় ২ শতাধিক কোটি টাকার স্বপ্ন বুনছেন চাষী

হাড়িভাঙ্গা আম

রংপুর: ‘আল্লায় দেচে আম ভালো হইচে। এবার আম ব্যাচেয়া মাইনসের ইনের টাকা শোদ করিম। হাড়িভাঙ্গা আম সুস্বাদু হওয়ায় চাহিদা দিন দিন বাড়েছোল। গত সপ্তাহে ত্রিশ হাজার আট ব্যাচাচু। আরো আম পারা বাকি আছে। এবার হাড়িভাঙ্গা আম ভালো হইচে, গাছ দেকিয়া মনটা জুড়ি যায় বাহে’। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পদাগঞ্জ এলাকার হাসান মিয়া।

ওই এলাকায় হাসান মিয়া মতো আরো অনেকেরই আম বাগান জুড়ে গাছে গাছে দোল খাচ্ছে হাজার হাজার হাড়িভাঙ্গা। এই আম যেন তাদের মনে আনন্দ উচ্ছাসের ঢেউ ছড়াচ্ছে। একারণেই রংপুর অঞ্চলের আম চাষীরা হাড়িভাঙাঙ্গাকে ঘিরে ২০০ কোটি টাকার বিকিকিনির স্বপ্ন বুনছেন।  

বাংলাদেশের একমাত্র আশঁহীন এই হাড়িভাঙ্গা আম বেশ সুস্বাদু ও রসালো। স্বাদে গন্ধেও অসাধারণ। অতি সুমিষ্ঠ আশঁহীন হাড়িভাঙ্গা আম মুখে নিলেই মনে হবে অমৃত কোনো স্বাদ। পুষ্ট হাড়িভাঙ্গার চামড়া কুচকে গেলেও সহজে পঁচন ধরে না। এ কারণেই হাড়িভাঙ্গা আম সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এখন সমাদৃত বিশ্বজুড়ে।

দিন দিন এই আমের চাহিদা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সাড়া ফেলেছে। এক সময়ের আমখ্যাত রাজধানী রাজশাহীর পর এখন হাড়িভাঙ্গা আমের জন্য প্রসিদ্ধ রংপুর। যখন দেশের অন্যান্য স্থানের আম শেষের পথে ঠিক সেই মুহূর্তে বাজারে আসতে শুরু করেছে হাড়িভাঙ্গা আম। জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে হাড়িভাঙ্গা আম যাচ্ছে রংপুর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

হাড়িভাঙ্গা আমের বদৌলতে বদলে গেছে পদাগঞ্জের মানুষের অর্থনৈতিক ভাগ্য। নফল উদ্দিন পাইকার নামে এক বৃক্ষবিলাসী মানুষের হাত ধরে এই এলাকাতেই শুরু হয়েছিলো হাড়িভাঙ্গা আমের গোড়াপত্তনের ইতিকথা। পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়।

১৯৯২ সালে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম হাড়িভাঙ্গা আমের চারার সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনে মনোনিবেশ মিঠাপুকুরের আখিরাহাট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সমবায় কর্মকর্তা আবদুস সালাম। প্রথম বছরেই তার আম বাগান থেকে অভাবনীয় সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হন পাশ্ববর্তী পীরগঞ্জ, বদরগঞ্জ ও বিস্তৃণ মিঠাপুকুর উপজেলার আম চাষীরা। শুরু হয় উচাবালুয়া, শ্যামপুর, হেলেঞ্চ, পাইকারেরহাট, জারুল্লাপুর, খোড়াগাছ, গোপালপুর, দূর্গাপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে। এসব এলাকায় এমন একটি বাড়ি খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে বাড়ির আঙ্গিনায় এ হাড়িভাঙ্গার গাছ নেই। মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জে সবচেয়ে বেশি হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদান হয় ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, হাড়িভাঙ্গা আম গাছ  থেকে পারা শুরু হয়েছে চলতি জুনের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে। অনেকেই প্রচন্ড গরম এবং প্রতিকূল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করে নির্ধারিত সময়ের আগেও  বাণিজ্যিকভাবে এই আম বিক্রি শুরু করেছেন।

গত বছর আমের অফ ইয়ার থাকলেও এবার হাড়িভাঙ্গার বাম্পার ফলন হয়েছে। সব কিছু ভালোভাবে হলে শুধু হাড়িভাঙ্গা আম বিক্রি কওে রংপুরের চাষীরা গড়ে অনন্ত ২০০ কোটি টাকার ওপর তুলতে পারবেন বলেও ধারণা দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্যান বিশেষজ্ঞ খন্দকার মেজবাহুল ইসলাম জানান, এবার রংপুর জেলায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে আমের ফলন হয়েছে। এর মধ্যে হাড়িভাঙ্গার ফলন হয়েছে ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে। গত বছর প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছিল ৯ দশমিক ৪ মেট্রিক টন। এবার গতবছরের চেয়ে শুধু হাড়িভাঙ্গার উৎপাদন হতে পারে দেড় হাজার মেট্রিক টন ছাড়িয়ে গেছে।

তিনি বলেন, এ বছর ২শ’ ২৫ কোটি টাকার আম বিক্রির আশা স্থানীয় আম চাষীদের। তবে আবহাওয়া ভালো থাকলে হাড়িভাঙ্গাসহ বিভিন্ন জাতের আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে এবারও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। মৌসুমের শুরুতে দাম কিছুটা কম থাকলেও বর্তমানে প্রতি কেজি হাড়িভাঙ্গা আম সর্বনিম্ন ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে রংপুর অঞ্চলে হাড়িভাঙ্গা আমের ফলন বেশি হলেও ফজলি, এছাহাক, ছাইবুদ্দিন, আশ্বীনি, সাদা ন্যাংড়া, কালা ন্যাংড়া, কলিকাতা ন্যাংড়া, মিশ্রীভোগ, গোপাল ভোগ, আম্রপলি, সাদারুচি, চোচা, আঁটিসহ হরেক প্রজাতির আম উৎপাদন হয়ে আসছে। এসব আমের ভিড়ে এখন সবচেয়ে বেশি চাহিদা হাড়িভাঙ্গার। একটি হাড়িভাঙ্গা আমের ওজন ২’শ থেকে সাড়ে ৪’শ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

সোনালীনিউজ/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!