• ঢাকা
  • শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২
SonaliNews

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত নিউজ পোর্টাল

করোনায় বেসামাল সীমান্ত জেলা


বিশেষ প্রতিনিধি জুন ১২, ২০২১, ০৫:১৫ পিএম
করোনায় বেসামাল সীমান্ত জেলা

ফাইল ছবি

ঢাকা : আম ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বেসামাল সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলার করোনা পরিস্থিতির। ভারতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কঠোর লকডাউনে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সীমান্তে বিভিন্ন জেলায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ। সারা দেশে যেখানে গড় সংক্রমণের হার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ, সেখানে নাটোরে সংক্রমণের হার ৬০ দশমিক ২৭ শতাংশ, নওগাঁয় ৫০ শতাংশ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৯ এবং রাজশাহী জেলায় ৩৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

এদিকে, করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বেড়েছে পরীক্ষার হার। এই সুযোগে করোনার ভুয়া রিপোর্ট নিয়ে আবারো বাণিজ্য শুরু করেছে একটি অসাধু চক্র। ইতোমধ্যে ৪টি ল্যাবের পরীক্ষা স্থগিত করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪৩ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ৪০ ও গত বুধবার ৩৬ জন মারা যায়। এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৩২ জন।

শুক্রবার (১১ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৩৫টি নমুনা পরীক্ষা করে আরও দুই হাজার ৪৫৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন আট লাখ ২২ হাজার ৮৪৯ জন। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত  বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ ও গত বুধবার ১২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা) করোনা সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আরও ১৫ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে সাতজন করোনায় এবং আটজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

১৫ জনের মধ্যে আটজন রাজশাহীর, ছয়জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবং একজন নাটোরের বাসিন্দা। গত ২৪ মে থেকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মারা গেছেন মোট ১৫৭ জন। তাদের মধ্যে ৮৩ জন করোনায় আক্রান্ত ছিলেন।

শুক্রবার (১১ জুন) পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের ১০টি ওয়ার্ডে মোট ২৭১টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিল ২৯৭ জন।

রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়াকে কারণ বলে মনে করছেন রামেক হাসপাতালে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী। এজন্য আগেভাগেই লকডাউন দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওই সময় আমের মৌসুম শুরু হওয়ায় কঠোর লকডাউন নিয়ে দ্বিধান্বিত ছিল প্রশাসন।

জানা যায়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে যেসব রোগী ভর্তি হয়েছিলেন, তাদের নব্বই শতাংশই সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জর অধিবাসী। করোনার ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা নিয়ে তখন থেকেই রাজশাহী ও এর আশপাশের জেলাগুলোতে লকডাউনের সুপারিশ করে আসছিলেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী।

এর দুই সপ্তাহ পর গত বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় প্রশাসন কেবল রাজশাহী শহরে সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করেছে। এ সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের ভয়ংকর ডেল্টা সংস্করণ রাজশাহীসহ বাইরের এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।

শুক্রবার (১১ জুন) রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রি. জেনারেল শামীম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পারিনি। এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। সংক্রমণটা যে ভয়ংকর ভারতীয় ডেল্টা রূপের তাতে সন্দেহের আর কোনো অবকাশ নেই। সামাজিক পর্যায়ে এটা ছড়িয়ে গেছে। কত দূরে গিয়ে এটা থামবে সেটাই এখন দেখার বিষয়।’

২৯ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলাসহ দেশের সীমান্তবর্তী আট জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করে। কিন্তু আম ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় কঠোর লকডাউন দিতে পারছিলেন না স্থানীয় প্রশাসন। রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরের স্থানীয় প্রশাসন তখন আরও সময় নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়।

সেদিন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, লকডাউন মানেই ক্ষতির কারণ। কেউই এটা চায় না। আমরা মানুষের জীবনকে অবশ্যই জীবিকার চেয়ে অগ্রাধিকার দিতে চাই। কিন্তু সেটা আমাদেরকে আগে নিশ্চিত হতে হবে।

রাজশাহীর মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জীবনের সাথে সাথে মানুষের জীবিকাও তো আমাদের রক্ষা করতে হবে। কোটি কোটি টাকার আম ব্যবসা চলছে। সাধারণ মানুষের জীবন এতে জড়িয়ে আছে। সবদিক বিবেচনা করে আমরা আরও কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

একদিকে কোটি কোটি টাকার আম ব্যবসা অন্যদিকে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি এই দুয়ের সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে প্রশাসনকে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ২৪ মে থেকে লকডাউন শুরু হলেও দুই সপ্তাহ পরে সেখানে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়। গত ৩ জুন রাজশাহী ও নওগাঁয় নৈশকালীন লকডাউন ঘোষণা করা হয়, তবে দিনের বেলা সেখানে সব নিষেধাজ্ঞা শিথিল ছিল।

গত বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি এক সভা শেষে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার হুমায়ুন কবির সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রাজশাহীতে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খুলনা বিভাগেও গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে কুষ্টিয়ায় তিনজন, সাতক্ষীরায় দুজন ও যশোরে একজন। এই বিভাগে মৃতের সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়েছে। সেইসঙ্গে শনাক্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩৮ হাজার।

আমাদের খুলনা ব্যুরো প্রধান এ কে হিরু জানান, খুলনা জেলায় করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে জেলাব্যাপী এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

খুলনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেনের সভাপতিত্বে শুক্রবার (১১ জুন) তার সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক এতে প্রধান অতিথি ছিলেন। সভায় খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ইসমাইল হোসেন অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।

সভায় খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান, সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ, খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মেহেদী নেওয়াজ, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মো. ইকবাল হোসেন, খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতি এসএম জাহিদ হোসেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মুন্সি মো. মাহবুব আলম সোহাগ, সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সাতক্ষীরায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার উপসর্গ ও আক্রান্ত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১১১ জন।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. মানস কুমার মণ্ডল জানান, ২১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বর্তমানে ১২৪ জন ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে ৩৫ জন করোনা পজিটিভ এবং বাকিরা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ছাড়িয়েছে। এই জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৪৪ জন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৭ জনের। আর সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৮ জন।

শুক্রবার (১১ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী। করোনা সংক্রমণ রোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত ৭ জুন থেকে আগামী ১৬ জুন পর্যন্ত বিশেষ লকডাউন শিথিল করে ১১টি কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে জেলা প্রশাসন।

এদিকে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে করোনা পরীক্ষা। বিশেষ করে বিদেশগামী যাত্রীরা করোনা পরীক্ষা করাচ্ছেন বেশি। এই সুযোগে একটি প্রতারক চক্র আবারও করোনা পরীক্ষা নিয়ে বাণিজ্য শুরু করেছে।

পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগে রাজধানীর এরকম চারটি বেসরকারি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ল্যাবগুলো হলো- সিএসবিএফ হেলথ সেন্টার, স্টিমজ হেলথ কেয়ার, আল জামী ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিনোভা মেডিক্যাল সার্ভিসেস লিমিটেডের মিরপুর শাখা। পাশাপাশি সব বেসরকারি ল্যাবকে নিজস্ব ভবনের বাইরে অন্য বুথ থেকে নমুনা সংগ্রহ বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিঞা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

 

Wordbridge School
Link copied!